ঘরজামাইয়ের জামাইষষ্ঠী। ইয়ার্কি নয়, সিরিয়াস
ঘরজামাই শুনেই হাসবেন না। তার আগে জেনে নিন ঘরজামাই কয় প্রকার ও কী কী?
জামাইষষ্ঠী। ঘরজামাইষ্ঠীও। কেউ বলুক আর নাই বলুক, এ দিন সব জামাইয়ের দিন। শুরুতেই জেনে রাখা দরকার, জামাই যেমন দুই প্রকার তেমনই, ঘরজামাই তিন প্রকার—
১। শ্বশুরমশাইয়ের সন্তান-সম। তাঁর আশ্রয়ে, আদরে খেয়ে-পরে থাকা। ইদানীং কম।
২। শ্বশুরের কাছেই থাকেন, কিন্তু নিজের রোজগারটুকু নিজের। আগে যেমন ছিল, এখনও তেমনই।
৩। শ্বশুরের পাশের ফ্ল্যাটে থাকা ঘরজামাই। সন্তানের জন্য আয়া রাখতে হয় না। ইদানীং খুব বেড়েছে।
এই তিন প্রকারের জামাই-ই ঘরজামাই। সিনেমা টিনেমায় যাই দেখুন না কেন, এই তিন শ্রেণির জামাইয়ের আদর আপ্যায়ন সাধারণ জামাইদের থেকে অনেক অনেক আলাদা। আশ্চর্য লাগলেও এটা সত্যি যে, ৩৬৫ দিন যতই জামাইষষ্ঠী হোক, ওই একটা বিশেষ দিনের মজাটা তাদের কাছে আলাদা। চেনা শ্বশুরবাড়িতে আলাদা খাতির। রোজকার ‘বাজার-সরকার’ ঘরজামাই হয়ে ওঠেন একদিনের ‘বাবাজীবন’। ওই দিনটা বাজার যেতে হয় না। শ্বশুরমশাই নিজেই যান।
না, যতই আদরের জামাইষষ্ঠী পরব থাকুক আসলে জামাইদের সম্মান খুবই কম। ঘরজামাইয়ের তো নেই-ই। এমনি জামাই ভাল ভাল উপহার পেলেও, ঘরজামাইয়ের বেলা ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়ায় অন্য রকম— শাশুড়ি তাঁর কর্তাকে বলেন, ‘‘ব্রজগোপালের লুঙ্গিটা ছিঁড়ে গিয়েছে, একটা এনে দিও। সঙ্গে একটা স্যান্ডো গেঞ্জিও।’’
যে জামাই সারাটা বছর ছেলের মতো (অনেক সময়ে তার থেকেও বেশি) শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশোনা করেন, পুজোয় অটো ভাড়া করে ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যান, বাতের ব্যাথার ওষুধ এনে দেন, তাঁর তাচ্ছিল্যের নাম হয়ে যায়— ‘ঘরজামাই’। পাড়ার লোকেরাও তাঁকে ‘জামাই’ বলেই ডাকে। প্রত্যেক পাড়াতেই তাই ‘জামাইয়ের মুদির দোকান’, ‘জামাইদা কল-মিস্ত্রি’, ‘জামাই মাছওয়ালা’ থাকবেই থাকবে।
পাড়ার লোক কেন আপনার করে নেবে বলুন তো! প্রবাদেই তো বলা আছে, ‘যম-জামাই-ভাগনা, তিন নয় আপনা’। অনেকে আবার ‘জন-জামাই-ভাগনা’-ও বলে থাকেন। সে যাই বলা হোক, বলাটার মধ্যে কোনও সম্মান তো নেই-ই, আদরও নেই। এই অবজ্ঞা শুধু ঘরজামাইদের জন্য নয়, সব-জামাইদের জন্য। এমন প্রবাদ নিপাত যাক। আপনার একমাত্র মেয়েটার একমাত্র বড়টাও ‘আপন’ নয়!
আসলে তো দিনটা জামাইষষ্ঠী নয়, অরণ্য-ষষ্ঠী। আরও স্পষ্ট করে সন্তান-ষষ্ঠী। ষষ্ঠী ঠাকুরের ব্রততেও সেই কথাই বলা রয়েছে। সেই নীতিতে জামাইকে সন্তান মেনে স্নেহ দেওয়ার উৎসব জামাইষষ্ঠী। কিন্তু জামাইদের নামে বড় দুর্নাম। সেকালেও ছিল, একালেও আছে— জামাইরা নাকি শ্বশুরবাড়ি এলে আর যেতে চায় না। সেই যে একটা শ্লোক আছে না—
হবির্বিনা হরি যাতি
বিনা পীঠেন মাধবঃ
কদন্নেঃ পুণ্ডরীকাক্ষ
প্রহারেণ ধনঞ্জয়ঃ।
এর পিছনে একটা গল্প আছে। এক শ্বশুরের চার জামাই— হরি, মাধব, পুণ্ডরীকাক্ষ আর ধনঞ্জয়। শ্বশুরবাড়ি এসে কেউই আর ফিরতে চায় না। খায়, দায়, বগল বাজায়। শেষে শ্বশুরমশাই ফন্দি আঁটলেন এঁদের তাড়ানোর। ভাতের পাতে ঘি দেওয়া হল না। অপমানিত হয়ে হরি বিদায় নিল। খেতে বসার সময়ে পিঁড়ি দেওয়া বন্ধ হতে অপমানিত মাধব বিদায় নিল। কদন্ন মানে পচা-গলা ভাত খেতে দেওয়ায় বিদায় নিল সেজ জামাই পুণ্ডরীকাক্ষ। কিন্তু অপমানের বালাই নেই ধনঞ্জয়ের। শেষে প্রহারেণ ধনঞ্জয়ঃ।
এ গল্প একালে মেলে না। একালের জামাইরা অত ছুটি পান না। তাই আগেই শ্বাশুরিকে বলে দেন, ‘‘শনি-রবি দেখে নেমন্তন্নটা করবেন।’’ যার আবার ষষ্ঠীতে ছুটি নেই, তিনি বলে রেখেছেন, ‘‘এবার শুক্রবার লেট-নাইট অনুষ্ঠান হোক।’’
এবারে শুক্রবারে ষষ্ঠী পড়ায় যাঁরা জামাই নন, কিংবা শ্বশুর নন, তাঁদেরও তিনটে দিন আগুনে বাজারে হাত পোড়াতে হবে। জামাই-পুজো (যাঁদের ভাশুর-শ্বশুরের নাম ষষ্ঠীপদ তাঁরা এমনটাই বলেন) মানেই তো বাজার চড়া। সরকারি জামাইদের এবার পাক্কা তিন দিনের ট্রিপ। শুক্কুর-শনি-রবি। আর যাঁরা তিন দিন থাকবেন বলে ভাবছেন, তাঁরা সাবধান। তৃতীয় দিনে নিশ্চিত আম, লিচুর বদলে লিচি ড্রিংক।
তবে জামাই নিয়ে যতই মস্করা হোক সম্পর্কটা বেশ মিষ্টি-মধুর। তারাপদ রায় থেকে বিলিতি জোক বুক সর্বত্রই, ‘শাশুরি-বউমা’ মজার গল্প সব সময়ে তিক্তরসের কিন্তু ‘জামাই-শাশুড়ি’ সম্পর্কটা সদাই মধুর। এক গিন্নি আর এক গিন্নিকে বলছেন, ‘‘আমার ছেলেটা একেবারে স্ত্রৈন। কথায়-কথায় শ্বশুরবাড়ি চলে যায়। বউয়ের কথায় ওঠে বসে। কথায় কথায় শ্বশুরবাড়ি যায়। কিন্তু আমরা জামাইটাকে দেখ কী ভাল! আমার মেয়ের কথার একদম অবাধ্য হয় না। আমরা সর্দি হয়েছে শুনলেও একবার এসে ঠিক দেখে যায়।’’
তবে এই কাহিনিটা শুনলে শ্বশুর-জামাই সম্পর্কে ‘মধু-রস’ খুঁজে পাওয়া যাবে না—
জামাই এসেছে শ্বশুর বাড়ি। শ্বশুরের পায়ে নতুন জুতো। বারবার সেই দিকে তাকাচ্ছেন।
শাশুড়ি— ‘‘জুতোটা মনে হয় বাবাজীবনের বেশ পছন্দ হয়েছে।’’
শ্বশুর— ‘‘তাহলে তুমি এটা নিয়ে নাও বাবা।’’
জামাই— ‘‘কিন্তু, কেউ জিজ্ঞেস করলে কী বলবেন?’’
শ্বশুর— ‘‘সে বলে দেব, রাস্তার একটা কুকুর নিয়ে চলে গিয়েছে।’’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন