গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে মুখোমুখি অবস্থানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে সহ-শিক্ষা চালুর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ছাত্রীরা। কলেজটিতে সহ-শিক্ষা চালু হলে শিক্ষার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও অনেক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন তারা।
অপরদিকে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কলেজে সহ-শিক্ষা চালুর দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন অধ্যক্ষসহ অধিকাংশ শিক্ষক। এ নিয়ে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন।
কলেজে সহ-শিক্ষা (কো-এডুকেশন) চালুর দাবিতে বুধবার আন্দোলনে নামেন ছাত্রীরা।শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপিতে কলেজের অধ্যক্ষ শামসুন্নাহার স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ে। কলেজের প্রধান ফটকসহ অন্যান্য ফটকে তালা দেন বিক্ষুদ্ধ ছাত্রীরা।এরপর স্বাক্ষর করতে রাজি হন তিনি। শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষরসহ স্মারকলিপিটি সংযুক্ত করে কলেজের অধ্যক্ষ,শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাসচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিনের কাছে পাঠানো হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, অত্র কলেজে ১৯৬১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মহিলাদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে সহ-শিক্ষা চালুর জন্য আবেদন করা হয়।
স্মারকলিপি ও শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর করা কপি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অফিসে আসেন আন্দোলনকারীরা। তাদের একটি প্রতিনিধি দল ভিসি’র হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। এসময় ভিসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ। অনেক বছর ধরে এই কলেজটিকে আলাদা ইউনিট হিসেবে গণ্য না কর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউট হিসেবে স্বীকৃতির দাবি ওঠে। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও দাবির স্বীকৃতি পায়নি কলেজটি। এবার আবারও আন্দোলনে নামলেও বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছেন কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একাংশ। সহ-শিক্ষা চালুর দাবি উঠলেও শিক্ষকরা তাদের দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন।
কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর শামসুন নাহার বলেন, ‘মেয়েরা চাচ্ছে কলেজে সহ-শিক্ষা কার্যক্রম চালু হোক। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না এই কলেজের একটা ঐতিহ্য আছে। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বগৌরবে প্রতিষ্ঠানটি চলছে। নারী শিক্ষার জন্য দেশের অন্যতম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে গণ্য করা হয়। নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে ভাল ধারণা না থাকায় মেয়েরা এই দাবি তুলেছে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা চাচ্ছে কো-এডুকেশন চালু হোক। কিন্তু শিক্ষকরা কী ভাবছেন সেটা আমাকে জানতে হবে। তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া আমরা সরকারের চাকরি করি, সরকার এ বিষয়টা নিয়ে কী ভাবছে সেটাও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে।’
নিজে একমত না হলেও কেন স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন- এমন প্রশ্নে প্রিন্সিপাল জানান, তিনি প্রথমে স্বাক্ষর দিতে চাননি। পরবর্তীতে ছাত্রীদের চাপের মুখে তিনি স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হয়েছেন।
শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে। একটা সময় খুব ভালো অবস্থানে থাকলেও এখন সেই অবস্থা নেই। সারাবিশ্বে যখন আমাদের সাবজেক্টগুলোর কদর বেড়েছে, তখন আমাদের কলেজে শিক্ষার মান কমছে। সার্টিফিকেট পেলেও সেটা দিয়ে চাকরির ক্ষেত্রে সফল হওয়া যাচ্ছে না।’
হোম ইকনোমিকস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (হিয়েব) এর সাধারণ সম্পাদক এবং বস্ত্র-পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফাতিমা সুরাইয়া জানান, গার্হস্থ্য অর্থনীতির সাবজেক্টগুলোতে ছেলেরাও পড়াশোনা করুক সেটা তিনি চান। কিন্তু গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে সহ-শিক্ষা চালু হোক সে ব্যাপারে তার দ্বিমত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই কলেজ শুধুমাত্র মহিলাদের কলেজ। ইডেনের মতো আমাদের এখানে অনেক মেয়ে পড়াশুনা করার সুযোগ পাচ্ছে। এই সুযোগটা সরকার আমাদের দিয়েছে। আমরা কেন সেটা নষ্ট করবো। নারী শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ। আমাদের মেয়েরা দেশে-বিদেশে কাজ করছে। কিন্তু এখনকার মেয়েরা কী বুঝেছে আমি তা জানিনা না। এই ঐতিহ্যবাহী কলেজে কেন ছেলেদের পড়তে দিতে হবে? নারীদের জন্য বিশেষায়িত কলেজের ঐতিহ্য নষ্ট করে সহ-শিক্ষা চালুর কোনও যুক্তি নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অ্যাকাডেমিক মিটিং ও স্টাফ মিটিংয়ে সব শিক্ষকরা এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন। তারাও চান সাবজেক্টগুলোর প্রসার হোক। কিন্তু সেটা গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে সহ-শিক্ষা চালু করে নয়।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী রুমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় আর কোনও দায়দায়িত্ব পালন করে না। এ ব্যাপারে কলেজের শিক্ষকরাও আগ্রহ দেখান না।কারণ সহ-শিক্ষা চালু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ইনস্টিটিউট হিসেবে স্বীকৃতি পেলে বর্তমানের অনেক শিক্ষক সমস্যায় পড়বেন। তারা নিজেদের কথাই শুধু ভাবছেন। আমাদের ভালো নিয়ে তারা কোনও কথা বলছেন না।’
সহ-শিক্ষা চালুর পর যদি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে আলাদা ইনস্টিটিউটের মর্যাদা দেওয়া হয়, তবে শিক্ষকরা কিছুটা বেকায়দায় পড়বেন বলে জানান একজন শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, কলেজের অনেক শিক্ষক ইনিস্টিটিউট হলে বিপদে পড়বেন। তবে এক্ষেত্রে একেক জনের বিপদ একেক রকম হবে বলে জানান তিনি।
শুধু একটি ইউনিট হিসেবে নয় আলাদা একটি ইনস্টিটিউট করার দাবি জানান খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী মাহবুবা। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে আমরা ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশুনা করছে। কিন্তু আমরা পরিবহন সুবিধা থেকে শুরু করে কোনও সুবিধাই পাচ্ছি না। শুধু নামেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আছি, কাজে নাই।’
শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রী মাহমুদা বলেন, ‘আমাদের বিশ্বমানের ভালো ভালো সাবজেক্ট আছে। বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা পড়ছে। তাহলে আমাদের এখানে সহ শিক্ষা চালু করতে সমস্যা কোথায়? ’
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে সহ-শিক্ষা চালুর বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘‘ছাত্রীরা তাকে বলেছে, ‘সারা বিশ্বেই গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়টি শুধু মেয়েদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।’ তাই তারা চায়, এখানে সহশিক্ষা চালু হোক। কিন্তু এবার তারা ইনস্টিটিউটের দাবির কথা তাকে বলেনি।’’
সহ-শিক্ষা চালু করতে হলে আগে ইনস্টিটিউট হতে হবে, এমন কোনও পূর্ব শর্ত আছে কিনা, জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘এটা সত্য যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ-ইনস্টিটিউটে ছেলে-মেয়ে সবাই পড়তে পারে। সেখানে এটি ব্যতিক্রম।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
এইচএসসির ফল প্রকাশ মঙ্গলবার, জানা যাবে যেভাবে
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করাবিস্তারিত পড়ুন
বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নতবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন