ছোট ভাইকে সতর্ক করে নিজেই মৃত্যুর মুখে খাদিজা !
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের পাশবিক নির্যাতনের শিকার খাদিজা আক্তার প্রতিদিন ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে কলেজে যেতেন। গত সোমবার সকালে বোনকে পরীক্ষার হলে দিতে যায় নূর হোসেন। তখন স্নেহের ছোট ভাইকে সাবধানে বাসায় যাওয়ার কথা বলেছিলেন খাদিজা। ছোট ভাইকে সাবধানে বাড়ি ফিরতে বললেও তিনি আর বাড়ি ফিরতে পারেননি। তার ঠিকানা হয়েছে হাসপাতাল।
তখন ছোট ভাই নূর হোসেনকে সতর্ক করে খাদিজা বলেছিলেন, ‘ভাই রাস্তা দেখে শুনে পার হইস, খুব সাবধানে বাসায় পোঁছাস।’ কিন্তু পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার পর আমার বোনের ওপর এমন বর্বোরোচিত ঘটনা ঘটতে পারে- এ ছিল আমাদের কল্পনার বাইরে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বোনের নির্মম পরিণতির কথা সংবাদমাধ্যমকে এভাবেই বলছিলেন নূর হোসেন।
নূর হোসেন বলেন, ‘আমার বিপদের কথা চিন্তা করে সে নিজেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। যদি জানতে পারতাম সেদিন তার জন্য এতো বড় বিপদ অপেক্ষা করছে তাহলে আমি বোনকে ছেড়ে একা বাসায় আসতাম? আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও তাকে রক্ষা করতাম। এ কষ্টের স্মৃতি সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। আমি নিজকে কখনো ক্ষমা করতে পারব না। কেন আমি সেদিন বাসায় চলে আসলাম?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মাথায় এখন কে স্নেহের পরশে হাত বুলিয়ে বলবে, মন দিয়ে পড়াশোনা করতে। রাত জেগে বেশি পড়াশোনার দরকার নেই শরীর খারাপ হবে বলে কে সতর্ক করবে?’
নূর হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বোনের অতীত স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে চাচাতো বোনের জন্মদিনে আমার বোনটি কতই না আনন্দ করেছিল। জন্মদিনে সে যে কত প্রাণবন্ত ছিল তা বলে বোঝাতে পারব না। অথচ আজ সে নিরব-নিথর হয়ে হাসপাতালে শুয়ে আছে।’
খাদিজার চাচাতো ভাই ছালেহ আহমেদ বলেন, ‘খাদিজা আপু আর আমি প্রায় সমবয়সী। তাই বন্ধুর মতোই প্রতিদিন আড্ডা দিতাম। অবসর সময়টুকু খুঁনটুসি দিয়েই কাটাতাম অলস সময়। সেদিন পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে সকাল বেলায় নিজ হাতে আমাকে ভাত খাইয়ে দিয়েছিল। তখন সে মশকরা করে আমাকে বলেছিল, ‘‘তুই অনেক মুটো হয়ে যাচ্ছিস, এখন থেকে খাবার কম খাবি।’’’
সালেহ আহমেদ কথাগুলো বলে নিরব হয়ে যান। নিজকে কোনো মতে সামাল দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বোনটা এতো বড় বিপদে পড়বে জানলে পরীক্ষা দিতে যেতে দিতাম না। আজ মৃত্যু তাকে হাতছানি দিচ্ছে।’
যে নরপশুর জন্য আমার বোনের এ অবস্থা তার উপযুক্ত বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই আমার বোনটার জন্য দোয়া করবেন যেন সে সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।’
সোমবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে সিলেট এমসি কলেজ থেকে পরীক্ষা শেষে ফেরার সময় কলেজ ক্যাম্পাসে শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাপদক বদরুল আলম চাপাতি দিয়ে খাদিজা আক্তার নার্গিসকে হত্যার চেষ্টা চালায়।
তাকে দ্রুত উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়। খাদিজা এখন স্কয়ার হাসপাতালের নিউরোসার্জন ডা. এম এ রেজাউস সাত্তারের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। মস্তিষ্কে মারাত্মক জখমের কারণে তার বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সিলেটে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
দ্বিতীয় দফার বন্যায় সিলেট অঞ্চলে সাত লক্ষাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দি।বিস্তারিত পড়ুন
সিলেটে ৯ ঘণ্টা পর রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক
চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফেঞ্চুগঞ্জে দুটি বগি লাইনচ্যুতবিস্তারিত পড়ুন
সিলেট বিভাগের বন্যা ভয়ঙ্কর রুপ নিচ্ছে
গত কয়েকদিনের অবিরত হালকা ও ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি এবং ভারতবিস্তারিত পড়ুন