চারদিনই ঊর্ধ্বমুখী সূচক, আস্থায় ফিরছেন বিনিয়োগকারীগণ
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক ও লেনদেনে ইতিবাচক প্রবণতা বিরাজ করছে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চারদিনই বেড়েছে সূচক। এরকম টানা উত্থানে অতীতের হতাশা ভুলে বিনিয়োগকারীরা ক্রমেই উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন। ফলে সকলের অংশগ্রহণে ইনডেক্সের পাশাপাশি দিনদিন লেনদেনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত রবিবারের কারেকশনের পর সপ্তাহ জুড়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকায় বাজার সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে নতুন করে যে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, তাতে সামনে বাজার আরও চাঙা হতে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিভিডেন্ড ও ইপিএসকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন যাবত বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরতে শুরু করেছিল। গত সপ্তাহে ইনডেক্স টানা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মনে জন্ম নেয়া সব সংশয় কেটে গিয়ে আস্থায় ফিরেছে। খুব শিগগিরই বাজার যে আরও শক্তিশালী হবে তা গত দুই সপ্তাহে মার্কেটই তার আভাস দেয়। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, মার্কেট কারেকশনে যাওয়ার আগে আরও কিছু বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্র রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডিএসইতে সব ধরনের সূচক বেড়েছে। এদিকে সূচক বাড়লেও কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে গত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। আলোচিত সপ্তাহটিতে লেনদেন বেড়েছে ১৮.৬১ শতাংশ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সপ্তাহে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শেয়ারে ব্যাপক উত্থান ঘটেছে। এর জেরে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমলেও সূচক বেড়েছে। মূলত আর্থিক খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আচরণ বিধি জারি করায় ব্যাংকের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক দেখা গেছে। নতুন বছরের ১ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট আচরণ বিধি মেনে চলতে হবে। এছাড়াও ব্যাংক ও আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা আনার খবরেও এসব সেক্টরে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়ছে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরাও অস্থিরতা এবং ডে-ট্রেডিং মনোভাব ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছেন। ফলে শেয়ারবাজার কিছুটা গতিশীল হচ্ছে। তবে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে পুঁজিবাজার অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিতে হবে। তাই সব মহলকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।
সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহ শেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ৯৪ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই ৩০ সূচক বেড়েছে ৪২ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট। অপরদিকে, শরিয়াহ বা ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ১২ দশমিক ১৮ পয়েন্টে। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৬টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ২০৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টির। আর লেনদেন হয়নি দুইটি কোম্পানির শেয়ার। এগুলোর ওপর ভর করে গত সপ্তাহে লেনদেন মোট তিন হাজার ৫৯১ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। তবে এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় তিন হাজার ২৭ কোটি ৬২ লাখ টাকার। সেই হিসাবে সমাপ্ত সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ৫৬৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
আর সমাপ্ত সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন হয়েছে তিন দশমিক ৯৮ শতাংশ। ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে পাঁচ দশমিক ৬০ শতাংশ। ‘জেড’ ক্যাটাগরির লেনদেন হয়েছে দুই দশমিক চার শতাংশ।
অপরদিকে সপ্তাহ শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক ২৮৪ পয়েন্ট বেড়ে সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ১৯১৯৫ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসসিএক্স ১৭৯ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ৩৭ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৫২৫ পয়েন্ট এবং সিএসআই আট পয়েন্ট বেড়ে সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১৬১৭, ১৪৫৬, ১৭২৪২ ও ১২২৮ পয়েন্টে। আর সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে হাত বদল হওয়ার ২৭৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৫টির, কমেছে ১৬৩টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির দর। এগুলোর ওপর ভর করে বিদায়ী সপ্তাহে ২১৬ কোটি ৭ লাখ ২৫ হাজার ৯২১ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যা আগের সপ্তাহ থেকে ৭১ কোটি ৭৫ লাখ ৬ হাজার ৩৫০ টাকা কম। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিলো ২৮৭ কোটি ৮২ লাখ ৩২ হাজার ২৭১ টাকা।
ডিএসইর পিই রেশিও অপরিবর্তিত
সাপ্তাহিক ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৬.২৫ পয়েন্টে। যা সপ্তাহ শেষে একই অবস্থানে রয়েছে। অর্থাৎ পিই অবস্থান করছে ১৬.২৫ পয়েন্টে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহ শেষে ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে ১১.৯৯ পয়েন্টে। এছাড়া আর্থিক খাতের ২৪.১৩ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতের ২৩.১১ পয়েন্টে, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২৫.১৯ পয়েন্ট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ১২.২৮ পয়েন্ট, পাট খাতের ৯৫.২২ পয়েন্ট, বস্ত্র খাতের ১৮.০৪ পয়েন্ট, ওষুধ খাতের ১৯.৫৭ পয়েন্ট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ৩০.৮৩ পয়েন্ট, সেবা ও আবাসন খাতের ১৭.৭৭ পয়েন্ট, সিমেন্ট খাতের ৩৮.৬২ পয়েন্ট, আইটি খাতের ২৫.০৪ পয়েন্ট, চামড়া খাতের ১৮.৬০ পয়েন্ট, সিরামিক খাতের ২৩.১২ পয়েন্ট, বীমা খাতের ১৯.৫৫ পয়েন্ট, টেলিযোগাযোগ খাতের ২১.৯৭ পয়েন্ট এবং বিবিধ খাতের ২৯.৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সাপ্তাহিক রিটার্নে দর কমেছে
শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জে (ডিএসই) দর (রির্টানে) কমেছে ১৩ খাতে। আর দর বেড়েছে সাত খাতে। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, আলোচিত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি লেনদেন কমেছে বস্ত্র খাতে। বিদায়ী সপ্তাহে খাতটির শেয়ার দর ৩.১৫ শতাংশ কমেছে। এরপরেই আছে আইটি খাত। গত সপ্তাহে এ খাতে দর কমেছে ৩.০২ শতাংশ। দর কমার অন্যান্য খাতের মধ্যে সিমেন্ট খাতে ১.২৬ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে ০.৪৮ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ০.৯৭ শতাংশ, জেনারেল ইন্স্যুরেন্স খাতে ১.৩৬ শতাংশ, লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাতে ০.২৪ শতাংশ, জুট খাতে ০.২২ শতাংশ, বিবিধ খাতের ১.১৬ শতাংশ, আর্থিক খাতে ০.২৬ শতাংশ, পেপার ও প্রিন্টিং খাতে ০.৫২ শতাংশ, সেবা ও আবাসন খাতে ১.২৩ শতাংশ এবং ট্যানারী খাতে ০.২১ শতাংশ দর কমেছে।
এদিকে দর বাড়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ব্যাংক খাতে। বিদায়ী সপ্তাহে এ খাতে দর বেড়েছে ৪.৪৫ শতাংশ। এরপরেই আছে টেলিকমিনিকেশন খাত। এ খাতে দর ৩.৪২ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে। দর বাড়া অন্যান্য খাতের মধ্যে সিরামিক খাতে ১.৮৭ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতে ১.০৩ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ০.১৭ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১.৫৯ শতাংশ এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ০.১৮ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূস: নির্বিঘ্নে সব জায়গায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “এবার দুর্গাপূজারবিস্তারিত পড়ুন
সোমবারের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার
এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করেনবিস্তারিত পড়ুন
১৪ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৬৪ কোটি ডলার
এ মাসের প্রথম ১৪ দিনে এসেছে ১৬৪ কোটি ৬৭ লাখবিস্তারিত পড়ুন