দশ টাকা কেজি চালের জন্য ৩শ টাকা ঘুষ!
ইসলামপুরের নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর তালিকা করার সময় স্থানীয় ইউপি সদস্যদের ৩শ টাকা করে ঘুষ দিতে না পারায় ৩৪ জন হতদরিদ্র আজও ১০ টাকা কেজি দরের চাল উত্তোলন করতে পারেনি। এজন্য উলিয়া বাজারের ডিলার ছাইদুর রহমান ওই ৩৪ জনের মোট ১ হাজার ২০ কেজি চাল দীর্ঘ একমাস ধরে তার গুদামে আটকে রেখেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে অনুসন্ধানের সময় ইসলামপুরের নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের করিরতাইর গ্রামের ষাটোর্ধ মজিবর রহমান জানান, “আঙ্গরে এলাকার মেম্বার আলী হোসেন ১০ টাকা চালের কার্ডে নাম দিয়ে ৩শ টেহা ঘুষ চাইছিল। সংসারে অভাবের জন্যে টেহা দিবের পাই নাই, তাই মেম্বর কার্ড দেয় নাই, ডিলারও চাল দিবার পায় নাই।”
একই সময় ৮০ বছরের বৃদ্ধ ছমেদ আলী বলেন, “ আঙ্গরে গাঁয়ের মেম্বর আলী হোসেন ১০ টেকা চালের কাডে আমার নাম দিছে শুনছি। তবে সে আমার কাছে ৩শ টেহা চাইছিল। অভাবের জন্যে দিবের পাই নাই। তাই কাডও দেয় নাই চালও পাই নাই।”
একই দিন দুপুরে উলিয়া বাজারে গেলে নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের সোনামুখী গ্রামের হতদরিদ্র তৈয়বর রহমান বলেন, “আঙ্গরে গাঁয়ের মেম্বর ১০ টেকা চালের কার্ডের জন্যে ৩শ করে টেকা চাইছিল দিবার পাই নাই।”
ওই একই গ্রামের সোলায়মান হক বলেন, “সুরুজ মেম্বর ৩শ টেহা চাইছিল, দেই নাই। তাই কার্ডও দেয় নাই, চালও পাই নাই।”
যারা ৩শ করে টেহা দিছে তারাই কাড পাইছে, তারাই চাল তুলছে”। পরে ওই এলাকার ডিলার ছাইদুর রহমানের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযোগকারী হতদরিদ্র মজিবর রহমান, ছমেদ আলী, তৈয়বর রহমান ও সোলায়মান হকসহ ৩৪ জনের নাম খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর তালিকায় নাম রয়েছে। তবে তারা কার্ড দেখাতে না পারায় না গুদামে চাল থাকলেও তাদের চাল দেওয়া সম্ভব হয়নি।
নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর ডিলাররা জানান, খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর জন্য হতদরিদ্রদের তালিকা করার সময় নোয়ারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা দুই হাজার ৩শ ৭৬ জন দরিদ্র মানুষের অধিকাংশদের নিকট থেকে ৩শ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। তাই যারা ঘুষ দিয়ে কার্ড সংগ্রহ করতে পারে নাই তারা ১০ টাকা কেজি দরের ৩০ কেজি করে চালও উত্তোলন করতে পারে নাই। এ ইউনিয়নে কার্ডধারীরা প্রথম দফায় চাল নিতে ব্যয় করেছেন ৩শ টাকার স্থলে ৬শ টাকা। তবে যারা ঘুষ দেয়নি তারা কার্ডও পায়নি এবং চাল উত্তোলনেও ব্যার্থ হয়েছেন।
নোয়ারপাড়া ইউপি সদস্য আলী হোসেন ও সুরুজ্জামানের সাথে কথা হলে তারা দুই জনই বলেন, হতদরিদ্রদের খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীতে তালিকাভুক্তি ও কার্ডের জন্য কোন টাকা পয়সা নেওয়া হয়নি।
নোয়ারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বাদল জানান, তালিকাভুক্ত হতদরিদ্রদের হাতে কার্ড পৌঁছানোর জন্য সকল ইউপি সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কোন ইউপি সদস্য যদি টাকার জন্য কারো কার্ড আটকে রাখে তা খোঁজ খবর নিয়ে তাদের নামে নতুন কার্ড ইস্যু করে দেওয়া হবে।
ইসলামপুরের ইউএনও এবিএম এহছানুল মামুন জানান, নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের দুই হাজার ৩শ ৭৬ জন হতদরিদ্র মানুষকে খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর আওতায় তালিকাভুক্ত করতে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওইসব হতদরিদ্রদের তালিকা প্রণয়নে কারো বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
জামালপুরে ৮ জুয়ারিসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী আটক
জামালপুরের বকশীগঞ্জে ডিবি-২ এর অভিযানে জুয়ার আসর থেকে ৮ জনবিস্তারিত পড়ুন
দেওয়ানগঞ্জে ভাইস চেয়ারম্যান হলেন তৃতীয় লিঙ্গের মুন্নি
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচবিস্তারিত পড়ুন
সুপ্রিম কোর্টের আদেশে সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। সুপ্রিম কোর্টেরবিস্তারিত পড়ুন