দীর্ঘ ৮ বছর ধরে মসজিদের ওযুখানায় বসে ঘুমবিহীন রাত কাটান এই তরুণী, নৈপথ্যে কি?
দীর্ঘ ৮ বছর ধরে রাতে ঘুমাননি ২৭ বছর বয়সী মর্জিনা নামের এক তরুণী। মসজিদের ওযুখানায় বসে এই ৮ বছর ধরে তিনি প্রতিটা রাত কাটাচ্ছেন। সারা রাত মসজিদের ওযুখানায় অবস্থান করেন। পরে সকালে বাসায় গিয়ে ঘুমান।
কি অবাক হচ্ছেন? অবাক হলেও ঘটনা সত্যি। ঘটনাটি ঠাকুরগাঁও শহরের সত্যপীর ব্রিজের পাশে অবস্থিত একটি মসজিদের। তার বাড়ি পৌরসভা এলাকার বিআখাড়া স্কুলের পেছনে। তার বাবা মৃত রিয়াজ উদ্দিন।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই পথে যাওয়ার সময় মসজিদের ওযুখানায় তাকে বসে থাকতে দেখে কৌতুহল জাগে এ প্রতিবেদকের।
মর্জিনা প্রতিবেদককে জানান, তিনি তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। ছোটবেলায় তার মা মারা যান। তখন থেকে তার বড় মায়ের সংসারে অযত্ন-অবহেলায় বড় হতে থাকেন তিনি। এক রুমের একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে তার পোষা কিছু ছাগল নিয়ে থাকেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই ছাগল পোষার শখ ছিল মর্জিনার। সেই শখ পূরণ করতে মর্জিনা ছাগল পালনের ঝুঁকে পড়েন। এক সময় তার ৬০টির মতো ছাগল হয়। একদিন তার বড় মা মর্জিনাকে ঘরে আটকে রেখে ৫০টি ছাগল বিক্রি করে দেন। এরপর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
মর্জিনা বলেন, আমাদের বাড়িটা তিন শতক জমির ওপর। বাবা ১০ বছর আগে মারা গেছেন। এরপর ওই জমির ওপর নজর পড়ে প্রতিবেশি দবিরুলের। ইতোমধ্যে তিনি আমার ঘর ভেঙে এক শতক জমি দখল করে নিয়েছেন। মাঝে মধ্যেই আমাকে এসে মারধর করেন তিনি। তাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন আমার বড় মা ও তার সন্তানরা। আমি বাড়িতে গেলেই তারা আমাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেন।
তিনি আরও জানান, কিছুদিন আগে দবিরুল ও তার পরিবারের লোকজন আমার বাড়িতে প্রবেশের রাস্তাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। দবিরুল এক সময় ডিসি অফিসে চাকরি করতেন। সেই প্রভাবে এখনও এসব করছেন। এ বিষয়টি পৌরসভার মেয়রসহ সবাই জানেন। বিগত মেয়র ডালিম সাহেব এসে বিষয়টার মীমাংসা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এখন আরও উগ্র হয়েছেন দবিরুল।
মর্জিনা বলেন, গত আট বছর ধরে আমাকে মারধর করে আসছেন দবিরুল। অথচ এলাকার কেউ প্রতিবাদ করেন না। উল্টো তারা আমাকে পাগল বলে প্রচার করছে। আমার নাকি মাথায় ছিট আছে। তাই দবিরুলের ভয়ে রাতে বাড়িতে যাই না। আট বছর হলো এই মসজিদে রাত কাটাচ্ছি। এলাকার সবাই আমাকে চেনে। পুলিশও দেখে এখানে বসে থাকতে।
তিনি বলেন, প্রতিদিনই বেলা বাড়ার সাথে সাথে পোষা ছাগল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। দুপুরের দিকে যাই অন্যের বাসায় কাজ করতে। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করি। কাজ শেষে রাত ৯টার দিকে চলে আসেন মসজিদে। এভাবেই কেটে গেছে তার ৮ বছর।
কথা হয় মসজিদ সংলগ্ন বাড়ির মালিক মামুনুর রশিদের সঙ্গে। তিনি জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে তাকে মসজিদে বসে থাকতে দেখে আসছি। তবে তিনি পাগল না। জমি সংক্রান্ত জেরে শত্রুপক্ষ তাকে পাগল বানানোর চেষ্টা করছেন। আমি নিজেও উদ্যোগ নিয়েছি বিষয়টি সমাধান করার। কিন্তু পারিনি।
মসজিদের পাশেই সোলেমান নামে এক নাইট গার্ড থাকেন। তিনি জানান, আমি ১০ বছর ধরে এখানে চাকরি করছি। আর ৮ বছর ধরে মর্জিনা নামের মেয়েটিকে মসজিদের ওযুখানায় বসে থাকতে দেখছি। শুনেছি তার মাথার সমস্যা রয়েছে।
মর্জিনা যে বাড়িতে কাজ করেন রাতেই সেই বাড়িতে যান এই প্রতিবেদক। সেখানে কথা হয় বাড়ির মালিক স্কুল শিক্ষিকা সুরাইয়া বেগমের সঙ্গে।
তিনি জানান, মর্জিনা আমার বাড়িতে কাজ করছেন প্রায় ৬ মাস হলো। তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন কোনো দিনও মনে হয়নি। মাঝে মধ্যে এসে খুব কান্নাকাটি করে। শুক্রবার সকালেও তাকে নাকি মারধর করেছে তার এক প্রতিবেশি।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার আবদার ছিল বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার। কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম। দেখি তার বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ। তবে জমি সংক্রান্ত ঝামেলা নাকি চলছে তাদের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মর্জিনার প্রতিবেশী দবিরুল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মেয়েটি পাগল। তার জমি দখল করতে যাব কেন?
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন