ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে এসে দুর্ঘটনা; বাঁচানো গেল না গর্ভের সন্তানটিকেও
মানুষের জীবন বাঁচাতে যে অ্যাম্বুলেন্স সারাক্ষণ ছুটে বেড়ায় সেই অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় প্রাণ গেল মা আমেনা বেগম সূর্যি ও তার গর্ভে থাকা ছয় মাসের শিশুটির। আর মাত্র মাস চারেক পরই শিশুটির থাকার কথা ছিল মায়ের কোলে। মায়ের গন্ধ মেখে তার বাহুতে তুলতুলে ছোট্ট দেহ নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর কথা। অথচ পৃথিবীর আলো দেখারই সুযোগ পেল না সে। অদক্ষ চালকের কারণে মায়ের গর্ভেই মৃত্যু হল শিশুটির।
একই ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে লাশ হলেন মা গুলেনুর বেগম ও ছেলে সাকিব। তাদের সঙ্গে না ফেরার দেশে চলে গেছেন অজ্ঞাত আরেক ভিক্ষুক। তার বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর।
আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঢামেকের জরুরি বিভাগের গেটে ‘মানব সেবা’ নামে একটি অ্যাম্বুলেন্স (সিলেট ছ ৭১-০০৬৪) দ্রুত বেগে ধাক্কা দিয়ে কেড়ে নেয় তাদের তরতাজা জীবন। সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের আরও ছয়জন আহত হয়েছেন। আহতদের তিনজন ঢামেকের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। আর বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফিরে গেছেন।
এ ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সের চালকের সহকারী সোহেল শাহবাগ থানায় আটক রয়েছেন। ঘটনার পর থেকে চালক সোহাগ, অ্যাম্বুলেন্সের মালিক নাসির ও মাহফুজ পলাতক রয়েছেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালের আশপাশে কোনো অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্যান্ড থাকবে না। সব পরিষ্কার করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ঢামেক সূত্র জানায়, শনিবার সকালে চালক সোহাগ তার সহকারী সোহেলকে চানখারপুল থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি ঢামেকের জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে যেতে বলে। পরে সোহেল অ্যঅম্বুলেন্সটি নিয়ে দ্রুত গতিতে চালিয়ে জরুরি বিভাগে যাচ্ছিল। এসময় জরুরি বিভাগের গেটে চাপা পড়ে অজ্ঞাত এক ভিক্ষুক ও সাকিব নামের সাত বছরের এক শিশু ঘটনাস্থলেই মারা যান। এতে আহত হন ছয়জন।
আহত সাকিবের মা গুলেনুর বেগম বেলা পৌনে তিনটায় এবং আমেনা বেগম সূর্যি সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
অন্য আহতরা হলেন- আমেনা বেগম সূর্যির ছেলে সজিব, রমজান আলী, মৃত সাকিবের ছোট ভাই আকাশ, বাচ্চু মিয়া ও রিকশাচালক মাহতাব। এদের মধ্যে আকাশ, বাচ্চু মিয়া ও মাহতাব প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় মারাত্মকভাবে জখমপ্রাপ্ত হয়ে আমেনা বেগম সূর্যির গর্ভের ছয় মাসের অনাগত সন্তান মারা যায়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাজুয়ালটিতে অপারেশনের মাধ্যমে সেই মৃত সন্তান বের করেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. আশরাফ উদ্দিন খান বলেন, সূর্যির পেটের ছয় মাসের সন্তানটি এই দুর্ঘটনার কারণেই মারা গেছে।
জানা গেছে, সূর্যির স্বামী জাকির হোসেন একজন ট্রাকচালক। গত ২৫ অাগস্ট চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার দুদিন পরই ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন তিনি।
মৃত গুলেনুর বেগমের স্বামী ফেরদেৌস জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙাবালির বাইজদা এলাকায়। দুইদিন আগে তাদের গ্রামের বাড়িতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পেয়ে আহত হয় তার ছেলে সাকিব। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার সপরিবারে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে শ্যালক ফারুকের বাসায় ওঠেছিলেন তারা। সকালে ঢামেক হাসপাতালে আসলে তার স্ত্রী গুলেনুর ও ছেলে সাকিবকে চাপা দেয় অ্যাম্বুলেন্সটি। ঘটস্থলেই সাকিবের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলেনুরের মৃত্যু হয়। তাদের আরেক সন্তান আকাশও আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানতে চাইলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. খাজা আবদুল গফুর বলেন, দুর্ঘটনার পরই পুলিশ একজনকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা রবিবার আইনানুগ ব্যবস্থা নিব। আর হাসপাতালের আশপাশে বারবার অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্যান্ড তুলে দেই। তারপরও বসে। তা ধরে রাখার দায়িত্ব পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের। তারা কোনো উচ্ছেদ চালায় না।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রাজধানীতে আনসার ব্যাটালিয়ন মোতায়েন
ঢাকা মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৬ প্লাটুন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোতায়েনবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ আহত ২৩
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী, মহিলা আওয়ামী লীগবিস্তারিত পড়ুন