কোলা আসলে কী জিনিস ? কখনো ভেবে দেখেছেন কি ?
আমরা প্রায় অনেকেই কোলা জাতীয় পানীয় গ্রহনে বেশ স্বাচ্ছন্দবোধ করে থাকি । অনুষ্ঠান আয়োজনে, ভ্রমনে এই জাতীয় পানি অতি মাত্রায় খেয়ে থাকি। কোলা জাতীয় পানীয় পান করার পরে আমাদের শরীরে যা ঘটে আজকে তা একটু জেনে নিন:
১. ১০ মিনিট পর:
একগ্লাস কোলাতে প্রায় ১০ চামচ চিনি থাকে, যেটা পান করা মাত্রই অঙ্গসমূহের কাজ থেমে যেতে চায়। আমাদের বমির উদ্রেক হয় না কোলায় ফসফরিক এসিড উপস্থিত থাকার কারনে। ফসফরিক এসিড চিনির কার্যকারিতায় বাধা দান করে।
২. ২০ মিনিট পর:
রক্তে ইনসুলিনের মাত্রায় হঠাৎ উত্তরণ ঘটে। যকৃৎ সবটুকু চিনিকে চর্বিতে পরিণত করে।
৩. ৪০ মিনিট পর:
ক্যাফেইনের আত্মীকরণ ঘটে। চোখের মনি বড় হয়ে যায়। প্রেসার বেড়ে যায় কেননা যকৃৎ রক্তপ্রবাহে অধিকতর চিনি সরবরাহ করে। এডেনোসিন রিসেপ্টরগুলো ব্লক হয়ে যায়, ফলস্রুতিতে অনিদ্রা দেখা দেয়।
৪. ৪৫ মিনিট পর:
ডোপামিন হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যা মস্তিষ্কে আনন্দানুভুতি তৈরি করে। হেরোইনও একই ভাবে কাজ করে।
৫. ১ ঘন্টা পর:
ফসফরিক এসিড অন্ত্রে গিয়ে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং জিংকের সাথে বন্ড তৈরি করে যেগুলো হাড়ের প্রয়োজনীয় উপদান। এই সময় প্রস্রাবে ক্যালশিয়ামের পরিমানের আধিক্য থাকে।
৬. ১ ঘন্টা অধিক সময় পর:
প্রস্রাবের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কোলার সাথে গৃহীত সব পানি বেরিয়ে যায় যার সাথে হাড় গঠনে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজ উপাদান থাকে।
এখন দেখা যাক কোলা জাতীয় পানীয় কিভাবে গঠিত হয়। উদাহরণ হিসেবে কোকাকোলা নেওয়া হল। এই পানীয়ে যে উপাদানগুলো থাকে সেগুলো হচ্ছে:
কার্বনেটেড ওয়াটার: কোলার ফুঁসে ওঠার জন্য দায়ী। এটা পাকস্থলীতে অম্লত্ব বৃদ্ধি করে এবং এসিডিটির উপসর্গ দেখা যায়।
E150D: এক ধরনের রং, যা চিনির প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়াকরণে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ কোকাকোলায় অ্যামোনিয়াম সালফেট ব্যাবহৃত হয়।
E952 – সোডিয়াম সাইক্লামেট: চিনির প্রতিস্থাপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খুবই ক্ষতিকর পদার্থ, 1969 সালে Federal Drug Agency কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে অন্য অনেক দেশেই নিষিদ্ধ করা হয়।
E951 – এইসসালফেম পটাশিয়াম: চিনির চেয়ে ২০০ গুণ মিষ্টি, মিথাইল ইথার যুক্ত যা হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে। তাছাড়া এর মধ্যে রয়েছে অ্যাসপারাজিনিক এসিড যা স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং নেশা সৃষ্টি করে।
E951 – অ্যাসপারটেম: ডায়বেটিসের রোগীদের জন্য চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। বর্ধিত তাপমাত্রায় এটা ভেঙ্গে মিথানল এবং ফিনাইল এলানিন তৈরি হয়। মিথানল খুবই ভয়ঙ্কর বস্তু। ৫-১০ মিলিলিটার সেবনে স্থায়ী অন্ধত্ব তৈরি হতে পারে। আর উষ্ণ অবস্থায় অ্যাসপাটেম ফরমালডিহাইডে পরিণত হতে পারে যার আরেক নাম ফরমালিন (দ্রবীভূত অবস্থায়)! তাছাড়া এই বস্তুটি ব্রেইন টিউমার, সিরোসিস, এপিলেপ্সি, স্থায়ী ক্ষয়রোগ, আলঝেইমার, মানসিক অবসাদ এবং যক্ষা ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।
E338 – অর্থোফসফরিক এসিড: ত্বক ও চোখে জ্বালাপোড়া তৈরি করে। এটা শরীরে ক্যালসিয়াম এবং আয়রণ আত্মীকরণে বাধা দেয়।
E330 – সাইট্রিক এসিড: একটি প্রাকৃতিক উপাদান। লেবু জাতীয় ফলে পাওয়া যায়।
E221 – সোডিয়াম বেনজোয়েট: এটা একধরনের প্রিজারভেটিভ। ব্রিটেনের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে এটা শরীরে প্রবেশ করলে DNA এর ক্ষতিসাধন করে।
এতসব তথ্য সত্ত্বেও আপনার যদি মনে হয় কোলা ছাড়া আপনার জীবন অচল তাহলে নিচের বিকল্প ব্যবহারগুলো ভাবতে পারেন।
# যুক্তরাস্ট্রের অনেক ডিস্ট্রিবিউট ট্রাকের ইঞ্জিন পরিষ্কার করার জন্য কোকাকোলা ব্যাবহার করে।
# যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ অফিসারেরা গাড়িতে কোকাকোলা রাখেন যেন দুর্ঘটনার পর রক্ত পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার করতে পারেন।
# মরিচারোধে এবং গাড়ির চকচকে ভাব ধরে রাখার জন্য কোকাকোলা বেশ কাজের জিনিস।
# মরিচাযুক্ত স্ক্রু খোলার জন্য একটি কাপড়ে কোক চুবিয়ে স্ক্রুর চারপাশে ভালো করে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, তারপর খুলে ফেলুন।
# ইন্ডিয়াতে কয়েকবছর আগে কোলা জাতীয় পণ্যে কীটনাশক ব্যবহার নিয়ে বেশ হুলস্থুল পড়ে যায়। সেখানে কিছু কিছু চাষী দামে সস্তা হওয়ায় কীটনাশকের পরিবর্তে জমিতে কোকাকোলা ব্যাবহার করেন।
নিঃসন্দেহে কোকাকোলা একটি অতি উপকারী বস্তু। তবে এটার অপব্যবহার রোধ করুন। পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন!
অনুবাদ করেছেন: ইমতিয়াজ আহমেদ, বিজ্ঞান পত্র
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
রেড মিট খাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ জেনে নিন
কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকদিন টানা খাওয়া হয় গরু বা খাসিরবিস্তারিত পড়ুন
জাপান ও ইউরোপে বিরল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
জাপানে, একটি বিরল “মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া” এর কারণে এক রোগবিস্তারিত পড়ুন