টিসা ইভানসঃ নাক ছাড়া জন্ম নিয়েছিল যে শিশু!
ভাবুন তো একজন মানুষ, যার কোন নাক নেই সে দিব্যি হেসে খেলে বেড়াচ্ছে। কিরকম অদ্ভুত অবিশাস্য না ব্যাপারটা? আসলেই অবিশ্বাস্য। তবে অবিশ্বাস্য হলেও এরকমই এক শিশুর নাম টিসা ইভানস। টিসা ইভানসের জন্ম আয়ারল্যান্ডে। গ্র্যানি ইভানস এবং নাথান ইভানস দম্পতির ঘরে ২০১৪ সালে জন্ম নেয় টিসা ইভানস।
জন্ম থেকেই টিসা ইভানসের নাক নেই। এর জন্য আসলে দায়ী তাদের মা বাবার দুটো লিথাল জিন। এই সমস্যাটাকে মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় “complete congenital arhinia”। জন্মের সময় টিসার অবস্থা এতই খারাপ চ্ছিল যে তাকে পাচ সপ্তাহ ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়। ডাক্তাররাই সন্দিহান ছিলেন এই মেয়ে বেচে থাকবেন কিনা এই নিয়ে।
নাক নেই তাহলে মেয়েটা সে নিঃশ্বাস নেয় কিভাবে? আসলে টেরেসা স্বাভাবিক মানুষের মত শ্বাস গ্রহণ করতে পারে না। এর জন্য টিসাকে গলায় সবসময় কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র ঝুলিয়ে রাখতে হয়। গ্র্যানি এবং নাথান (টিসার মা বাবা) টিসার জন্মের আগে থেকেই জানতেন যে তাদের সন্তানের নাক থাকবে না। টিসা যখন তার মায়ের গর্ভে, তখনই ডাক্তারের কাছে রুটিন চেকাপের সময়ই ধরা পরে ব্যাপারটা।
আর একারণেই জন্মের পর টিসাকে বাচিয়ে রাখা সম্ভব হয়। টিসার জন্মের সময় আগে থেকেই কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র প্রস্তুত রাখা হয়। জন্মের পরপরই ওটা তার গলায় বসিয়ে দেয়া হয়। আমৃত্যু এই যন্ত্রটাকে গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। শ্বাস নেয়ার ব্যাবস্থা তো হল। কিন্ত গন্ধ বা ঘ্রাণ নেয়ার ব্যাবস্থা?
দুঃখজনক হলেও সত্যি মিষ্টি চেহারার এই ছোট্ট পরীর মত মেয়েটার ঘ্রাণ বা গন্ধ বোঝার কোন ক্ষমতা নেই। এজন্য অনেক সমস্যাও হয় ওর। শুধু সমস্যা নয় আশেপাশের বিপদগুলোও ঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারে না সে। পচা খাবার, আগুনের ধোয়ার গন্ধ আশেপাসেহ পুড়তে থাকা কোন বস্তুর পোড়া পোড়া গন্ধ কোনটাই শনাক্ত করার ক্ষমতা নেই ছোট্ট মেয়েটির।
অন্য বাচ্চারা যেমন গন্ধ শুকে যাচাই বাছাই করতে পারে কোনটি মুখে দেয়া উচিত আর কোনটি নয়। কিন্ত টিসার পক্ষে এটিও সম্ভব হয় না। এমনকি নাক না থাকার কারণে খাবারের স্বাদও ওর পক্ষে ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হয় না। এমনকি মেয়েটা হাচিও দিতে পারে না।
একবার টিসার বাবা নাথান শুনতে পান টিসা হাচির মত শব্দ করছে। পরে আসলে তিনি খুজে পান মেয়েটার বুকের ভেতর থেকে শব্দটা আসছে। ভয় পেয়ে তখনই ছুটে গেলেন ডাক্তারের কাছে।
এত কিছুর মাঝেও টিসা আর পাচটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতই বেড়ে উঠছে। সম্প্রতি ২০১৫ সালে একটা নতুন ধরণের অপারেশনের মাধ্যমে টিসার মুখে ত্রিমাত্রিক নাক বসানো হয়েছে। অপারেশন করা হয় লন্ডনের গ্রেট ওরমন্ড স্ট্রীট হসপিটালে।
সেখানে প্রথমে টিসার স্কালের মাপ নেয়া হয়। তারপর ওটার ত্রিমাত্রিক গঠন তৈরী করা হয়। তারপর সেটার অনুপাতে নাকের ত্রিমাত্রিক গঠন তৈরি করা হয়। তারপর সেটাকে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে টিসার মুখমন্ডলে স্থাপন করা হয়।
এখন টিসার বয়স চার। কিছুদিনের মধ্যেই টিসাকে স্কুলে ভর্তির চিন্তা ভাবনা করছেন টিসার মা বাবা। পরিবারে টিসার আরও এক ভাই এবং এক বোন রয়েছে। টিসা তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। টিসার সমস্যাটা বেশ অদ্ভুত এবং বিরল। তারপরও ছোট্ট সুন্দর মেয়েটা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠুক এমনটাই প্রত্যাশা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন