শনিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

গাঁজা যখন ওষুধ

আধুনিককালে গাঁজা বিনোদন বা চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩ হাজার বছর আগে প্রাথমিককালে ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক আচার-অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে এর ব্যবহার হত। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে গাঁজা আইনি সীমাবদ্ধতার বিষয় হয়ে উঠে। ফলে এর ব্যবহার এবং সাইকোঅ্যাক্টিভ ক্যানাবিনয়েডস ধারণকারী গাঁজা প্রস্তুত ও বিক্রয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অবৈধ হয়ে যায়। জাতিসংঘ একে বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত অবৈধ ড্রাগ হিসেবে বিবেচনা করে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে মারিজুয়ানা বা গাঁজা মূলত: চিকিৎসক প্রস্তাবিত ভেষজ থেরাপি হিসাবে ব্যবহার বোঝায়, যা ইতোমধ্যে কানাডা, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও স্পেনে স্থান করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৩২টি অঙ্গরাজ্যেও এটি একইভাবে স্থান করে নিয়েছে।

ইতিহাস :

গাঁজা এক ধরনের উদ্দীপক মাদক। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সাল থেকে মাদক হিসাবে গাঁজার ব্যবহার হয়ে আসছে । সনাতন ধর্মগ্রন্থ অথর্ব বেদে এবং পুরাণেও গাঁজার কথা উল্লেখ আছে। পুরাণে উল্লেখ আছে যে, দেবতারা গাঁজা গাছের জন্ম দিয়েছেন এবং সমুদ্র মন্থনকালে অমৃত থেকে গাঁজা গাছের উৎপত্তি হয়েছে। ইউরোপে গাঁজা ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ সালে গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাসের লেখায়।

নামের উৎপত্তি:

গাঁজা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Canabis sativa Linn. গোত্র Urticaceae. এই গোত্রের অন্য কোন গাছের কোন মাদক গুণ নেই । ল্যাটিন ‘ক্যানাবিস’ শব্দটি এসেছে আদি গ্রিক শব্দ ‘কন্নাবিস’ হতে।

গাঁজা গাছের স্ত্রী-পুরুষ আছে এবং দুই গাছেই ফুল বা মঞ্জরি হয়। কিন্তু শুধু স্ত্রী গাছ থেকেই গাঁজা, ভাং বা চরস পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, পুরুষ গাছের কোন মাদক ক্ষমতা নেই।

বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে এই মাদকদ্রব্যটি পরিচিত। গাঁজা সেবনে ইন্দ্রিয় উত্তেজিত হয় বলে এর আরেক নাম ‘হরষিনী’। গাঁজার আরও ডাক নাম হচ্ছে  চার্জ, ড্যাগো (দক্ষিণআফ্রিকা); গ্রাস, হাস, হেম্প, কিয়েফ (উত্তর আফ্রিকা); পট, টি, উইড (উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা); গাজে, গাঞ্জো (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

গাঁজার বিভিন্ন প্রকারকে একত্রে মারিজুয়ানা বলা হয়। ধারণা করা হয় যে, মারিয়া ও জুয়ানার নামানুসারে প্রথম এই নামটি দেয় মেক্সিকানরা।

স্ত্রী গাছের শুকনো পাতাকে বলা হয় ভাং। বাংলাদেশের পুরানো ঢাকায় ভাং- এর শরবত খুব বিখ্যাত। হিন্দুদের কালি পূজায় ভাং-এর শরবত তৈরি করা হয়। এছাড়া গাঁজাকে সিদ্ধি নামেও ডাকা হয়।

ওষুধ হিসাবে গাঁজার ব্যবহার :

চিকিৎসাশাস্ত্রে গাঁজা পরিচিত উত্তেজক, বেদনানাশক ও নিদ্রাকারক হিসেবে।

১) গাঁজা পাতার গুড়া ডায়রিয়া বা উদরাময় নিরাময় করে এবং এর রস ১৫-২০ ফোঁটা দিনে তিন বার খেলে রক্ত আমাশয় নিরাময় হয়।
২) ভাং শিশুদের ক্ষেত্রে ধনুষ্টংকার রোগেও বিশেষ ফল দেয়।
৩) প্রাচীনকালে গণোরিয়াতে গাঁজার ব্যবহার হত। দুধের সঙ্গে বেটে ক্ষত স্থানে লাগানো হত।
৪) বর্তমানে ইউরোপে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ব্যাথা কমানোর জন্য গাঁজার ধোঁয়া পান করতে দেওয়া হয়।
৫) হাঁপানিতে গাঁজা দারুন কার্যকর।
৬) হৃদযন্ত্রের সমস্যায়ও এর ব্যবহার আছে।

ভেষজ গুণ:

গাঁজা শরীরে বিষ-ব্যথা সারায়। এই বক্তব্যের বর্ণনা রয়েছে ভারতবর্ষের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে। তবে এ কথাও সুবিদিত যে, গাঁজা, ভাং ও মারিজুয়ানা গ্রহণ মানুষের স্মরণশক্তি হ্রাস করে এবং দীর্ঘ মেয়াদে মনোবৈকল্য ঘটায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা গাঁজা, ভাং ও মারিজুয়ানার ওপর গবেষণা করে জেনেছেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ব্যথানাশক ওষুধ এগুলো থেকে প্রস্তুত করা সম্ভব, যা মানুষের কোনো ক্ষতি করবে না। এই গবেষণা করেছে ফ্রান্সের বায়োমেডিক্যাল ইনস্টিটিউট। এর নেতৃত্ব দিয়েছে আইএনএসইআরএম। ফ্রান্সের গবেষকরা জানান, ইঁদুরের মস্তিষ্কের যে অংশের কোষের নিউরনে গাঁজা বা মারিজুয়ানার মাদক ক্রিয়া করে তা প্রথমে তারা ওষুধ প্রয়োগ করে নিষ্ক্রিয় করেন। এরপর ওই ইঁদুরের শরীরে এই মাদক প্রবেশ করিয়ে দেখা গেছে, তাতে ইঁদুরটি বেহুঁশ হয় না বরং তার প্রাণচাঞ্চল্য ঠিকই থাকে। এ অভিজ্ঞতা থেকে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ব্যথানাশক হিসেবে গাঁজার ভালো গুণ আছে। মানুষের বিভিন্ন রোগের ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারের জন্য চেতনানাশক তৈরিতে এর বহুল ব্যবহার করা যাবে। শিগগিরই গাঁজা ও মারিজুয়ানার নির্যাস থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এ ওষুধ প্রস্তুত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় দেখেছেন, ভাং ও গাঁজা সেবনে ফুসফুসের ক্ষতি তামাক পাতায় প্রস্তুত সিগারেট পানের চেয়ে কম।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেভিন হিলের মতে, গাঁজা অন্যান্য নেশাদ্রব্যের চেয়ে ভাল। তিনি বলেন, মারিজুয়ানা সেবন ভাল নয়- এটা ঠিক। কিন্তু কোন কিশোর বা তরুণ মারিজুয়ানা সেবন করলে সেটা অপরাধ বললে ভুল হবে। মারিজুয়ানা এক অর্থে গাঁজাই।

অধ্যাপক কেভিন হিল অনেক পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, যারা মারিজুয়ানা সেবন করেন তাঁরা পরবর্তীকালে মারিজুয়ানাই খোঁজেন। এদেরকে সাধারণত অ্যালকোহল কিংবা অন্য মাদকে আসক্ত হতে দেখা যায় না। হিল তথ্যও দিয়েছেন সঙ্গে। তাঁর দাবি, ৮০ শতাংশ গাঁজাখোর শুধু গাঁজাসেবনেই সন্তুষ্ট থাকেন।

তিনি বলেন, অন্যান্য নেশার থেকে ঢেড় ভাল গাঁজা। তাই আপনার কোনও পরিচিতকে গাঁজা খেতে দেখলেই ভয় পেয়ে যাবেন না। আর যাই হোক তিনি গাঁজাতেই সন্তুষ্ট থাকবেন, অন্য মাদকদ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়বেন না।

গাঁজা সেবনে নেশার অনুভূতি :

গাঁজার নেশার অনুভূতি কেমন হবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে, সেবনকারী কোন পদ্ধতিতে এবং কি পরিমাণ সেবন করবে। সাধারণত গাঁজা একা একা সেবন করা হয় না। কয়েকজন মিলে একত্রে দলবেঁধে এটা সেবন করা হয়।

সাধারণত: গাঁজা সেবনের পর মনে এক ধরনের আনন্দ দেখা দেয়। গাঁজা সেবনের আগে যদি কারোও মনে আনন্দ বা বিষন্নতা থাকে তাহলে গ্রহণের পরে তা অনেকটাই প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে । গাঁজা সেবনের পর অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায় অর্থাৎ খুলে যায় এক কল্পনার রাজ্য। কল্পিত বস্তু, কল্পনার রং আরও প্রখর হয়ে দেখা দেয়। গাঁজা সেবনের ফলে মতিবিভ্রমও দেখা দেয়। গাঁজা টানার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থান, কাল, পাত্রের খেয়াল থাকে না। কথা বলার প্রবণতা বেড়ে যায়। চোখ লাল হয়ে যায়। এছাড়া শরীরে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। ঘন ঘন শুকনা কাঁশি হতে থাকে। এই অবস্থায় দুই থেকে চার ঘণ্টা চলার পর আস্তে আস্তে শিথিলতা আসে, ঘুম আসে।

গাঁজা সেবনে ক্ষতি :
১) রক্তকোষে পরিবর্তন ও প্রতিরোধী ক্ষমতা হ্রাস পায়।
২) জিনের গঠন পরিবর্তন হয়ে যায়।
৩) ক্যান্সারের সম্ভাবনা দেখা দেয়।
৪ ) যৌন অক্ষমতা তৈরি হয়।
৫) এনজাইনা পেক্টোরিস (যাদের এনজাইনার ব্যাথা আছে তাদের জন্য গাঁজা সেবন মারাত্মক হতে পারে)।
৬ ) ফুসফুস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
৭ ) স্নায়ুতন্ত্রে পরিবর্তন আসে।
৮ ) ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন বা অর্গানিক ব্রেন-সিন্ড্রোম দেখা দেয়।

বিখ্যাত কয়েকজন গাঁজাখোর :

গ্রিক দার্শনিক ও পণ্ডিত পিথাগোরাস, বিখ্যাত ফরাসী সাহিত্যিক ভিক্টর হুগো, ফরাসী কবি স্তিফেন মালারমেঁ, ফরাসী কবি চার্লস বোদলঁ, ৩৫ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি (১৯১৭-১৯৬৩) মারিজুয়ানা ভালবাসতেন।

এছাড়া শিক্ষাবিদ প্যারীচরণ সরকার (১৮২৩-১৮৭৫) এতই গাঁজার ভক্ত ছিলেন যে, দৈনিক গাঁজা ছাড়া তাঁর চলতই না। বিশিষ্ট নাট্যকার ও নাট্য পরিচালক গিরিশ চন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪-১৯১২) গাঁজায় আসক্ত ছিলেন। তিনি গাঁজার মহিমায় মুগ্ধ হয়ে রচনা করেছেন, ‘সুখদা ধ্যানদা গাঁজা গাঁজৈব পরমা গতি…।’

ছোটবেলায় গাঁজা টানতাম:  

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ছোটবেলায় গাঁজা সেবন করতেন বলে স্বীকার করেছেন। ওবামার ওপর নিউ ইয়র্কার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক দীর্ঘ নিবন্ধে এই স্বীকারোক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে। এতে ওবামা বলেছেন, ‘ছোটবেলায় আমি গাঁজা সেবন করতাম। আমার মতে, এটা একটা বদভ্যাস। সিগারেটের থেকে এটা খুব একটা ভিন্ন নয়, তরুণ ও পরিণত বয়সের একটা বড় সময়জুড়ে যা আমি পান করেছি।’

অ্যালকোহল নেওয়ার চেয়ে গাঁজা টানা খুব একটা ভয়ঙ্কর নয় বলে মত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একই সঙ্গে তিনি তাঁর মেয়েদের বলেছেন, গাঁজা টানা একটি খারাপ অভ্যাস। এটা স্বাস্থ্যকর নয় এবং এতে সময় অপচয় হয়।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা

পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন

এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?

এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন

৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন

১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন

  • লজ্জায় লাল হয়ে যায় পাখিও
  • দুই হাতের হৃদয়রেখা মিলে গেলে কি হয় জানেন?
  • ৩২১ থেকে ওজন কমিয়ে ৮৫!
  • রং নম্বরে প্রেম, বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ঝলসে যাওয়া মুখ
  • পানিতে ভেসে উঠলো অলৌকিক হাত!
  • ১৫ বছরে একবার ফোটে ‘মৃত্যুর ফুল’
  • চা বিক্রেতা এখন ৩৯৯ কোটি টাকার মালিক
  • একটি মাছের বিষে মারা যেতে পারে ৩০ জন
  • মোবাইল কিনতে ছয় সপ্তাহের শিশুকে বিক্রি
  • পরকীয়ায় জড়াচ্ছে নারীরা প্রধান যে তিনটি কারণ নেপথ্যে
  • ২৪০০ কেজি খিচুড়ি রান্না হয় যেখানে দৈনিক !
  • পরীক্ষায় ফেল করলেই বিবাহ বিচ্ছেদ