কোচিংয়ের ভুলে বিপাকে জগন্নাথে ভর্তিচ্ছু ৫০০ শিক্ষার্থী
কোচিং সেন্টারের ভুলে ঠিকমতো আবেদন না হওয়ায় রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বসতে পারছেন না প্রায় পাঁচশ শিক্ষার্থী।
টাকা জমা দেওয়া হলেও কারও স্বাক্ষর, কারও ছবি ওয়েবসাইটে আপলোড না করায় এসব শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম সৈকত জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুকরা ২৫ অগাস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনালাইনে আবেদন করেন। এরপর ১৮ অগাস্ট পর্যন্ত বি ও ই ইউনিটের প্রবেশপত্র দেওয়া হয়।
অসম্পূর্ণ হওয়ায় কয়েক হাজার আবেদনের বিপরীতে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি জানিয়ে সৈকত বলেন, “টাকা জমা দিয়েছে, কিন্তু টাকা জমা দেওয়ার পর ওয়েবসাইটে ছবি ও স্বাক্ষর প্রদান করেনি। আর আবেদন অসম্পূর্ণ থাকলে সার্ভারে প্রয়োজনীয় তথ্য না আসলে তো প্রবেশপত্র তৈরি হবে না।”
আবেদনের সময় শেষ হওয়ার আগে যারা সমস্যার কথা জানিয়েছে তাদের বিষয়গুলো ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
তবে ১৮ সেপ্টেম্বরের পরে আসা সাড়ে আটশ’র মতো আবেদনের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আর কিছু করার নেই বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের মিটিং হয়েছে পরশু দিন। যারা ভুল করেছে তাদের সুযোগ দেওয়া হবে না। কারণ এটা তো ভার্সিটির কোনো ভুল না।”
গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, নতুন আবেদনগুলোর মধ্যে তিনটি কোচিং সেন্টারের পরিচয়ে পৃথক তিনটি আবেদনে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর অসম্পূর্ণ আবেদনের কথা জানানো হয়। বিশেষ বিবেচনায় ভুল সংশোধন করে প্রবেশপত্র দিতে অনুরোধ করা হয় এসব আবেদনে।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৬০টি ভুল আবেদনের তথ্য জানানো হয় সিলেট ইউসিসির পরিচয় দিয়ে। এ বিষয়ে সিলেট ইউসিসির চৌহাট্টা শাখায় যোগাযোগ করা হলে শাখা ব্যবস্থাপক ছায়েদুর রব বলেন, তাদের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। অন্য একটি কোচিং সেন্টার ইউসিসির নাম ভাড়িয়েছে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চৌহাট্টার ওই শিক্ষার্থীদের টাকা জমার তথ্য সংগ্রহ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ওই শিক্ষার্থীরা জানান, সিলেটের চৌহাট্টায় ‘সেন্টার ফর ইন্টারমিডিয়েট ফিজিক্স এন্ড কেমেস্ট্রি’ (সিআইপিসি) নামের একটি কোচিং সেন্টারে জগন্নাথে ভর্তি আবেদনের জন্য সাড়ে চারশ করে টাকা দিয়েছিলেন তারা। যদিও সার্ভিস চার্জসহ প্রকৃত আবেদন ফি ৪০৪ টাকা।
সিআইপিসি’র পরিচালক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিক্ষোভের মুখে আনোয়ারকে সিলেট কোতয়ালি থানা পুলিশ আটক করেছে বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।
শুক্রবার অনুষ্ঠেয় জগন্নাথের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদনকারী মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার পথে ছিলেন।
তিনি বলেন, “আনোয়ার স্যার আমাদের কয়েকজনকে বলেছেন ঢাকায় আসতে। তিনি নাকি একটি কোড নম্বর পাঠাবেন, এরপর নাকি প্রবেশপত্র তোলা যাবে।”
একই ইউনিটে ভর্তির জন্য আবেদন করা আরেক শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান সায়েম বলেন, “ওই কোচিং সেন্টারে আজ গিয়েছিলাম প্রবেশপত্রের জন্য। কিন্তু গিয়ে দেখি কোচিং সেন্টার লাপাত্তা হয়ে গেছে। তালা ঝুলানো।
“এখন তো দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের ভুলে আমাদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগই হল না।”
শনিবার ‘ই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল প্রীতম দাশের। হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “আনোয়ার হোসেন আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে, তার কারণে আমরা পরীক্ষা দিতে পারছি না। কাল বিক্ষোভ হয়েছে, তাকে কোতয়ালী থানা পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আজ শহীদ মিনারে মানববন্ধন হওয়ার কথা।”
মাহমুদুর রহমান নাইম নামের ‘ডি’ ইউনিটের আরেক আবেদনকারী বলেন, “আমি যে পরীক্ষা দিতে পারব না, তা আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। তবে এটা শুনেছি যে, কোচিং সেন্টারে ঝামেলা হয়েছে। আনোয়ার হোসেনকে জেলে নিয়ে গেছে।”
সিলেটের এই কোচিং সেন্টার ছাড়াও নেত্রকোণা ইউসিসির পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ৮৮ জন শিক্ষার্থীর ১৩৪টি আবেদনে প্রবেশপত্র না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিভাগ থেকে জানা গেছে।
এছাড়া ইউসিসির দিনাজপুর শাখার পরিচয়েও এ ধরনের বেশ কয়েকটি আবেদন এসেছে বলে আইটি বিভাগ থেকে জানা গেছে। তবে সেখানকার আবেদনকারীদের প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদের বাইরে প্রায় সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র না পাওয়ার কথা জানিয়ে সরাসরি আবেদন করেছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
এইচএসসির ফল প্রকাশ মঙ্গলবার, জানা যাবে যেভাবে
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করাবিস্তারিত পড়ুন
বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নতবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন