অক্টোবরে আবারো কমছে জ্বালানি তেলের দাম
তেলের দাম কমার সুফল পায় না সাধারণ মানুষ
দুই বছর ধরে বিশ্ববাজারে অব্যাহত দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের দাবি ছিল অনেক দিনের। দেরিতে হলেও গত ২৪ এপ্রিল এক দফা কমানো হয় ডিজেল, পেট্রল, কোরোসিন ও অকটেনের দাম। ধারণা করা হয়েছিল এর সুফল কিছুটা হলেও পাবে সাধারণ মানুষ। কিন্তু সেটা আর হয়নি।
আসছে অক্টোবরে জ্বালানি তেলের দাম আবার কমানো হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
এবার এর কোনো সুফল সাধারণ মানুষ পাবি কি না তাও নিশ্চিত করে বলা কঠিন, কেননা অতীতের অভিজ্ঞতা যে সুখকর নয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যেও পাওয়া গেছে এর প্রতিফলন।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে মেঘনা পেট্রল পাম্পে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শেষে সাংবাদিকদের যখন প্রতিমন্ত্রী জ্বালানি তেলের দাম কমানোর আভাস দেন, তখন বলেন, ‘পরিবহন মালিকদের বলব, তারা যেন ভাড়া অ্যাডজাস্টমেন্টে যান। আমরা তেলের দামের অ্যাডজাস্টমেন্টে যাব, কিন্তু সাধারণ মানুষ তো সে সুফল পাচ্ছে না।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়া-কমার দৃশ্যমান ফল বেশি দেখা যায় বিশেষ করে গণপরিবহনে। এর আগে যতবার জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, তার সঙ্গে দ্বিগুণ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গণপরিবহণের ভাড়া। কিন্তু গত এপ্রিলে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলেও এর কোনো সুফল পায়নি মানুষ। আগের ভাড়াতেই যাতায়াত করতে হয়েছে যাত্রীদের। কোনো কোনো পরিবহন বরং নানা অজুহাত কিংবা সুবিধা দেয়ার কথা বলে পরে বাড়িয়েছে ভাড়া।
এর আগে জ্বালানি তেলের দাম কমার আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমলে এর সঙ্গে সমন্বয় করা হবে পরিবহন ভাড়া। কিন্তু মন্ত্রীর সেই কথার কোনো বাস্তব ফল পাওয়া যায়নি পরে।
যদিও সরকার দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রে মাইলপ্রতি তিন পয়সা বাসভাড়া কমিয়েছিল, কিন্তু কার্যত সেটি ঘোষণা পর্যন্তই থেকে যায়।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, উৎপাদন সেক্টরের যে জ্বালানির ব্যবহার হয় তা সরাসরি গ্রাহকরা পায় না। জ্বালানি তেলের মূল্য কমার ফলে এই সেক্টরের সুফল কিন্তু পরোক্ষভাবে সাধারণ জনগণ পাচ্ছে।
কিন্তু গত এপ্রিলে জ্বালানি তেলের দাম কমার পর কোনো ধরনের পণ্যের দাম কমার খবর এখন পর্যন্ত জানা যায়নি কোথাও।
গণপরিবহনের দাম না কমার বিষয়ে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, গণপরিবহনের জন্য জ্বালানি একটি মাত্র খরচ। এর বাইরে আরও অনেক খরচ আছে।
আগামি দিনে জ্বালানি তেলের দাম কমলে এর প্রভাব কতটুকু পড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সমন্বয় করবে। তবে গণপরিবহনের ভাড়া যাতে কমানো হয় এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ১২০ থেকে ১২৫ মার্কিন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছিল তখন সরকার সর্বশেষ তেলের দাম বাড়ায়। ওই বছরের ৪ জানুয়ারি জ্বালানির মূল্য বেড়ে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রল ৯৬, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ এবং ফার্নেস অয়েলের দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ হয়।
পরে গত দুই বছর ধরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে কমতে ব্যারেল প্রতি ৪০ ডলারের নিচে নেমে এলে দেশে দাম কমানোর দাবি ওঠে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে লোকসান দিয়ে আসা বিপিসির ঋণ সমন্বয় করতে দাম কমায়নি সরকার। অবশেষে গত এপ্রিলে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩ টাকা এবং অকটেন ও পেট্রোলের দাম ১০ টাকা কমানো হয়। এখন পেট্রোল ও অকটেন লিটারপ্রতি ৮৯ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিন লিটারপ্রতি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত তিন মাসে দাম কিছুটা বাড়লেও অশোধিত তেলের দাম এখনো ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলারের নিচে। আগামী দুই বছরে তেলের দাম খুব বেশি বাড়বে না বলেও পূর্বাভাস মিলেছে। তেলের দাম কমায় দুই বছর ধরেই বিপুল লাভ করছে সরকার। বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন দুই বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি লাভ হয়েছে।
এতে প্রশ্ন উঠছে, জনগণ এর কী সুফল পেয়েছে?
বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হলেও জ্বালানি তেলের দাম কমার পর কমছে না গণপরিবহনের ভাড়া। এতে ক্ষোভ আছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
আর ভাড়া না কমানোর অজুহাত দেখাতে গিয়ে পরিবহনকর্মীরা চালাকির আশ্রয় নেয় বলে জানান যাত্রীরা। রাজধানীতে গণপরিবহনে চলাচলকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফাহিম রহমান বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে গ্যাসচালিত গাড়িগুলো বলে তাদের গাড়ি চলে তেলে। আর জ্বালানি তেলের দাম কমলে বলে গাড়ি চলে গ্যাসে। তারা তাদের ইচ্ছামতো ভাড়া নিচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান বলেন, যখনই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে তখন পরিবহনসহ সব ক্ষেত্রের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ও সেবার দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতার নেমে পড়েন। কিন্তু দাম কমলে তারা বলে এটা বেশি দামে কেনা, অন্যান্য পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়েছে- নানা অজুহাতে তারা দাম কমাতে চায় না। জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গণপরিবহনের ভাড়া কমানোর জন্য সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।খবর ঢাকাটাইমসের।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূস: নির্বিঘ্নে সব জায়গায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “এবার দুর্গাপূজারবিস্তারিত পড়ুন
সোমবারের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার
এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করেনবিস্তারিত পড়ুন
১৪ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৬৪ কোটি ডলার
এ মাসের প্রথম ১৪ দিনে এসেছে ১৬৪ কোটি ৬৭ লাখবিস্তারিত পড়ুন