ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: জাতির ভরসা, সাহস অার শক্তির আশ্রম

দীর্ঘ ছুটি শেষ। খুলেছে প্রাণের ক্যাম্পাস। ফিরতে শুরু করেছে ছাত্রছাত্রীরা। সবুজের প্রাণ মিলতে শুরু করেছে আবারও। টিএসসি, কলা ভবন, অপরাজেয় বাংলা, স্মৃতি চিরন্তন, মধুর ক্যান্টিনের দীর্ঘ এক মাস ১০ দিনের শূন্যতা ঘুচাতে শুরু করেছে। জমে উঠছে আড্ডা, মাস্তি, রাজনীতি, ক্লাস, পড়ালেখা। সবুজ ক্যাম্পাসের পরতে পরতে এখন নতুন পাতা। চারিদিকে সুবাতাস, সুশোভিত পরিবেশ, নতুন সুর, নতুন গান। নবীন আর প্রবীণের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ।
গত ১লা জুন থেকে শুরু হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ও পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ হয় ৯ জুলাই। তবে এ ছুটির মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। ১৯২১ সালের ১ জুলাই এসে মিলেছে ২০১৭ সালের ১ জুলাই। দীর্ঘ এই যুগান্তরে দেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ রচনা করেছে হাজারো ইতিহাস। জাতিকে উপহার দিয়েছে লাখো আলোকিত মানুষ। সুদীর্ঘ ইতিহাসের পটভূমিতে এই বিদ্যাপীঠের স্বার্থকতার পাল্লাটাই ভারি। টুকিটাকি কিছু অমিল ঘটনা বা রটনার কথা বাদ দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই জাতির কল্যাণঘর, ভরসা, সাহস ও শক্তির আশ্রম।
মহান এই বিদ্যাপীঠ ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে শতবর্ষের দিকে। ইতিহাসের ধারাপাতে তুলছে নোঙর। শতবর্ষকে কেন্দ্র করে এখানকার ছাত্রছাত্রীদের আশা-প্রত্যাশার যেন শেষ নেই। শতবর্ষে ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়কে কেমন দেখতে চায় বা তাদের প্রত্যাশার পারদ কোন পর্যায়ে তা জানতে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয় চ্যানেল আই অনলাইন।
তাদের অনুভূতির পার্থক্য পাওয়া গেলো। কারো স্বপ্ন আকাশ চুম্বি, কারো একদম ছোট্ট চাওয়া। তবে সবার চাওয়া আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মাহমুদা ফাতেমার কথাই যেমন ধরা যাক। তিনি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার চেয়ে একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যাওয়া পছন্দ করেন বেশি। বলছিলেন, ‘এতো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পায় আমি আসলে কখনোই বিশ্বাসী না। বাস্তবধর্মী পরিকল্পনার দিকেই আমার গুরুত্ব বেশি। তারপরও যদি বলতে হয় একশ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন অবস্থানে দেখতে চাই, যেখানে বিদ্যাপীঠটি নিজের আদর্শকে বাস্তবায়ন করবে।
মাহমুদার এই বক্তব্যের অন্তরালে বিশাল প্রত্যাশার পারদ ফুটে উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে গেলে তা বিশাল এক পাহাড় অতিক্রম করতে হবে। তখন বিশ্বের অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয়গেুলো যে ধারায় চলে সেদিকেই সত্যিকার অর্থে নজর দিতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে।
এখানেই মিলছে মাইক্রোবায়োলজির শিক্ষার্থী সাকিবুর রাহাতের প্রত্যাশার মাত্রা। শতবর্ষের মধ্যে প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘গবেষণার র্যাংকিংয়ে বিশ্বের সেরা বিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে দেখতে চাই’। সাকিবেরে এই স্বপ্নটি বিশাল। তবে এটা সত্য যে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজের কথাই বলছেন তিনি।
সাকিবের ভরাট কণ্ঠস্বরের স্পর্শ পাওয়া গেলো সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী সায়মা তিথির বক্তব্যে। তিনি আরো কয়েকটি প্রত্যাশা যুক্ত করেছেন এভাবে- ‘আগামী ১শ’ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ১-৫০ বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে দেখতে চাই। গবেষণা, ই-লাইব্রেরি, মানসম্মত লেখাপড়ায় সর্বাগ্রে দেখতে চাই। কর্পোরেট সেক্টরে অনেক সামনে দেখতে চাই বিশ্বের বর্তমান টপ র্যাংকিংয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতোই।
“শত বছরে আমি ঢাবিকে আরো উন্নত দেখতে চাই শিক্ষায়, জ্ঞানে-গুণে এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাবি গবেষণার দিক থেকে একধাপ এগিয়ে যাক নতুন সম্ভাবনার মাধ্যমে’- মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মাহফুজা মার্জিয়া সাদিয়ার প্রত্যাশাও প্রায় মিলে যাচ্ছে।
মানুষের স্বপ্নে প্রায়ই মিলামিল হয়ে যায়। আর তা যদি হয় একই পরিবার, একই ঘর কিংবা একই বিদ্যাপীঠ, তার অগ্রগতির প্রত্যাশায় তো মিল থাকাটাই স্বাভাবিক।
তবে ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী অনন্যা ইশরাতের চাওয়াটা একটু ব্যতিমধর্মী। শত বর্ষকে সামনে রেখে তিনি চান একটি পরিচ্ছন্ন, মনোরম পরিবেশের জাঁকজমক সাজে সজ্জ্তি ক্যাম্পাস। যেখানে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ হবে। ক্যাম্পাস সবসময় থাকবে মনোরম। বাজারের পরিবেশ তৈরি হবে না কোথাও। যেখানে মিলনমেলা বসবে সত্যিকার শিক্ষিতদের, জ্ঞানীদের, উৎসবে, আনন্দে ভরপুর থাকবে পুরো সবুজ আঙ্গিনা।
‘শতবর্ষকে সামনে রেখে আমি চাই ঢাবির মান উন্নয়ন। কারো কোন অভিযোগ বা সমস্যা থাকবে না এমন ধরনের উন্নয়ন’- অনন্যার প্রত্যাশা।
অনন্যার এই প্রত্যাশা কতোটা পূরণ হবে তা সময়েই বলে দিবে। তবে ‘কারো কোন অভিযোগহীন উন্নয়ন এই সভ্যতায় কতোটা সম্ভব তা আদৌ বলা মুশকিল। তবুও কিছু উন্নয়ন থাকে যেখানে তুলনামূলক সন্তুষ্টির জায়গাটা অক্ষত রাখা যায়।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও মূকাভিনেতা মীর লোকমান সেদিকেই নজর দিতে চান। তিনি ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে অনুভূতি ব্যক্ত করলেন।
বলছিলেন, ভাষা আন্দোলন সহ বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যদিয়ে একটি জাতি রাষ্ট্র গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু যে সময়টিতে এই বিদ্যাপীঠ একশ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছে সে সময় এসে একটি বিষয় ভুলে গেলে চলবে না যে, জাতির যেকোন ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালনকারী বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শুধুমাত্র ইতিহাস ঐতিহ্যের ওপর নির্ভর করলেই হবে না, বরং বর্তমান, তথ্য, প্রযুক্তি, গবেষণা এবং বিজ্ঞানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বের অপরাপর প্রথমসারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে।
“এর মধ্যদিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সত্যিকার অর্থেই আগামীতেও জাতির দিক নির্দেশক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।”
মীর লোকমানের প্রত্যাশা সকলের প্রত্যাশার সার্মমই বলা যায়। একথা নির্দিধায় বলা যায় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সদস্য প্রত্যাশা করে এই বিদ্যাপীঠ অতীতে, বর্তমানে যেমন জাতির দিকনির্দেশক, নেতৃত্বদানকারী হিসেবে ছিলেন, আছেন এবং আগামীতে তার অবস্থান সুদৃঢ় থাকবে এবং ভিতটাকে আরো মজবুত রাখবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

শেকৃবির ১২ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) “আওয়ামীপন্থি” ১২ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তবিস্তারিত পড়ুন

২৭তম বিসিএসে বঞ্চিত ১,১৩৭ জনের চাকরি ফেরত দিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ
১৭ বছর আগে ২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ১,১৩৭ জনের চাকরি ফেরতবিস্তারিত পড়ুন

এইচএসসির ফল প্রকাশ মঙ্গলবার, জানা যাবে যেভাবে
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করাবিস্তারিত পড়ুন