জুয়েল আইচ : বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করছে
কষ্টের ভার এই মুহুর্তে আর বইতে পারছি না। গতরাতে ঘুমাতেও পারিনি। জানি না, সবার সঙ্গে শেয়ার করা যায় কি না। তাতে যন্ত্রণার তীব্রতা কিছুটা হালকা হতেও পারে। এটুকুই আশা ।
সিঙ্গাপুরে আমার ঘনিষ্টতম বন্ধুর নাম পেই সেক্ লিয়ং। অসাধারণ জাদুশিল্পী। ওঁর ভালবাসার তীব্রতা কল্পনাতীত। তাঁর দাবী উপেক্ষা করার মত নিষ্ঠুরতা আমি কখনোই করতে পারিনি।
তাঁর একটা দাবী:
— জুয়েল, তুমি পৃথিবীর যেখানেই যাও, অসম্ভব না হলে সিঙ্গাপুরে ট্রানজিটের ব্যবস্থা রেখে প্লেনের টিকেট কাটবে।
— কেন?
— আমি তোমাকে এয়ারপোর্ট থেকে আমার বাড়ীতে নিয়ে আসব। আমাদের সঙ্গে সাতদিন কাটিয়ে তুমি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, জাপান, আমেরিকা যেখানে খুশি চলে যাবে।
সত্যিকার ভালোবাসার এ আব্দার আমি কখনোই উপেক্ষা করতে পারিনি।
তাঁর ছোট ছেলের নাম জেরেমি পেই। একটি দেবশিশু। সে অনায়াসে আমায় দখল করে ফেলল।
আমি দাঁড়িয়ে থাকলে সে আপ্রাণ চেষ্টায় আমার গা বেয়ে কাঁধে উঠে উল্লাসে দুলতে থাকে। বসা থাকলে কোলের মধ্যে ঢুকে জাদু শেখে। অমন জাদুপাগল শিশু আমি আর দেখিনি।
একটু একটু করে সে বড় হতে থাকে আর অনেক অনেক বড় জাদুশিল্পী হতে থাকে। ওর খ্যাতি গোটা সিঙ্গাপুরে ছড়িয়ে পড়ে।
শিল্পী এবং আবিষ্কারক হিসেবে এশিয়া ছাড়িয়ে সে বিশ্ব জয় করে। তার আবিস্কৃত অনেকগুলো জাদু আজ এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আমেরিকার সেরা জাদুশিল্পীদের হাতে হাতে।
ওর আবিস্কৃত একটা জাদু আমি আমার স্টেজ শো-এ মহা আনন্দে নিয়মিত দেখাই। সেও গৌরবের সঙ্গে আমাকে তার গুরু হিসেবে শ্রদ্ধা জানায়। দিন আমাদের খুবই ভাল কাটছিল।
একদিন একটা দ্রুতগামী বিশাল ট্রাক ব্রেক ফেল করে ওর ছোট্ট গাড়িটাকে পিছন থেকে সজোরে ধাক্কা মারে। সামনের বাসের মাঝখানে পড়ে ওর গাড়িটা কুচিমুচি হয়ে যায়। যাত্রীবাহী বাসটির আটজন যাত্রী সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। জেরেমির বাঁচার তো প্রশ্নই ওঠে না।
হাসপাতালের লাশকাটা ঘর। সুরতহালের সময় একজন ডাক্তার বেঁকে বসলেন। বললেন,
— একটা লাশ পুরোপুরি মরতে আরো একটু সময় লাগবে। নিশ্চিত মৃত না হলে আমি কাউকে কাটতে পারব না।
লাশটিকে পুরোপুরি মরার জন্য একটু সরিয়ে রাখা হল। বেশ কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার আবার এলেন। লাশের গা তখনও সামান্য গরম। ডাক্তার এবার ভিন্ন সুর ধরেছেন। ছিন্নভিন্ন মাংসের তালটাকে তিনি জুড়ে দেখতে চান, বাঁচানো যায় কিনা।
দ্রুত অক্সিজেন, লোহার রড, নাট-বল্টু, স্ট্যাপলার, সুঁচ-সূতো দিয়ে লাশটিকে মেরামত করার চেষ্টা করা হল। আমার জেরেমি খুব ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পেল।
কিন্তু এ বাঁচা মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ। কষ্টে সে বোধ হয় পাগল হয়ে যাবে। ধরা পড়ল এগ্রেসিভ ব্রেইন ক্যান্সার।
এদিকে স্ট্রোকে মারা গেলেন প্রাণপ্রিয় বাবা পেই সেক্ লিয়ং। জেরেমির মনে হল, আত্মহত্যা করে ফেললেই তো সব যন্ত্রণা শেষ হয়ে যায়।
আমি সাধ্যমত অনুপ্রেরণা যোগাতে লাগলাম। নানাভাবে ওকে বুঝিয়ে বলতে লাগলাম,
— এই মহা-যন্ত্রণার মধ্যেও আমি জোর দিয়ে বলছি, জীবন যখন যাকে যা’দেবে, তাই দুহাত পেতে নিতে হবে। এবার শুরু হল তোমার নতুন করে বাঁচার যুদ্ধ। সে যুদ্ধে তোমাকে জয়ী হতেই হবে।
ক্রমে ক্রমে সে আমার পরামর্শ গ্রহণ করতে শুরু করল। ভয়াবহ ডিপ্রেশন কাটিয়ে সে হয়ে উঠলো প্রচন্ড দুর্দমনীয়। চলতে লাগল কিমো আর রেডিও থেরাপির ভয়ংকর শাস্তি।
এতসব নিয়েও সে নতুন নতুন জাদু আবিষ্কার করতে লাগল। সারা বিশ্বময় বড় বড় ম্যাজিক কনভেনশন গুলোতে হাজার হাজার ম্যাজিশিয়ানদের সামনে মহা দাপটে জাদু দেখিয়ে চলল। চালালো তার জ্ঞানগর্ভ ধারাবাহিক বক্তৃতা। লিখে ফেলল আলোড়ন জাগানো বই,’সিক্সটি ইয়ার ওল্ড ম্যাজিশিয়ান’।
সিঙ্গাপুরের শ্রেষ্ঠ পাঁচ জন ব্রেইন টিউমার সার্জন একসাথে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই সার্জারি খুবই জটিল। অস্ট্রেলিয়ার শ্রেষ্ঠতম সার্জনকে রাজি করানো গেলে পাঁচ জন মিলে তাঁর নেতৃত্বে এই অপারেশন করাই হবে যৌক্তিক।
আজ পনেরোই অক্টোবর। জেরেমি এখন অপারেশন থিয়েটারে। আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারছিনা। বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করছে।
ছবিটি দু’মাস আগে লাস ভেগাসের ‘ম্যাজিক লাইভ’ কনভেনশনে তোলা। কী নির্মল আন্তরিক হাসি!
যাঁরা হাসতে জানে তারা হাজার কষ্টের মধ্যেও হাসতে পারে।
My dear Jeremy Pei, you must have to win. That’ll be your greatest MAGIC.
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন