ছয় তলা থেকে ফেলা দেওয়া সেই সন্তানকে কাছে পেতে ব্যাকুল মা
ছয় তলা থেকে নবজাতককে ফেলা দেওয়ার পর এখন সেই সন্তানকে কাছে পেতে ব্যাকুল মা বিউটি আক্তার। সন্তানকে কাছে পেতে অধীর আগ্রহে আছেন তিনি। বাম হাত ভেঙে গেলেও নবজাতক ছেলেটি সুস্থ আছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনের ছয় থেকে সোমবার সকালে জন্মের পরই নবজাতককে ফেলে দেয় মা বিউটি আক্তার। দুলাভাইয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের ফলে জন্ম হয় শিশুটির। বিউটি ওই বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কয়েক মাস আগে কুমিল্লায় বড় বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়ে দুলাভাই নীরবের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে বিউটি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বেইলি রোডের ওই বাসায় একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। জানাজানি হওয়ার ভয়ে নবজাতককে ছয় তলার ওপর থেকে নিচে ফেলে দেয়।
সরেজমিন মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ানস্টপ ক্রাইসিসের (ওসিসি) বেডে মা বিউটি আক্তার শুয়ে আছেন। উপরের দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর উঠে বসেন। বিউটি বলেন, সন্তান প্রসবের কিছুদিন আগে তার ব্যথা ওঠে। তখন গোপনে পরীক্ষা করে গর্ভে বাচ্চার অস্তিত্ব জানতে পারেন। এ কথা বাড়ির গৃহকর্ত্রীকে জানান। এর আগে ওই দুলাভাইকে বলা হলে তিনি গর্ভপাত ঘটানোর পরামর্শ দেন। আর গৃহকর্ত্রী তাকে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে বলেন। গর্ভপাত ঘটানোর পরিকল্পনা তারও ছিল। কিন্তু সোমবার ভোরে হঠাৎ করে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন এবং সন্তান প্রসব করেন। এ খবর সবাই জানার আগে সন্তানকে ফেলে দেন।
এক প্রশ্নে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিউটি বলেন, ওই সন্তানের পিতৃ পরিচয় থাকবে না। সমাজে নিজে কলঙ্কিত হবে। এ ছাড়া বোনের সংসার, ভাগ্নে-ভাগ্নির কথা ভেবে সন্তানকে ৬ তলা থেকে ফেলে দেন। যা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমার সন্তান আমার পরিচয়ে বড় হবে। আমিই তার সবকিছুর দায়িত্ব নেব। আমি আমার সন্তানকে চাই।’
ওসিসির দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক বিলকিস বেগম জানান, ওই মেয়ের (বিউটির) বয়স এখনো ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি। তার আগেই তাকে সন্তান ধারণ করতে হয়েছে। এ কারণে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সে যদি চাই অবশ্যই নিয়মমাফিক সন্তান ফিরে পাবে। সন্তানের জন্য মায়ের কোলের চেয়ে নিরাপদ স্থান নেই। এ জন্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বিউটির পরিবারের কেউ গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত না আসায় তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
আদ্-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ওই নবজাতক। তাকে নিবীড় পরিচর্চা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। ডা. শিউলি তাকে দেখভাল করছেন। তিনি বলেন, তার বাম হাতে জখম আছে। ভেঙেও গেছে। হাতের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তবে সে শঙ্কামুক্ত। মায়ের দুধ পেলে নবজাতক দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবে।
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নেত্রী অ্যাডভোকেট তাওহিদা বেগম বলেন, সন্তানকে ফেলে দিয়ে হত্যা চেষ্টার অপরাধে মায়ের বিচার হতে পারে। কিন্তু কেন সে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো তা আগে বুঝতে হবে। কেননা পিতাহীন ওই শিশুর ভরণপোষণ তার পক্ষে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাছাড়া সামাজিক অবস্থাও আছে। এ কারণে রাষ্ট্রকে এ ধরনের শিশুর ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে কোনো নারী যে সন্তান সম্ভবা, তা তাকে বুঝতে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
বেইলি রোডের পিঠা ঘরের সামনে পরিষ্কার করতে আসে সুইপাররা কিছু একটি নড়াচড়া করতে দেখতে পেয়ে রমনা থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে রমনা থানার এসআই আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন এবং কাপড়ে মোড়ানো নবজাতককে উদ্ধার করেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রাজধানীতে আনসার ব্যাটালিয়ন মোতায়েন
ঢাকা মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৬ প্লাটুন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোতায়েনবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ আহত ২৩
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী, মহিলা আওয়ামী লীগবিস্তারিত পড়ুন