ইউপি নির্বাচন
ক্ষমতাসীন দলে কলহের কারণেই বাড়ছে সহিংসতা
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে পারেনি। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারেনি। বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সহিংসতার শিকার বেশি হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে দলটির বিভেদ-বিভাজনও বেড়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক বেশির ভাগ সহিংস ঘটনা ঘটেছে সরকারদলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। দলের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেউ-ই বিষয়টি তেমন আমলে নেননি। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকেরই অভিযোগ, যোগ্য হলেও জাতীয় বা স্থানীয় নেতারা কূটকৌশলে তাঁদের বঞ্চিত করেন।
এ পরিস্থিতিতে একদিকে আওয়ামী লীগ মাঠপর্যায়ে দলের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারেনি, অন্যদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও অস্বস্তি আর চাপের মুখে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। প্রথম অভিজ্ঞতার সঙ্গে অনভিজ্ঞতার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি দল গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে। ভবিষ্যতে সরকার ও দলের মধ্যে জাতীয় বা স্থানীয় নেতাদের যে মূল্যায়ন হবে, সেখানে দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়টি আসবে।
এক প্রশ্নের জবাবে দলের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, মনোনয়ন-বাণিজ্য ও দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগগুলো দল খতিয়ে দেখছে। যেসব জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী, সাংসদ, কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের রেহাই দেওয়া হবে না।
বিশ্লেষকেরা বলেছেন, হঠাৎ করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত, মনোনয়ন-বাণিজ্য, তৃণমূলে নিয়ন্ত্রণহীনতা ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের কারণে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বিদ্রোহীদের ছড়াছড়ি হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, প্রথম পাঁচ ধাপে ৩ হাজার ২৯০টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ করা হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ৬৯৭টি ইউনিয়নে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবেশিত খবর অনুযায়ী, এই ৬৯৭ জনের মধ্যে প্রায় ৫০০ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ২ হাজার ১৯৫ ইউপিতে (৬৭ শতাংশ)।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি জয় পেয়েছে ৩১৫টিতে (১০ শতাংশের কম)। এর বাইরে জাতীয় পার্টি (জাপা) ৪১টি, জাসদ ৭, জাতীয় পার্টি (জেপি) ৪, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৪, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জাকের পার্টি ও সিপিবি ১টি করে ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জিতেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাঁচ ধাপ পার হয়ে শেষ ভাগে চলে আসা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের পরিস্থিতি সামাল দিতে সামগ্রিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগের তিনজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও চারজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বড় জয় হলেও নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে খুনোখুনি-দ্বন্দ্ব-সংঘাত তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে বিশৃঙ্খল করে তুলছে এবং সহসা এর শেষ হবে না।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, হঠাৎ করে দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য অনেকে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। ফলে অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তা ছাড়া প্রথমবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় একধরনের প্রস্তুতিহীনতা ছিল। ভবিষ্যতে প্রার্থী বাছাইয়ে আরও মনোযোগী হবে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন-বাণিজ্য বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের খবরের সত্যতা নেই।
নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তৃণমূলে গণতন্ত্র বিকাশের যে লক্ষ্য নিয়ে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত ছিল, তা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৃণমূলে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার সঙ্গে প্রার্থী দিতে না পারায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দল মনোনীত ও বিদ্রোহী—দুজনই যেহেতু সরকারি দলের এবং জেলা ও থানার নেতারা ভাগাভাগি করে দুজনের সঙ্গেই ছিলেন, সে কারণে কেউ কাউকে ছাড় দেননি। এ অবস্থায় পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন কেন যেন নির্বিকার ছিল। এটা ক্ষমার অযোগ্য। কমিশনের দলের দিকে তাকানোর কথা ছিল না। কমিশনের দায়িত্ব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা। কিন্তু সেই লক্ষ্যে কমিশনকে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতীর প্রাথমিক প্রতিবেদনে গত শনিবার বলা হয়েছে, দলীয় নির্বাচনে বিদ্রোহীদের কারণে গোলযোগ বেশি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তুলনামূলক ভালো নির্বাচনের প্রত্যাশা করলেও পরিবেশ প্রত্যাশিত মাত্রায় উন্নতি হয়নি। চতুর্থ ধাপের তুলনায় পঞ্চম ধাপের মান নিম্নগামী বলেও মত দিয়েছে ব্রতী।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এখন অবস্থা এমন যে এই নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি শেষ হয়, ততই তা জাতির জন্য মঙ্গলজনক। এ ধরনের নৃশংসতা ও বর্বরতা জাতি আর দেখতে চায় না। তিনি আরও বলেন, রাজনীতি যে ব্যবসা, তা নগ্নভাবে প্রমাণিত হয়েছে এই নির্বাচনে মনোনয়ন-বাণিজ্য ও সন্ত্রাস-সহিংসতার ঘটনায়।
উল্লেখ্য, এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট ৯৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ গত শনিবার বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে জাল ভোট কমেছে, তবে সহিংসতা বেড়েছে।
জানতে চাইলে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আবদুল আলীম বলেন, দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়ার কারণে যে নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল, সেটা নির্বাচন কমিশন নেয়নি। এ কারণে সহিংসতা বেড়েছে। আর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন তার পূর্ণ শক্তি কাজে লাগাতে পারেনি। সরকারও ইসিকে সহায়তা করেনি।-প্রথম আলো।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
থার্টি ফাস্ট নাইটে আতশবাজি, পটকা ফোটালে জেল-জরিমানা
থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুসবিস্তারিত পড়ুন
টানা ৩ দিন কমতে পারে রাতের তাপমাত্রা
আগামী ৩ দিন সারা দেশের রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে বলেবিস্তারিত পড়ুন
রিজভী: সংবিধান বাতিল করলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হবে
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “একটি জাতীয়বিস্তারিত পড়ুন