কয়েদি সংকটে বন্ধ হচ্ছে কারাগার!
মধুর এক সমস্যায় পড়েছে নেদারল্যান্ডস সরকার। যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ যেখানে কারাগারে কয়েদিদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে নেদারল্যান্ডসের সমস্যাটা হয়েছে একদমই এর ঠিক বিপরীত। কারাগারে বন্দী করে রাখার মতো কয়েদির বড়ই অভাব তাদের। এজন্য গত কয়েক বছরে ইতোমধ্যেই তাদের ১৯টি কারাগার বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী বছর বন্ধ হবে আরও কয়েকটি কারাগার। এক দশক আগেও বন্দীর সংখ্যার দিকে ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি ছিল নেদারল্যান্ডস। কিন্তু এখন সেটা সর্বনিম্ন বলে দাবি করা হয়।
প্রতি এক লাখে ৫৭ জন সেখানে বন্দী রয়েছে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে সেখানে প্রতি লাখে ১৪৮ জন বন্দী। ২০০৫ সালে নেদারল্যান্ডসে ১৪ হাজার ৪৬৮ জন বন্দী ছিল। এখন তা আট হাজার জনে নেমে এসেছে, যা আগের চেয়ে ৪৩ শতাংশ কম। সম্প্রতি বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে নেদারল্যান্ডসের একটি কারাগারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
কারাগারটি দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নরগারহেভেনে। সে কারাগারে রয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেখানে কারাকক্ষের দরজার ওপাশ থেকে পেঁয়াজ ভাজার সুবাস আসছিল। রান্নাঘরে কয়েদিরা তাদের রাতের খাবার তৈরি করছেন। একজনকে ছুরি দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে সবজি কাটতে দেখা গেল। তিনি বলেন, “আমি ছয় বছর ধরে এই কাজ করছি। দিন দিন এ কাজে দক্ষতা বাড়ছে।” কিন্তু ছুরিগুলো শিকল দিয়ে আটকে রাখা ছিল। যার জন্য সেটি দিয়ে কাজ করার সময় শব্দ হচ্ছিল। কয়েদিদের কেউ কেউ সহিংসতার দায়ে কারাগারে বন্দী। তাই ছুরি বহন করার বিষয়টিকে সতর্কভাবে দেখা হয়। রান্নাবান্না করার মতো কাজ মুক্তির পর বন্দীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সহায়তা করে।
এ ব্যাপারে নরগারহেভেনের ডেপুটি গভর্নর জ্যান রয়েলফ ভ্যান দের স্পয়েল বলেন, “আটকানো থাকায় এই ছুরিগুলো কয়েদিরা নিয়ে যেতে পারে না। তবে পাস থাকলে তারা ছোট ছুরিগুলো ধার নিতে পারে। এতে বোঝা যায়, কার কাছে ছুরি রয়েছে।”
ডেপুটি গভর্নর রয়েলফ আরও বলেন, “আমরা প্রত্যেকের দিকেই আলাদা নজর দিই। কেউ যখন মাদক সমস্যা নিয়ে আসে, তখন তার আসক্তির চিকিৎসা করি। যখন কেউ ক্ষুব্ধ থাকে, আমরা তা দমানোর চেষ্টা করি। কারও অর্থসংক্রান্ত অপরাধ থাকলে তাকে ঋণ-বিষয়ক পরামর্শ দিই। তাদের অপরাধের কারণগুলো আমরা দূর করার চেষ্টা করি। সংশোধন হতে কয়েদিদের নিজেদের ইচ্ছাও থাকতে হবে। আর আমাদের সংশোধন প্রক্রিয়াগুলো খুব কাজে আসে। গত ১০ বছরে আমাদের কাজ দিনে দিনে আরো উন্নত হয়েছে।”
একই এলাকার এসারহেমে কারাগারে গেলে দেখা যায়, সেখানে প্রচুর খোলামেলা জায়গা। শরীরচর্চার জায়গাটি অনেক বড়। সেখানে আছে ওকগাছ, পিকনিক টেবিল ও ভলিবল খেলার নেট। ডেপুটি গভর্নর রয়েলফ বলেন, “খোলা বাতাস কয়েদি ও কারাগারের কর্মীদের দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনে। বন্দীরা একা পাঠাগার, ক্লিনিক বা ক্যানটিনে যেতে পারেন। এই স্বাধীনতা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সাহায্য করে।”
দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর লিডেনের অপরাধ আইন-বিষয়ক অধ্যাপক পলিন স্কুয়াটের মতে, শুধু পুনর্বাসন কর্মসূচির কারণেই নেদারল্যান্ডসে কারাবন্দীর সংখ্যা কমে আসেনি। ২০০৫ সালের দিকে কোকেনসহ মাদকদ্রব্য বহনকারীদের ব্যাপকভাবে ধরার পর তা কার্যকরভাবে কমে আসে। পুলিশ এখন মাদকদ্রব্যের দিক থেকে নজর সরিয়ে মানব পাচার ও সন্ত্রাসবাদ রোধের দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে। এর বাইরে নেদারল্যান্ডসে বিচারকেরা অপরাধীদের বিকল্প শাস্তির ব্যবস্থা করে থাকেন। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কমিউনিটির বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়, জরিমানা করা হয় এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন