চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ! আশংকাজনক হারে বাড়ছে মেয়েদের খৎনা করার ঘটনা!
ব্রিটেনের ওয়েলসে গত বছর ১২৩টি মেয়েদের খৎনার ঘটনা ধরা পড়েছে। ওয়েলসের হাসপাতালগুলোয় কর্মরত ধাত্রী ও চিকিৎসকরা বলেছেন, তারা ২০১৬ সালে গড়ে প্রতি তিন দিনে একটি করে মেয়েদের খৎনার ঘটনা আবিষ্কার করেছেন। ওই তথ্যে বলা হচ্ছে, ২০১৬ সালে ঘটনা পাওয়া গেছে ১২৩টি, আর আরো অন্তত ৪৪টি ১৮ বছরের কমবয়স্ক মেয়েকে চিহ্নিত করা হয়েছে – যাদের খৎনা করানো হতে পারে এমন ঝুঁকি রয়েছে।
ওয়েলসের নারীদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান বলেছে, আসলে যা হচ্ছে এটি তার খুব সামান্য একটি অংশ। তারা বলছেন, ওয়েলসে অন্তত ২ হাজার নারী রয়েছেন যাদের খৎনা করানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যে কিছু জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কারণে মেয়েদের খৎনার প্রচলন রয়েছে।
যদিও ১৯৮৫ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে এটা অবৈধ ঘোঘণা করা হয়েছে, কিন্তু এখনো এ ব্যাপারে কারো বিচার করা যায় নি। ওয়েলসের সোয়ানসির বাসিন্দা একজন শরণার্থী বর্ণনা করেছেন কিভাবে তার বোনকে কয়েক বছর আগে নাইজেরিয়ায় খৎনা করানো হয়েছিল। তিনি বলেন, তার নিজের খৎনা করানো হয়েছিল যখন তার বয়েস মাত্র কয়েক দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলাটি বলছেন, তিনি এখন তার নিজের দুই মেয়েকে এর হাত থেকে রক্ষা করতে চান। ব্রিটেনে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা স্কুল শিক্ষকদের সতর্ক করে দিচ্ছেন, যেন অল্পবয়স্ক মেয়েদের গ্রীষ্মের লম্বা ছুটির সময় ‘বিদেশে’ নিয়ে গিয়ে খৎনা করানো ঠেকাতে তারা ভুমিকা রাখেন।
পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে অন্তত ২০ কোটি মহিলা এ প্রথার শিকার হয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কয়েকদিন আগে এই প্রথমবারের মতো মিশিগানের ডেট্রয়েটে ডা. ফখরুদ্দিন এবং ফরিদা আত্তার নামে দু’জনকে মেয়েদের খৎনা করানোর চেষ্টার দায়ে গ্রেফতার করা হয়।
মেয়েদের খাতনা আসলে কি?
আফ্রিকার অনেক সমাজেই রয়েছে ভয়ঙ্কর এই সংস্কৃতি, যার উদ্দেশ্য হলো মেয়েদের বিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত করা এবং তাদের যৌন সুখ থেকে বিরত রাখা। ৩০ বছর আগে এই খৎনা নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাস করা হয় ব্রিটেনে। এমনকি কোনো মেয়েকে খৎনার জন্য ব্রিটেনের বাইরে নিয়ে যাওয়াও অপরাধ।
কিন্তু আইন পাস হওয়ার পর এই অপরাধে সাজা দেয়ার একটি ঘটনাও ঘটেনি দেশটিতে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ একদল সোমালীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ স্কুলবালিকার দল এবার একটি সিনেমা বানিয়েছে। ‘দ্য সাইলেন্স স্ক্রিন’ নামের এই ছবিতে একটি পরিবারের ঘটনাপ্রবাহ দেখানো হয়েছে, যেখানে ছোট মেয়েটিকে খৎনা করাতে চায় বাবা-মা এবং তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বড় মেয়ে।
ছবিটির পরিচালকদের একজন ১৭ বছর বয়সী আমিনা ইয়াইইয়া বলছিলেন, তাদের সমাজে খৎনার প্রকোপ এত বেশি যে, কোনো কোনো বাবা-মা রীতিমতো পার্টির আয়োজন করেন এই খৎনাকে ঘিরে। এমন অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেনেই মেয়েদের খৎনা করানো যায় সবচেয়ে নিরাপদে এবং ধরা পড়া কিংবা শাস্তির আশঙ্কাও এখানে সবচেয়ে কম।
নেদারল্যান্ডসে ফেডারেশন অব সোমালিয়া অ্যাসোসিয়েশনের সারা নালেয়ি বলছিলেন, গত কয়েক বছরে ১০ হাজারেরও বেশি সোমালিয়ান যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে। যদিও মহিলাদের খৎনা এখানে নিষিদ্ধ, তারপরও গোপনে লোকজন করছে। এমনকি ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো থেকেও লোকজন এখানে তাদের মেয়েদের খৎনা করাতে নিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু কোনো বিচার কিংবা শাস্তি দেয়ার ঘটনা কেন ঘটছে না ব্রিটেনে? পুলিশ বলছে, পর্যাপ্ত প্রমাণ সংগ্রহ করা প্রায়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মেয়েরাও বাবা-মায়েদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে অনিচ্ছুক থাকে। মেট্রোপলিটন পুলিশের শিশু নির্যাতন কমান্ডের প্রধান সায়মন বলছিলেন, নিয়মিত কঠোর শাস্তি দিলে মানুষ তাদের আচরণ পাল্টে ফেলবে, এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত ।
এদিকে মেয়েদের খৎনা দেয়ার ঘটনায় ফ্রান্সে শাস্তি দেয়ার ১০০টি ঘটনা রয়েছে। দেশটিতে ছয় বছর বয়সী পর্যন্ত শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। এমনকি যেসব শিশু খৎনার ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের এই বয়সের পরও পরীক্ষার আওতায় রাখেন, স্বাস্থ্যপরিদর্শকরা। তবে কমান্ডার সায়মনের মতে, ব্রিটেনে এমন নিয়ম চালু করা দুঃসাধ্য।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন