তরুণীদের কিরণমালা’ সারা-রা , তরুণদের পাগলু-২ দাবাং
তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সী ক্রেতার ভিড়ে জমে উঠেছে রাজধানীর ঈদের বাজার। নগরীর বিভিন্ন শপিংমল, শপিং কমপ্লেক্স ও মার্কেটে ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীরা ব্যস্ত হাল-ফ্যাশনের পোশাকের খোঁজে। এবারের ঈদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ যমুনা ফিউচার পার্ক। কেনাকাটা, বিনোদন আর ভোজন বিলাসিতা- এক ছাদের নিচে ভোক্তা-ক্রেতাকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দেয়ার এমন ব্যবস্থা দ্বিতীয়টি আর নেই বাংলাদেশে।
এশিয়ার বৃহত্তর আর পৃথিবীর তৃতীয় বৃহৎ এই শপিং কমপ্লেক্সে রয়েছে সেই ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, বড় মার্কেট মানেই অনেক সময়ে নিুমানের পণ্য গছিয়ে দেয়া কিংবা গলাকাটা দাম রাখার অভিযোগ। এ ধরনের গতানুগতিকতা থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম এই মার্কেট। মার্কেট কর্তৃপক্ষও এ দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন, যাতে কোনো ক্রেতা না ঠকে। আর এ কারণে রমজানের শুরু থেকেই ক্রেতাসাধারণের উপচেপড়া ভিড় যমুনা ফিউচার পার্কে। এছাড়া নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজাসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষণীয়।
গাউছিয়া মার্কেটের একটি দোকান। ২০-২৫ জন তরুণ-তরুণীর ভিড়। কেউ কাপড় দরদাম করছেন, কেউ বা দেখাদেখি। তাদের মধ্যে রায়েরবাগ থেকে আসা এক তরুণী নেটের ওপর তৈরি একটি জামা ওলটপালট করে দেখছেন। করছেন দরদাম। পছন্দ হতেই সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে জামাটি পরে ফেললেন। এরপর আয়নায় ঘুরেফিরে দেখছেন নিজেকে। দৃষ্টিনন্দন এই দৃশ্য বাকিদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
পোশাকটির নাম জানতে চাইলে বিপা ফ্যাশনের বিক্রয় সহকারী মো. জীবন জানালেন, ‘এটি সারা-রা’। এবারের ঈদবাজারের হিট পোশাক। ভারতীয় পাকিজা নেটের ওপর তৈরি এই পোশাকের বিশেষত্ব হল পুরো পোশাকে জরির এমব্রয়ডারির কাজ। ওপরে লম্বা কটি। তারপর জামা। জামার নিচে রয়েছে ফলস। সঙ্গে আছে স্কার্ট। এই পোশাকে একসঙ্গে সাধারণ জামা ও স্কার্ট দুটির মজাই মিলছে। তাই এটির প্রতি তরুণীদের বাড়তি ঝোঁক দেখা যাচ্ছে এবার।
শুধু তরুণীরাই নয়, তরুণরাও মশগুল কেনাকাটায়। নগরীর বিভিন্ন শপিংমল, শপিং কমপ্লেক্স ও মার্কেটে ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীরা ব্যস্ত হাল-ফ্যাশনের পোশাকের খোঁজে। রমজানের প্রথমদিকে কিছুটা অলস সময় কাটালেও মধ্য রমজানে এসে দোকানিদের এখন দারুণ ব্যস্ততা। এক মুহূর্ত ফুরসত নেই। দোকানিরা বলছেন, ইংরেজি মাসের শুরু হওয়ায় অনেকের হাতে বেতন এসেছে। তাই ক্রেতারা বাজারমুখী হয়েছেন। তাদের ধারণা, যারা বেতন পাননি, চলতি সপ্তাহে তাদের হাতেও বেতনের টাকা আসবে। তাই সামনের কয়েকদিন ঈদের বাজার হয়ে উঠবে আরও জমজমাট- এমনটাই আশা দোকানিদের।
হিন্দি ছবির গান ‘মে হু এক সারা-রা’য় অভিনেত্রী সুস্মিতা যে পোশাক পরেছেন সেটির আদলে গড়া পোশাকের নাম দেয়া হয়েছে ‘সারা-রা’। ভারতীয় চলচ্চিত্র বা টিভি চ্যানেলে প্রচারিত নাটকের বিভিন্ন চরিত্র এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রীর নামে বাংলাদেশের ঈদবাজারের পোশাকের নামকরণের ঘটনা নতুন নয়। গেল কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও তেমন অনেক পোশাক ঈদবাজারে স্থান করে নিয়েছে। যদিও এসব পোশাকের নামকরণ নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। যেমন : যে ডিজাইনের পোশাক এক দোকানে ‘সারা-রা’ বলা হল, আরেক দোকানে গেলে তাকে ‘কিরণমালা’ বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ক্রেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, পোশাকের এই নাম নিতান্তই দোকানিদের দেয়া। এর মাধ্যমে তারা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন। তারপরও অবশ্য এসব পোশাকের দিকে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। বিষয়টির সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে নিউমার্কেট এলাকার গোল্ডেন প্লাজার রুপাহালি শোরুমের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন জানান, কোম্পানির নামের বাইরে পোশাকের কোনো নাম নেই। তারা কোনো নাম দিয়ে পাইকারি বিক্রিও করেন না। তবে খুচরা বাজারে গেলে পোশাকের নানা নাম হয়ে থাকে। এটা মূলত ক্রেতার চাহিদার কারণেই হয়।
তবে এটা ঠিক, ‘কিরণমালা’ ও ‘সারা-রা’ নামের পোশাক দুটি প্রায় একই ধাঁচের। পার্থক্য শুধু কটিতে। ‘সারা-রা’য় কটি আছে, কিরণমালায় নেই। এই দুটি পোশাকের দাম ৬ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে কিরণমালা পোশাকের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন লালবাগ থেকে আসা ক্রেতা সুখী ও নিশা। গাউছিয়া মার্কেটে পোশাক দেখার সময়ে এই দুই খালাতো বোন বলেন, ভারতের কিরণমালা সিরিয়ালে অভিনেত্রী কিরণমালা যে পোশাক পরেন, তার সঙ্গে বাজারে পাওয়া পোশাকের মিল নেই। সিরিয়ালটি কেবল জনপ্রিয় হওয়ায় এই অভিনেত্রীর নামে পোশাক ছাড়া হয়েছে।
গত দু’দিন যমুনা ফিউচার ছাড়াও নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজাসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, শুধু ‘সারা-রা’ নয়, ‘কিরণমালা’, ‘ঝিনুকমালা’, ‘রাজকুমারী’, ‘বলিউডি গাউন’, ‘কারিনা’ ‘দিল্লী কটন’ ইত্যাদি এবারের ঈদের বাজারের হিট পোশাক। এছাড়া ‘ইচ্ছে নদী’, ‘পায়রা’, ‘জলকন্যা’, পাতালপুরী, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ইত্যাদি নামের পোশাকও চলছে এবার। তবে এগুলো ছোটদের পোশাক। পাশাপাশি গতবারের পছন্দের শীর্ষে থাকা ‘পাখি’, ‘জালজালা’, ‘জারিন’, ‘ঝুমুরি’, ‘কাশিস’, ‘শাওনি’ ইত্যাদি এবারও আছে তরুণীদের পছন্দের তালিকায়। গাউছিয়া সংলগ্ন মার্কেট গোল্ডেন প্লাজার ব্যবসায়ী মো. আউয়াল জানান, এ বছর নতুন আসা সালোয়ার-কামিজগুলোর মধ্যে আরও আছে- জেসমিন, প্রাচী-৭, প্রাচী-৮, বিপুল, গঙ্গা, জয়-বিজয়, বাণী, মিউজ, এভোন, মোহিনী, তেজো, গ্লোসি, খোয়াব, রাখি, কাশিকা, হায়া, গঙ্গা।
আরও আছে ছানছান, নিধি, মানভি। গত বছরের মালালা, বীরজারা, ক্যাটরিনা-টু, লিসা স্টাইল এবং ঝিলিক-টুসহ বাহারি নামের আরও বেশকিছু পোশাকও চলছে। ভারতীয় পোশাকের বাইরে পাকিস্তানি লোন এবং পাশ্চাত্য ধাঁচের বিভিন্ন পোশাকও বাজারে মাত করেছে। এগুলো সবই মূলত সালোয়ার-কামিজ। বেশির ভাগ পোশাকে পাথরের পরিবর্তে এবার ব্যবহার হয়েছে সুতার কাজ। এটা মূলত গরমের কারণে। সালোয়ার-কামিজের বুননে এবারকার বিশেষ সংযোজন কটির ব্যবহার। লম্বা কামিজের সঙ্গে চুড়িদার পাজামা, মাঝামাঝি কামিজের সঙ্গে চোস্ত পাজামা এবং ছোট কামিজের সঙ্গে ঢোলা পাজামা এখনকার ফ্যাশন। তবে লম্বা কামিজ বিশেষ করে ফ্লোর টাচ কামিজ তরুণীরা বেশি খুঁজছেন বলে দোকানিরা জানান। পাশ্চাত্যের পোশাকের মধ্যে হালকা স্লিভলেস টপস, স্কিন টাইট প্যান্ট, লং-স্কার্ট, ম্যাক্সি গাউন ইত্যাদি আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রে রয়েছে।
ঈদ বাজারে এবার কিশোর ও তরুণদের পোশাকের কিছু নামও ফিরছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘মোদি-১’, ‘মোদি-২’, ‘মোদি-৩’, ‘দাবাং’, ‘পাগলু’ অন্যতম। তবে দাবাং ও পাগলুর দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণ চলছে। এলিফ্যান্ট রোডের সুবাস্তু আর্কেডের ‘ফেইথ-১১’ ব্র্যান্ডের পরিচালক শেখ মাহবুবুর রহমান জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরা পাঞ্জাবির ওপর ব্যবহৃত কটি নিয়ে যে ফ্যাশনাবল পোশাক বাজারে এসেছে, সেটিই ‘মোদি’ নামে পরিচিত। এই পাঞ্জাবি এবার তরুণদের দারুণ টানছে। মাহবুব জানান, এন্ড্রি কটন, ভারতীয় ধুপিয়ান, দেশীয় লং, সেমি লং, শর্ট পাঞ্জাবি এবং বাচ্চাদের বাহারি রঙের পাঞ্জাবি তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। প্রসঙ্গত, গত বছর ঈদবাজারে হিট পোশাক ছিল ‘পাখি’। এই পোশাক কিনে না দেয়ায় একাধিক তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনা রয়েছে। এছাড়া এক দম্পতির মধ্যে বিচ্ছেদের খবরও বেরিয়েছে গণমাধ্যমে। এবারও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এই পোশাক। দাম ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সারজিস আলম: দেশের সিস্টেমগুলোতে ক্যান্সার ধরেছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, “দেশের সিস্টেমগুলোতে ক্যান্সারবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ আহত ২৩
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থী, মহিলা আওয়ামী লীগবিস্তারিত পড়ুন