ঘরের মেঝে ঘামার ‘আতঙ্কিত’ শেষ না হতেই এবার টিউবওয়েল থেকে বেরোচ্ছে ফুটন্ত গরম পানি !
হঠাৎ করেই ঘেমে ভিজে উঠতে শুরু করেছে অনেকের ঘরের মেঝে, দেয়াল এমনকি চেয়ার-টেবিলও। হুট করে ঘরের মেঝে কিংবা দেয়াল ঘেমে যাওয়া নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অনেকেই। আর এই আতঙ্ককে পুঁজি করেই একদল নানা ধরনের ভীতিকর গল্প ছড়িয়ে দিয়েছিলো চারদিকে। কিন্তু এবার এসেছে আরেকটি আশ্চর্যজনক ঘটনা। এক দিন বা দুই দিন নয়,প্রায় ৫০ বছর ধরে টিউবওয়েল চাপলেই বেরোচ্ছে গরম পানি। এই গরম পানি থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই একটার জায়গায় বসিয়েছেন একাধিক টিউবওয়েল। তবু শেষ রক্ষা হচ্ছে না। কিছুক্ষণ চাপলেই বেরোচ্ছে গরম পানি। এ ঘটনা ঘটছে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে।
তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের কাওয়াখালী, ভেইয়ারকোনা, সিকদারপাড়া, নয়াপাড়া ও আজবপুর গ্রাম ঘুরে অন্তত ১০টি টিউবওয়েলের পানি দেখে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সবুজ মিয়া জানান,একটি বা দুটি নয়,ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ৫০টির বেশি টিউবওয়েল থেকে দীর্ঘদিন ধরে গরম পানি আসছে। এ থেকে রেহাই পেতে অনেকের বাড়িতে একটির পরিবর্তে তিনটি পর্যন্ত টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। তবু পানির কোনো পরিবর্তন নেই।
কত দিন থেকে গরম পানি আসছে—জানতে চাইলে মো. সংগ্রাম মিয়া নামের একজন বলেন, ‘আমি ১৯৭১ সালে সংগ্রামের সময় হয়েছিলাম বলে মা-বাবা নাম রেখেছে সংগ্রাম।’ তিনি আঙুল তুলে বাজারের মসজিদের পাশের টিউবওয়েলটি দেখিয়ে বলেন, ‘যখন থেকে বুঝতে শিখি, তখন থেকে ওই টিউবওয়েলে গরম পানি বের হতে দেখছি। বছর দশেক আগে ঠান্ডা পানির আশায় টিউবওয়েলটিকে মসজিদের দক্ষিণ পাশ থেকে উত্তর পাশে নিয়ে নতুন করে বসানো হয়। কিন্তু পানির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
ইউপি সদস্য সবুজ মিয়া বলেন, এই টিউবওয়েলগুলো চাপলে প্রথম এক-দুই মিনিট পানি হাতে ছোঁয়া যায়। এরপরই ফুটন্ত গরম পানির মতো পানি বের হতে থাকে। হাতে বা শরীরে লাগালে অনেক সময় ফোসকা পড়ে যায়।
একই এলাকার ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ মো. আরফন আলী বাড়িতে ডেকে নিয়ে একটি পুরোনো টিউবওয়েল চেপে গরম পানি বের করে দেখান। বলেন, এটি প্রায় ৫০ বছর আগে তাঁর বাবা এখানে বসিয়েছিলেন। তখন থেকেই এই টিউবওয়েল দিয়ে গরম পানি বেরোচ্ছে। এর প্রায় ১৫ গজ দূরের আরেকটি নতুন টিউবওয়েল দেখিয়ে বলেন, গত বছর এই টিউবওয়েলটি বসানো হয়েছে। এটা থেকেও গরম পানি আসে।
পাশের সিকদারপাড়া গ্রামে গিয়েও একই অবস্থা পাওয়া গেল। ওই গ্রামের সৈয়দ বানু (৬০) ও মনোয়ারা বেগম (৫০) বলেন, গরম পানি থেকে রক্ষা পেতে তাঁদের বাড়িতে পাশাপাশি পরপর তিনটি টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। কিন্তু সব কটি থেকেই কিছুক্ষণ চাপার পর গরম পানি বের হতে থাকে।
কাওয়াখালী বাজারের স্বর্ণকার নন্দন দেবনাথ জানালেন, এ পানি সোনা বা রুপায় ব্যবহার করলে রং নষ্ট হয়ে কালচে হয়ে যায়।
কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই পানি অন্য এলাকার পানির মতো খেতে স্বাদ লাগে না। সাবানের পানির মতো পানি অনেকটা পিচ্ছিল এবং গন্ধটাও অন্য রকম। এখানকার মাটির নিচে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। তবে এ পানি দূষিত কি না, স্থানীয় বাসিন্দারা তা জানেন না। এমনকি জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও কেউ যাননি বা পরীক্ষা করেননি।
কিশোরগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তোজাম্মেল হক বলেন, টিউবওয়েল থেকে গরম পানি বের হলে ওই জায়গায় মাটির নিচে গ্যাস থাকতে পারে। গ্যাসের পানিটা কিছুক্ষণ রাখলে ঠান্ডা হয়ে গ্যাস বেরিয়ে যায়, তখন তেমন একটা স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে না। তবে পানিতে যদি গন্ধ থাকে বা পিচ্ছিল হয়, তাহলে অন্য কোনো খনিজ পদার্থ থাকতে পারে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে, বিশেষ করে শিশুদের। তবে পানি পরীক্ষা করার পর এর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। খোঁজ নিয়ে দ্রুত পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম নৌশাদ খান বলেন, টিউবওয়েল থেকে যদি দীর্ঘদিন ফুটন্ত পানির মতো গরম পানি বের হয় এবং সেটা যদি স্বাভাবিক পানির মতো স্বাদ বা গন্ধ না হয়; তাহলে অবশ্যই সেটা পরীক্ষা করে ব্যবহার করা উচিত; না–হয় স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল থেকেই ঘরের মেঝে ঘেমে যাওয়া নিয়ে সোশাল মিডিয়া সরগরম হয়েছে। ঘরের মেঝে ঘেমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তখন কেউ কেউ বলছেন সামনে বড় ধরনের বন্যা হবে,কারো মতে এটা ভূমিকম্পের আলামত কিংবা কেউ অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলে বেড়াচ্ছেন। দেশের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম টুইটার ঘরের মেঝে ঘেমে যাওয়ার ছবিতে সয়লাব হয়ে গেছে। তবে, আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন ঘরের মেঝে ঘামছে স্বাভাবিক নিয়মে আর এটা নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিচ্ছু নেই।
তবুও একাধিক বাড়ির বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকদিন প্রচুর বৃষ্টির পর সকালে রোদ উঠলে ঘরের মেঝেতে পানি জমে স্যাতস্যাতে ভাবের সৃষ্টি হয়। মেঝে মুছে ফ্যান চালানোর পরও ঘরের স্যাতস্যাতে ভাব অব্যাহত থাকে এবং পানি জমতে থাকে। এছাড়া সারাদিন আবহাওয়া ভারী ও অস্বাভাবিক গরম অনুভূত হচ্ছে। যার কারণে মনে হচ্ছে ভূমিকম্প হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, হুট করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ঘরের মেঝে ঘামছে। এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। মঙ্গলবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ২০ ডিগ্রি এই মুহূর্তে ৩৪ ডিগ্রি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে হুট করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে মেঝে ঘামছে। তাপমাত্রা আকস্মিক তারতম্যর কারণে এটা হতে পারে।
বজলুর রশীদ আরো বলেন, কয়েকদিন থেকে বৃষ্টির ফলে তাপমাত্রা নিচে নেমে গিয়েছিল। এখন বাড়ছে। শীতের দিন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়ির ভেতরও ঘেমে যায়। এর কারণ তাপমাত্রার তারতম্য।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন