চূড়ান্ত পরিণতির অপেক্ষায় নিজামী-মীর কাসেম
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী ও নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেমের ভাগ্য চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মতিউর রহমান নিজামী হলেন পঞ্চম ব্যক্তি, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ আদালতও যার ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, নিজামীর ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে দেওয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় আগামী মার্চ মাসে প্রকাশ হতে পারে। রায় প্রকাশের পর থেকে রিভিউ করার জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন নিজামী। রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার পর রায় কার্যকর করতে পারবে সরকার। তবে দণ্ড কার্যকরের আগে জামায়াতের এই নেতা শেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সময় পাবেন। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা নাকচ হলে বা তিনি প্রাণভিক্ষা না চাইলে সরকার দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘রিভিউ শুনানির পর কারো ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ড কমেছে, আমার জানা নেই। ইতিহাসে এমন নজির আছে বলেও আমার জানা নেই।’
সেক্ষেত্রে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রাক্তন মন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসির দঁড়িতেই ঝুলতে হবে।
অপরদিকে, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর চূড়ান্ত রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৮ মার্চ নির্ধারণ রয়েছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করবেন। সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশ বহাল থাকলে দণ্ড কার্যকরে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির অপেক্ষা করতে হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগের চারটি ফাঁসি কার্যকরের আগে পালিত প্রক্রিয়াগুলো এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসাবে থাকছে।
নিজামী: ২০১৬ সালের শুরুতেই গত ৬ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। জামায়াতের এ নেতার দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করতে পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চূড়ান্ত দণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের রায় প্রকাশের সময়সীমা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া প্রথম ব্যক্তি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। রায় ঘোষণার ২ মাস ১৭ দিন পর একই বছরের ৫ ডিসেম্বর ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে আপিল বিভাগ।
সব প্রক্রিয়া শেষে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের মামলা নিষ্পত্তি করে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখেন। আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার সাড়ে ৩ মাস পর ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেন।
৫ মার্চ কামারুজ্জামান রিভিউ আবেদন করলে ৬ এপ্রিল আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেন। রিভিউ আবেদন খারিজের পর কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাওয়ায় ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল রাত ১০টার পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এই জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সরকার।
২০১৫ সালের বছর ১৬ জুন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
রায় ঘোষণার সাড়ে ৩ মাস পর একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
আর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যূদণ্ড বহাল রেখে আপিলের রায় ঘোষণা করা হয় ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই। ২ মাসের ব্যবধানে ৩০ সেপ্টেম্বর সাকা চৌধুরীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। মুজাহিদের রায় প্রকাশের একই দিনে সাকা চৌধুরীর রায়ও প্রকাশ হয়।
এরপর এই দুইজন ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দিলে গত বছরের ২১ নভেম্বর রাতে তাদের দণ্ড কার্যকর করা হয়।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলো আপিলের রায় ঘোষণার পর থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করতে আড়াই থেকে সাড়ে ৩ মাস সময় লেগেছে। সাজাপ্রাপ্ত ৫ম ব্যক্তি হিসেবে বর্তমানে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
গত ৬ জানুয়ারি নিজামীর ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। সে হিসাবে প্রায় দুইমাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী এপ্রিল মাসে শুরু হতে যাওয়া সুপ্রিমকোর্টের অবকাশকালীন ছুটির আগেই নিজামীর ফাঁসির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হতে পারে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর আসামি রায় পর্যালোচনার আবেদন করতে পারবেন। এ বিষয়ে নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, রায় পর্যালোচনা করে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
তিনি বলেন, ‘আমার ক্লায়েন্ট নিজামী সাহেব যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই ব্যবস্থা নেব।’
মীর কাসেম : জামায়াতের অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত দলটির প্রভাবশালী নেতা মীর কাসেম হলেন ৭ম ব্যক্তি, মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে আপিল বিভাগ যার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। আগামী ৮ মার্চ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মীর কাসেম আলীর রায় ঘোষণা করবেন।
নিজামীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মীর কাসেমের অপরাধ প্রমাণের জন্য কোনো তথ্য-প্রমাণ রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি। তারা আশা করছেন, মীর কাসেম আলী বেকসুর খালাস পাবেন।
অপরদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, জসিম, টুনটু সেন ও রঞ্জিত দাসকে হত্যা করে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়ার অপরাধে ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে যে রায় দিয়েছেন, আপিলে তা বহাল রাখার আরজি জানিয়েছেন।
এর আগে আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ছয়টি রায়ের মধ্যে চারটিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি হয়েছে। আপিল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সেই রায়ের রিভিউ এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। অপরদিকে আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ ছাড়া শুনানি চলাকালে জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন
ময়মনসিংহে ওসি-এসপি’র বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর
সরকারি দায়-দায়িত্ব ও কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথবিস্তারিত পড়ুন
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণের সাথে রায়েছে বিচার বিভাগ
দেশের মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিচার বিভাগ জনগণের সঙ্গে আছেবিস্তারিত পড়ুন