তিন ফুট বাড়ছে সাগরের পানি
পৃথিবী নামের আমাদের এই গ্রহটির উষ্ণতা বাড়ছে, এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। নতুন খবর হলো যতো দ্রুত উষ্ণতা বাড়ছে গত এক হাজার বছরেও ততোটা বাড়েনি।
আর এতো দ্রুত বাড়ছে যে, গত বছর বিশ্ব নেতৃবৃন্দ উষ্ণতা বৃদ্ধির হার যে পর্যায়ে রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন, সেই পর্যায়ে রাখা মনে হয় সম্ভব হবে না।
এরই মধ্যে তার চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ বছর সারা পৃথিবীতে প্রচণ্ড গরম পড়ে এবং আমরা সকলেই তা বেশ ভালোভাবেই অনুভব করেছি।
১৯ শতকে সারা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পায়। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা এই তাপমাত্রা বিপজ্জনক মাত্রার একবারে কাছাকাছি। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে তিন ফুট।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এই বিপজ্জনক মাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নির্ধারণ করেছেন প্যারিসে অনুষ্ঠত জলবায়ু সংক্রান্ত বৈঠকে। কিন্তু এই জুলাই মাসেই চরম আকার নেয়। এমন কি, শীত প্রধান দেশের মানুষও অস্থির হয়ে ওঠে সে মাসে।
আক্ষরিক অর্থেই, এই আধুনিক যুগে উষ্ণতা পরিমাপ করা শুরুর পর থেকে প্রতিমাসে তাপমাত্রা বেড়ে যায় আগের বছরের উল্লেখিত মাসের তুলনায়। একটি উদাহরণ দিযে বিষয়টি পরিস্কার করা যাক। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের তাপমাত্রা তুলনা করা হয়েছে পরের বছরের জানুয়ারি মাসের সঙ্গে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে, আধুনিক যুগে উষ্ণতা পরিমাপ করা শুরু হয় ১৮৮০ সাল থেকে। এতে দেখা যায়, উষ্ণতা বৃদ্ধির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে প্রতি মাসেই।
আরো ভয়ানক বিষয় হলো তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়া কিন্তু শুরু হয়েছে অনেক আগেই। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফের টুকরো সমুদ্রের পলিমাটি পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, সাম্প্রতিক দশকে যেভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আগের মিলেনিয়ামের যেকোনো সময়ের চেয়ে অত্যন্ত দ্রুত।
এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে নাসার গডার্ড ইনসস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজের পরিচালক গ্যাভিন শমিডিট বলছেন, ‘গত ত্রিশ বছরে আমরা নজীরবিহীন একটি পর্যায়ে চলে গেছি।’ গত এক হাজার বছরেও এভাবে উষ্ণতা কখোনোই বৃদ্ধি পায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রাখার জন্য দরকার খুব তাড়াতাড়ি কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গমন কমিয়ে আনা কিংবা প্রয়োজন সমন্বিত জিওইঞ্জিনিয়ারিংয়ের। কিন্ত এ দুটোর কোনোটিই করা সম্ভব নয়।
শমিডিট পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, গত বছরটি হবে সবচেয়ে উষ্ণ। এর জন্য তিনি শতকরা ২০ ভাগ দায়ী করেন এল নিনোর প্রভাবে পরিবর্তনশীল জলবায়ু সংক্রান্ত ঘটনাবলীকে। আক্ষরিক অর্থে শমিডিটের পূর্বাভাস একেবারে অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছিল। গত বছরেই ছিল এ পর্যন্ত রেকর্ড করা বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ। এটি ভেঙে ফেলে ১৯১৪ সালের উষ্ণতার রেকর্ড।
‘এক দিনে এই অবস্থা গড়ে ওঠেনি, এটি হলো দীর্ঘমেয়াদী একটি প্রবণতা। এই প্রবণতা থেকে যে পৃথিবী বেরিয়ে আসবে তার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না, বললেন শমিডিট। এটি ক্ষনস্থায়ী নয়, আগামী এক শ’ বছরের জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা।’
বর্তমান বিশ্বে শমিডিটই হলেন সবচেয়ে উঁচুমানের বিজ্ঞানী যিনি বললেন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হবে না। অথচ দ্বীপদেশগুলোর চাপে ডিসেম্বরের প্যারিস বৈঠকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এই লক্ষমাত্র নির্ধারণে সম্মত হয়েছিলেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, আর মাত্র পাঁচ বছর যদি বর্তমান মাত্রায় কার্বনডাইঅক্সাই নির্গত হয়, তহলে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা আর সম্ভব হবে না।
নাসার অঙ্গ সংস্থা ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোফেয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, বরফ যুগ থেকে বেরিয়ে আসার পর গত পাঁচ হাজার বছর ধরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে চার থেকে সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে। গত শতকে এই তাপমাত্রা বেড়েছে ঘরির কাটা ধরে। আর এখন বাড়ছে আগের চেয়ে দশগুণ বেশি হারে।
বরফ গলে গিয়ে সাগরের উচ্চতা বাড়তে থাকায় শঙ্কিত মেরু ভল্লুকের মত প্রাণিরা
নাসার মতে, উষ্ণতা বৃদ্ধির অর্থ হলো আগামী এক শ’ বছরে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে কমপক্ষে বিশগুণ দ্রুত গতিতে।
এ পর্যন্ত যতো কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গত হয়েছে, তাতে এ শতকের শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে তিন ফুট। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আগামী কয়েক শতাব্দিতে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ৭০ ফুট বেড়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। এতে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় বসবাস করা নাও সম্ভব হতে পারে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন