চট্টগ্রামে আড্ডার নামে জমে উঠেছে মদ-ইয়াবার হাট
স্কুল-কলেজ পড়–য়া তরুণ-তরুণীরা আলো-আঁধারি রেস্তোরাঁয় গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে, নেমে আসছে সামাজিক অবক্ষয়। এমন বাস্তবতায় জেলা প্রশাসন ও সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে এসব রেস্তোরাঁয় শুরু হয় অভিযান। একের পর এক অভিযান পরিচালনার কারণে তরুণ-তরুণীরা এসব রেস্তোরাঁয় আসা-যাওয়া কমিয়ে দেয়ায় নেমে আসে ব্যবসায়িক মন্দা। আর এই মন্দা কাটাতে চট্টগ্রামে এসব রেস্তোরাঁয় মালিক পরিবর্তন করেছেন ব্যবসার ধরন।
নানা সাংকেতিক নামে তারা এসব রেস্তোরাঁয় বিক্রি করছেন বিদেশী মদ ও ইয়াবা। এসব মাদকের হাতবদল ও বিকিকিনির স্পট হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে রেস্তোরাঁগুলো। ঈদের পর থেকে মাদকচট্টগ্রামে আড্ডার কারবারিরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নগরীর অর্ধশত আলো-আঁধারি রেস্তোরাঁ এক প্রকার মাদক বিকিকিনি ও হাতবদলের স্পটে পরিণত হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও প্রশাসন প্রতিটি রেস্তোরাঁ থেকে সর্বনিু ৩০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত মাসোয়ারা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে।
নগরীর চকবাজার এলাকায় সিটি হার্ট নামে একটি আলো-আঁধারি রেস্তোরাঁয় হাতবদল হয় ইয়াবার বিশাল একটি চালান। ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৮০ হাজার পিস ইয়াবার এই চালান সিটি হার্ট রেস্তোরাঁয় হাতবদল হয়ে ঢাকায় পাচারের পথে নিমতলী এলাকা থেকে গত বুধবার গভীর রাতে আটক করে র্যাবের একটি দল। গ্রেফতার করে পাচারের সঙ্গে জড়িত জাকির ও জসিম উদ্দিন রানা নামে দুই ব্যক্তিকে।
এরা চট্টগ্রামের ইয়াবা সম্রাট হিসেবে পরিচিত জাহিদুল ইসলাম আলো ওরফে ইয়াবা আলোর সহযোগী। তারাই পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, টেকনাফ সীমান্ত থেকে আনা এই ইয়াবার চালান তারা সিটি হার্ট রেস্তোরাঁয় হাতবদল করে। এ ঘটনার পর আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও নড়েচড়ে বসে। সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য শনিবার বলেন, নগরীর আলো-আঁধারি কিছু কিছু রেস্তোরাঁয় বিদেশী মদ, ইয়াবাসহ নানা মাদক হাতবদল ও সেবনের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে।
এ ধরনের রেস্তোরাঁয় রেইড দিয়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে কোন্ থানা পুলিশ এ ধরনের রেস্তোরাঁ থেকে মাসোয়ারা নিচ্ছে এমন তথ্য বা অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, স্কুল-কলেজ পড়–য়া তরুণ-তরুণী ও কপোত-কপোতিদের টার্গেট করে নগরীতে গজিয়ে উঠে বেশ কিছু আলো-আঁধারি রেস্তোরাঁ। দিনের বেলায়ও এসব রেস্তোরাঁয় থাকে অন্ধকার ও ভুতুড়ে পরিবেশ। এসব রেস্তোরাঁ আড্ডা-আপ্যায়নের নামে অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হয়। এ কারণে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে চলে সাঁড়াশি অভিযান।
সূত্র জানায়, নগরীর নাসিরাবাদ, বায়েজিদ বোস্তামী, হালিশহর, পতেঙ্গা, জিইসি মোড়, কাজীর দেউড়ি, চকবাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় গড়ে ওঠা এসব আলো-আঁধারি রেস্তোরাঁয় নানা সাংকেতিক নামে চলছে বিদেশী মদ ও ইয়াবার বিকিকিনি। এক্স-ওয়াই, মিক্সার এবং নরমাল বা সাধারণ নামকরণে তিন ধরনের খাবার বিক্রি করা হয়। এক্স-ওয়াই ক্যাটাগরির খাবারের তালিকায় রয়েছে ইয়াবা গুঁড়োর সংমিশ্রণে তৈরি পানীয় এবং ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। মিক্সার ক্যাটাগরির খাবারের তালিকায় রয়েছে যৌন উত্তেজক ওষুধ, অ্যালকোহল সংমিশ্রণে জুস। যাকে তারা ককটেলও বলে থাকে। নরমাল ক্যাটাগরির খাবারের তালিকায় রয়েছে সাধারণ খাবার। এক্স-ওয়াই ক্যাটাগরির খাবারের সর্বনিু খরচ পড়ে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। মিক্সার ক্যাটাগরির খাবারের সর্বনিু খরচ পড়ে ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। আর যারা নরমাল ক্যাটাগরির খাবার খাবে তাদের সর্বনিু ৩৫০ টাকার অর্ডার দিতে হয়।
অভিযোগ রয়েছে- সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এবং বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এসব রেস্তোরাঁ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে থাকে। স্থান ও রেস্তোরাঁর আকার ভেদে একেকটি রেস্তোরাঁ থেকে ৩০ হাজার থেকে মাসে এক লাখ পর্যন্ত মাসোয়ারা আদায় করা হয়। সূত্র জানায়, গত বুধবার গভীর রাতে নগরীর বন্দর থানার নিমতলী বিশ্বরোড এলাকা থেকে ৮০ হাজার পিস ইয়াবাসহ মো. জাকির ও জসিম উদ্দিন রানা নামে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র্যাব।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইন-শৃংখলা বাহিনী জানতে পারে এসব ইয়াবা হাতবদল হয় নগরীর চকবাজার এলাকার সিটি হার্ট নামে আলো-আঁধারি রেস্তোরাঁয়। আর গ্রেফতারকৃত দুজনই চট্টগ্রামের পাইকারি ইয়াবা চোরাকারবারি জাহিদুল ইসলাম আলোর সহযোগী। এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর নগরীর হালিশহর ও খুলশীর দুটি অঘোষিত রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ১৫ হাজার ৩১৪ পিস ইয়াবার চালান আটক করেছিল র্যাব।
১টি বিদেশী পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, ১টি প্রাইভেটকার, ১টি মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার করা হয় দেশে ইয়াবা ব্যবসা ও পাচার চক্রের অন্যতম হোতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে আলো ও তার ৫ সহযোগীকে। মাদক চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের সব সদস্যই নিরাপদ আস্তানা হিসেবে রেস্তোরাঁগুলোকে বেছে নিয়েছে। চকবাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আলো-আঁধারি রেস্তোরাঁগুলোতে অনেকটা ওপেন সিক্রেটভাবে বিদেশী মদ ও ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য বিক্রি হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কুড়িগ্রামে ভয়াবহ বন্যায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী
কুড়িগ্রামে টানা ৬ দিন বন্যায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মানুষজনবিস্তারিত পড়ুন
চালু হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত হাট
প্রায় সাড়ে চার বছর পর আগামী ২৯ জুলাই থেকে চালুবিস্তারিত পড়ুন
রায়পুরায় বিএনপির প্রায় ১০০ নেতা কর্মী আ’লীগে যোগদান
‘আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে, ঘরের ছেলে ঘরেবিস্তারিত পড়ুন