ঝিনাইদহে শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষকরা প্রাথমিক বিদ্যালয় শ্লিপের ৪০ হাজার টাকা লুটপাট করছে !

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহে শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্লিপের টাকা লুটপাট করছে বলে সুশিলরা অভিযোগ করেছেন। বর্তমান সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাড়ালেও থেমে নেই তাদের দুর্নীতি। সরেজমিনে ঘুরে আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হল।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সীতারাম পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা একই রকম। দেখানো হয়েছে মা সমাবেশ কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেল মা সমাবেশ হয়নি। এমন কি শ্লিপের টাকা কোন তারিখে এসেছে তা সহকারী শিক্ষকের জানা নাই। প্রধান শিক্ষক না থাকাতে সহকারী শিক্ষকেরা কিছুই বলতে পারে না।
চরম খারাপ অবস্থা দেখা গেল চন্ডিপুর বাজারে অবস্থিত কুঠিদুর্গা পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে গেলে প্রধান শিক্ষক তার বিদ্যালয়ে সাংবাদিকের আগমনে অপ্র¯ুÍত হয়ে শ্লিপের টাকা হিসাবের তথ্য দিতে প্রথমে অস্বীকার করে পরে উপজেলা শিক্ষা অফিসের এটিওর নিকট ফোন করে হিসাব দেখাতে রাজি হলেও, যে হিসাব তিনি দেখালেন তাতে দেখা যায় ড্রামসেটের মূল্য ৭ হাজার টাকা, আলমারি মেরামত ১৫ হাজার টাকা, তোয়ালে ক্রয় ২৫০০ টাকা, বেঞ্চ মেরামত, মা সমাবেশ ৩৫০০ টাকা, প্রাক প্রাথমিকের পাটি ক্রয় সহ ব্যানার বাবদ খরচ হয়েছে ৫০০০ টাকা বলে জানান ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বছর ক্রয় কৃত পুরান ড্রাম সেট , আলমারিতে কয়েকটি শুধু নতুন তালা ও একটি র্যাক লাগান , অন্য একজন সহকারী শিক্ষকের সাথে গোপনে কথা বলে জানা গেল যে আদৌও মা সমাবেশ হয়নি, প্রাক প্রাথমিকের গত বছরের পাটি ছেড়া মেঝেতে বিছান আছে, বেঞ্চ মেরামতের কোন নমুনা পাওয়া গেল না।
এ ভাবেই ৪৫ হাজার টাকার খরচ দেখান হয়েছে। বিভিন্ন দোকান থেকে সংগ্রহ কৃত ভাউচারে প্রায় একই হাতের লেখা পাওয়া গেল। বাজার মুল্যের সাথে ভাউচারের টাকার মুল্যের মিল না থাকার ব্যাপারের কুঠি দুর্গাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষীকা শিরিন আখতার বানু বলেন, সরকার ভ্যাট বাবদ যে টাকা কেটে নিচ্ছে তা হিসাবে দেখানো যাবে না। তাই সব মালামালের মূল্য ভাউচারে বেশী করে লিখে পুরন করা হয়েছে।
রঘুনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বসির হোসেনের নিকট শ্লিপের টাকার হিসাব জানতে চাইলে, তিনি যে হিসাব দেন তাতে সে যে মাসে শ্লিপের টাকা পেয়েছে তার প্রায় ১ মাস আগে থেকে খরচ করছে। প্রতিটা ভাউচারেরই হাতের লেখা এক।
গান্না গ্রামের শিশু নিকেতন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা আরও শোচনীয় ল্যাট্রিনের জন্য ১৮৩০০ টাকা খরচের নামে শুধু পুরান ল্যাট্রিনের চুনকাম করে, বাকি টাকা পুরাটায় গায়েব হয়ে গেছে। প্রতিটা দোকানের ভাউচার একই হাতের লেখা এবং অসংখ্য জাইগায় কাটাকাটি। ৩টি ফ্যান, একটি ড্রাম সেট, একটি সাউন্ড বক্স ও চেয়ার মেরামত করে পুরা ৪০ হাজার টাকা শেষ।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আপনারা সবই বোঝেন আমরা কি করব ? এই ব্যাপারে যাই বলেন না কেন আমরা কিছুই বলতে পারব না। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এটিএ কামাল সাহেব ল্যাট্রিন মেরামত করার টাকা উঠিয়ে নিয়েছে।
এছাড়া বড় গড়িয়ালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাউন্ড বক্স ব্যাতিত সকল মালামাল পুরান। কিন্তু স্কুল প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষকেরা কোন ভাউচারের হিসাব দেখাতে পারেনি। একটি রুমে অনেক গুলি ভাঙ্গাবেঞ্চ জমাকরা দেখতে পাওয়া যায়। শিক্ষকেরা বলেছেন, ছাত্র ছাত্রীদের কিছু খাতা পেন্সিল বিতরণ করা হয়েছে। দেখাগেছে, শুধু মাত্র দুলনার একটি আংটা মেরামত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ফোনে প্রধান শিক্ষীকা রেবেকার সাথে কথা হলে তিনি বলেন শ্লিপের টাকা খরচের সমস্ত ভাইচার আছে।
ঝিনাইদহ শহরের পাশে ধোপা ঘাটা ব্রিজের উত্তর পাশে অবস্থিত খান এ খোদা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষীকা উম্মে আইমা খরচের যে ভাউচার দেখিয়েছেন তার সব গুলো ভাউচারই একই হাতের লেখা । একই হাতের লেখা দেখে বুঝা যায় ঘটনা কি হয়েছে ? উদয়পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামের খরচের টাকার কোন হিসাবই নেই। সহকারী শিক্ষকদের শ্লিপের টাকা ব্যাপারে কথা বার্তা এলোমেলো।
কলমখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ঝিনাইদহ প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির নেতা সাংবাদিকদের আগমনে বিরক্ত হয়ে সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন যে, তিনি কোন তথ্য দিবেন না অফিসের নিষেধ আছে।
ওখানেই পাওয়া গেল পন্ডিতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু জাফরকে। তিনিও জানালেন একই কথা। তবে জানা গেছে, কলমনখালী, পন্ডিতপুর স্কুলের পুরা ৪০ হাজার টাকায় সবাই মিলে ভাগযোগ করে নিয়াছে। উপস্থিত পন্ডিত পুর স্কুলের এক সহকারী শিক্ষক ইতিমধ্যে এক নেতার নিকট ফোন করে সাংবাদিকদের তথ্য নেওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ জানান।
চেউনিয়া ও খেদাপাড়া সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও একই রকম। সাউন্ড বক্স, আলমারি, পতাকার স্ট্যান্ড, ছেলে মেয়েদের খাতা কলম দিয়ে হিসাব শেষ। তাছাড়া শিক্ষা অফিসকে ৫০০০ টাকা ও সরকারের ভ্যাট বাবদ ২০০০ টাকা দিতে হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষীকা শাহানুর জানান।
ইতিমধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসের দুর্নীতি ও কুকৃর্তি যাতে কেউ না জানতে পারে, সেজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিষেধ করেছে সাংবাদিকদের কোন প্রকার তথ্য না দেওয়ার জন্য। প্রতিটি স্কুলে শ্লিপের টাকা দুর্নীতির সাথে জড়িত হাসান মাছুদ ও কামাল হোসেনের নামের সহকারী শিক্ষা অফিসার। শুধু ভাউচার গুল অডিট করলে সব দুর্নিতি বের হয়ে আসবে।
এ প্রসঙ্গে সহকারী শিক্ষা অফিসার কামাল হোসেনের তার দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার কথা নাকচ করে বলেন, এসব কথা মিথ্যা। আমি কোন ঘুষ দুর্নীতির সাথে জড়িত না।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড শাহীনকে ধরতে ডিবির পরিকল্পনা
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ধারণা, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমবিস্তারিত পড়ুন

তৃতীয়বার আনারকে মনোনয়ন দিয়েছি জনপ্রিয়তা দেখে: কাদের
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার) স্বর্ণ চোরাচালানকারীবিস্তারিত পড়ুন

মাস্টারমাইন্ড শাহীনের অগাধ রহস্য
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতের কলকাতায় হত্যাকাণ্ডেবিস্তারিত পড়ুন