তাবলিগ জামাতের দ্বন্দের নেপথ্যে সাদ কান্ধলভির বক্তব্য নাকি আধিপত্যের চেষ্টা?

গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষ মাওলানা জুবায়েরপন্থি ও সাদপন্থিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী চারজন নিহতের তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে ইজতেমা মাঠের দখলকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে জুবায়েরপন্থি ও সাদপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এদিকে, এ ঘটনার পর থেকে অনেকের মধ্যেই তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণ জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
তথ্য বলছে, তাবলিগ জামাতের সূচনা ১৯২৪ সালের দিকে ভারতের মাওলানা ইলিয়াস কান্দালভির মাধ্যমে। ধীরে ধীরে তাবলিগের কার্যক্রম ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে কাজ করতে ষাটের দশক থেকে প্রতি বছর টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় একত্রিত হন তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা।
২০১০ সাল পর্যন্ত এক পর্বে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন হলেও অতিরিক্ত লোক সমাগমের কারণে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমার আয়োজন করা হয়।
দুই পর্বেই টঙ্গীর তুরাগ তীরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তাবলীগ অনুসারীরা অংশগ্রহণ করতেন। এতে বয়ান করতেন ভারত-পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তাবলীগের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা। বয়ানকারীদের মধ্যে তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস কান্দালভির প্রপৌত্র মাওলানা সাদও ছিলেন।
তবে বিশ্ব ইজতেমাসহ তাবলীগের বিভিন্ন মজলিসে দেওয়া মাওলানা সাদের কিছু বক্তব্যে আপত্তি রয়েছে বলে চিহ্নিত করে ভারতের অন্যতম ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগ।
সাদ কান্দালভি কী বলেছিলেন- যা নিয়ে এই বিভক্তি?
২০১৮ সালে সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাদ কান্দালভি তাবলিগ জামাতে কিছু সংস্কারের কথা বলেছিলেন – যা নিয়ে বিভক্তি সৃষ্টি হয়।
ওই প্রতিবেদনে সাদ কান্দালভির বক্তব্য হিসেবে বলা হয়, “ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত নয়।” যার মধ্যে মিলাদ বা ওয়াজ মাহফিলের মতো কর্মকাণ্ড পড়ে বলে মনে করা হয়।
সাদ কান্দালভি আরও বলেন, “মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের মাদ্রাসার ভেতরে নামাজ না পড়ে মসজিদে এসে নামাজ পড়া উচিত – যাতে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে।”
কিন্তু তার বিরোধীরা বলছেন, সাদ কান্দালভি যা বলছেন – তা তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের নির্দেশিত পন্থার বিরোধী।
তাদের বক্তব্য, সাদ কান্দালভির কথাবার্তা আহলে সুন্নাত ওয়া’ল জামাতের বিশ্বাস ও আকিদার বাইরে।
তবে সাদ কান্দালভির সমর্থকরা বলছেন, তাদের নেতার বক্তব্য বা সংস্কারের প্রস্তাব মানতে না পেরেই বাংলাদেশে সংগঠনটির কর্মকাণ্ডকে “রাজনৈতিক চেহারা” দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে সুন্নি মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন এই তাবলিগ জামাতের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রথম প্রকাশ্য রূপ পায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। তখন তাদের মূল কেন্দ্র কাকরাইলে দুই দল কর্মীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এরপর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফী’র উপস্থিতিতে তাবলীগ জামাতের একাংশের এক সম্মেলন হয় । এতে সাদ কান্দালভিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় – দিল্লিতে তাবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাদ কান্দালভির বক্তব্য ও মতবাদকে অনুসরণ করা হবে না, এবং আগামী বিশ্ব ইজতেমার সময় তাকে বাংলাদেশে আসতেও দেওয়া হবে না।
দ্বন্দ্বের নেপথ্যে আরও যা জানা গেল
আপত্তিকর বক্তব্যের সঙ্গে মাওলানা সাদের একক আমীর দাবির বিষয়টিও দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের নেপথ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে।
তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম একটি নিয়ন্ত্রণকারী পর্ষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ওই পর্ষদব্যবস্থাকে শূরায়ে নেজাম বলা হয়। পর্ষদের নিয়ম অনুযায়ী কোনো সদস্য মারা গেলে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। ওই পর্ষদেরই একজন সদস্য মাওলানা সাদ কান্ধলভি। তাবলিগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস রহ. এর উত্তরসূরি হিসেবে পর্ষদে তার বিশেষ মূল্যায়ন ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি পর্ষদ ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে নিজেকে একক আমির ঘোষণা করেন। এই বিষয়টিও বিভক্তির প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলে জানা গেছে।
বিভক্তির বিষয়টি সমাধান করতে তাবলিগের শূরা কমিটি (পরিচালনা পর্ষদ) বেশ কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যায়। এরমধ্যেই ২০১৮ সালে বাংলাদেশে তাবলিগের দুই পক্ষ বা দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
এ সময় তাবলীগের শূরায়ে নিজাম (মাওলানা জুবায়েরপন্থি) বলে পরিচিত পক্ষটি মাওলানা সাদকে বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়।
এরপর তাবলীগের দুইপক্ষ দুটি মেরুতে অবস্থান নেন। শূরায়ে নিজাম (মাওলানা জুবায়েরপন্থি) বলে পরিচিত পক্ষটি কেন মাওলানা সাদের বিরোধিতা করছেন তা স্পষ্ট করতে দেশের বিভিন্ন জায়গা ওজাহাতি সমাবেশ বা ব্যাখা প্রদান সমাবেশ করেন। অপরদিকে এ সময় মাওলানা সাদের অনুসারীরা এতায়াতি বা অনুসরণকারী বলে পরিচিতি লাভ করে।
দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার প্রাথমিক দিনগুলোতে দুই পক্ষ পরস্পর বিরোধী অবস্থানে থাকলেও বিষয়টি জটিলতায় রূপ নেয় ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষকে কেন্দ্র।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির শঙ্কা, নদীবন্দরে সতর্কতা
দেশের সাতটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিবিস্তারিত পড়ুন

শিবির সভাপতি: অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করতে পারেনি
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরি ব্যর্থবিস্তারিত পড়ুন

মহাকাশে কতগুলো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, শীর্ষে কোন দেশ?
এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কক্ষপথে মোট ৩০ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণবিস্তারিত পড়ুন