চরমোনাই পীরের ভাইয়ের বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড়
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীরের ভাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের একটি বক্তব্য সম্প্রতি বেশ আলোচিত হচ্ছে৷ গত বছরের মে মাসে ঢাকায় এক সমাবেশে তিনি বক্তব্যটি দিয়েছিলেন৷
তবে নতুন বছরের শুরুতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নতুন বই প্রকাশিত হওয়ার পর বক্তব্যটি বেশি আলোচিত হচ্ছে৷ কারণ ফয়জুল করীম তাঁর বক্তব্যে যা দাবি করেছিলেন নতুন পাঠ্যপুস্তকে তার প্রতিফলন কিছুটা হলেও পাওয়া গেছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন দলটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমেদ আবদুল কাইয়ূম৷
ইউটিউব এবং টিউবচপ নামে সামাজিক যোগাযোগের দু’টি মাধ্যমে ফয়জুল করীমের বক্তব্যটি রয়েছে৷ সম্প্রতি ফেসবুকেও এটি অনেকবার শেয়ার হয়েছে৷ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের ভাই বলে জানা গেছে৷
ফয়জুল করীম তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘‘১৯১১ সালে বাংলাদেশের রাজধানীর বুকে যে ইউনিভার্সিটির প্রস্তাব করা হয়েছিল একমাত্র হিন্দুদের বিরোধিতার কারণে সেটা সম্ভব হয় নাই৷ সেই ইউনিভার্সিটি স্থাপন করা হয়েছিল ১৯২১ সনে নবাব সলিমুল্লাহর প্রস্তাবে৷ কোনো খ্রিষ্টান, কোনো হিন্দু বা নাস্তিকদের প্রস্তাবে এই ইউনিভার্সিটি করা হয় নাই৷
কাজেই ইউনিভার্সিটি মুসলমানদের ইউনিভার্সিটি, এখানে কোনো নাস্তিক থাকতে পারবে না৷ ‘‘এই ইউনিভার্সিটি কোনো নাস্তিকের নয়৷ এই ইউনিভার্সিটি নবাব সলিমুল্লাহর নিজের জমিতে স্থাপিত ইউনিভার্সিটি৷ মুসলমানদের প্রস্তাবিত ইউনিভার্সিটি, এটা নাস্তিকদের জায়গা নয়, মুসলমানদের জায়গা”, বলেন ফয়জুল করীম৷
তিনি বলেন, ‘‘শুধু তাই নয়, আজকে সিলেবাসের মধ্যে আপনারা শুনেছেন, দেখেছেন, লেখা আছে, দেব-দেবীর নামে কোরবানি করলেও নাকি তা খাওয়া বৈধ হবে৷ এটা শেখ হাসিনার জন্য খাওয়া বৈধ হতে পারে, কোনো মুসলমানের জন্য নয়৷ শুধু তাই নয়, লাল গরুটা- এই লাল গরুটা কবিতার মধ্যে গরুকে দেবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে৷
গরুকে জবেহ করা, এটা ত্রুটিযুক্ত একটা দোষ৷ এটা প্রমাণ করা হয়েছে৷ আমি মনে করি এটা হিন্দুদের ধর্মে হতে পারে, মুসলমানদের ধর্মে না৷ কাজেই যারা এই কবিতা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করেছে আমি মনে করি তারা মুসলমানের সন্তান নয়৷ তাদের পূর্বপুরুষ সম্ভবত হিন্দু হতে পারে, নাস্তিক হতে পারে৷ এটা মুসলমানের কবিতা হতে পারে না৷”
ফয়জুল করীম বলেন, ‘‘যেই সিলেবাসের মধ্যে নবি (সা:) এর জীবনী থাকবে না, ওমরের জীবনী থাকবে না, আবুবকরের জীবনী থাকবেনা, ওসমানের জীবনী থাকবেনা, আলীর জীবনী থাকবেনা, যেখানে মহৎ লোকদের জীবনী থাকবে না – এরকম সিলেবাসের বই বাংলাদেশে পড়ানো হবে না ইনশাল্লাহ৷ এটা পড়াতে দেয়া হবে না৷
‘‘আমরা আগেই বলেছি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ, ধারাবাহিক আন্দোলনে বিশ্বাসী৷ যদি আপনারা ভাঙচুর চান আমরা করতে পারি, কিন্তু এখন আমরা করবোনা৷ আপনারা যদি হরতাল চান, দিতে পারি, কিন্তু এখন আমরা দেবো না৷ আপনারা যদি অবরোধ চান, তাও আমরা করতে সক্ষম, কিন্তু এখন আমরা করবো না৷ সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে আঙুলকে বাঁকা করতে পারি আমরা”, বলেন তিনি৷
ঐ ভিডিওতে সিলেবাস পরিবর্তনের দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে আরো অনেক কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল৷
এ প্রসঙ্গে চরমোনাই পীরের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি৷ তবে শুক্রবার তাঁর পক্ষে কথা বলেন দলের প্রচার সম্পাদক আহমেদ আবদুল কাইয়ূম৷
তিনি দাবি করেন, ‘‘পীর সাহেব ঐ সমাবেশে দাবি তুলেছিলেন বলেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নতুন বইয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছি৷ নির্বাচন কমিশন নিয়ে সংলাপে আমরা যখন রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছি সেখানে রাষ্ট্রপতিকেও ধন্যবাদ জানিয়েছি৷ তবে আমাদের দাবি এখনো পুরোটা মানা হয়নি৷”
এই বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) মুসলমানদের – হিন্দু, খ্রিষ্টান বা নাস্তিকদের নয়৷ এটা বলতে ফয়জুল করীম কী বোঝাতে চেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল কাইয়ূম বলেন, ‘‘তিনি বুঝাতে চেয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মুসলমান৷ তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম চিন্তাধারা থেকে স্থাপন করেছেন৷ এখানে মুসলিম চিন্তাধারা অনুযায়ী শিক্ষা হবে৷ ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ এখানে মুসলমানিত্ব শিখবে৷ এখানে নাস্তিকতার জায়গা হবে না৷”
সিলেবাসে কি নাস্তিক্যবাদী পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে?
আবদুল কাইয়ূম: সিলেবাস তো আমরা দেখিনি৷ তবে এখানে মাদ্রাসার ছাত্রদের কম সুযোগ দেয়া হয়৷ হিজাব পরায় বাধা দেয়া হয়৷ নাস্তিক্যবাদী আস্ফালন করা হয়৷
তাহলে এখানে শুধু মুসলমানরাই পড়বে?
– না অন্য ধর্মের লোকরাও পড়বে৷ কিন্তু সংখ্যালঘুদের শিক্ষানীতি চলবে না৷ তারা আলাদাভাবে তাদের ধর্ম পড়বে৷
পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু বা অন্য ধর্মের মহাপুরুষদের জীবনী না থাকলে তারা কেন মুসলিম মহাপুরুষদের জীবনী পড়বে?
– তাদের পড়ার দরকার নাই৷ তাহলে আমরা সব ধর্মের জন্য আলাদা আলাদা সিলেবাস ও শিক্ষা ব্যবস্থা চাই৷ একসঙ্গে পড়ার দরকার নাই৷
শোলাকিয়ার ইমামের প্রতিক্রিয়া
শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, ‘‘কোনো সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতো কোনো একক ধর্মের অনুসারীদের হতে পারে না৷ তবে বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে৷ আমাদের হয়ত অনেকেই জানেন না যে রাজা রামমোহন রায় মাদ্রাসায়ও পড়েছেন৷”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পবিত্র কোরান শরিফে ইহুদি ধর্মের হযরত মুসা, খ্রিষ্টান ধর্মের হযরত ইসার নাম রয়েছে৷ তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে৷ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে কোরান শরীফে ‘জারকিফ’ শব্দ দিয়ে বৌদ্ধদের বোঝানো হয়েছে৷ তাই সাধারণ পাঠ্যপুস্তকে অন্য ধর্মের যারা অনুসরণীয় তাঁদের জীবনী থাকতে বাধা কোথায়? যা ভালো তা নিতে দোষের কিছু নেই৷”
তিনি আরো বলেন, ‘‘সাধারণ শিক্ষায় হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান – এ সব ধর্মীয় ভেদ থাকতে পারে না, এটা কূপমন্ডূকতা৷ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে যদি নাস্তিকতা থাকেও তারপরও সব শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানকে নাস্তিক্যবাদী বলা অনুচিত৷”
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রাজধানীতে আনসার ব্যাটালিয়ন মোতায়েন
ঢাকা মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৬ প্লাটুন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোতায়েনবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ আহত ২৩
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী, মহিলা আওয়ামী লীগবিস্তারিত পড়ুন