দ্রব্যমূল্য খেয়ে ফেলছে গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতন
দুই সন্তানের মা মাহেলা পেশায় গার্মেন্টস শ্রমিক। থাকেন রাজধানীর মুগদার টিনশেডের একটি ভাড়া বাসায়। স্বামী অসুস্থ থাকায় সংসারের ব্যয়ভার তাকেই বহন করতে হয়। পোশাক কারখানায় রাত-দিন পরিশ্রম করে মাসে সর্বসাকূল্যে পারিশ্রমিক পান ৬৪০০ টাকা।
ঘর ভাড়া, খাওয়া খরচ, ছেলে-মেয়েদের খরচ, অসুস্থ স্বামীর ওষুধ ক্রয়সহ সংসারের সকল ব্যয় এ টাকার মধ্যেই করতে হয় মাহেলার। ফলে উৎসব উদযাপন তো দূরের কথা নিয়মিত পেটপুরে খাওয়াটাই মাহেলার কাছে বড় বিষয়। তবে মাহেলা একা নন। একই অবস্থা দেশের গার্মেন্টস খাতে কর্মরত অসংখ্য শ্রমিকের। যারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন। ৮ ঘণ্টার স্থলে ১৪ ঘণ্টা।
টানা আন্দোলনের মুখে ২০১৩ সালে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়াতে বাধ্য হয়েছিল গার্মেন্টস মালিকরা। তবে গত চার বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে বেতন বাড়েনি। ফলে সেই ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’ অবস্থাতেই রয়ে গেছেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা।টিকে থাকতে আবারও বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছে পোশাক শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের টানা আন্দোলনের মুখে ওই সময়ে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন ৫৩০০ টাকা বেতন নির্ধারণ করে সরকার। গার্মেন্টস খাতে কর্মরত শ্রমিকদের একটি বড় অংশই সর্বনিম্ন বেতনে কাজ করেন। সেই দলের একজন রংপুরের মাহেলা।
তিনি জানান, ৮ ঘণ্টা ছাড়াও প্রতি মাসে অতিরিক্ত কাজ করে সর্বমোট বেতন পান ৬৪০০ টাকা। দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে ঘর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বেড়েছে ঘর ভাড়াও। মাছ-মাংস খাওয়া দূরের কথা, সংসার চালাতে পারছেন না তিনি।
আরেক নারী শ্রমিক রাশিদা বেগম কাজ করেন রামপুরার আশিয়ানা গার্মেন্টসে।এক বছর আগে কাজে যোগ দিয়ে বর্তমানে বেতন পান ৪৮০০ টাকা। এ টাকায় সংসার না চলায় ১২ বছরের ছেলেকে একটি দোকানে কাজে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, গরিব মানুষের কথা কেউ ভাবে না। রাত-দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করি। মাসে শেষে যে বেতন পাই তা দিয়ে ঠিকমত তিনবেলা খাবারই জোটে না। তাই ছেলেকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে পারিনি। সংসারের খরচে যাতে কিছুটা অবদান রাখতে পারে তাই অন্যের দোকানে কাজে দিয়েছি।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৩ সালের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন ৫৩০০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। চার বছরে সব কিছুর দাম বেড়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বেড়ে। কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বা মজুরি বাড়েনি।
তিনি আরও বলেন, জীবন যাত্রার ব্যয় বাড়লেও আয় বাড়েনি। তাই বর্তমান সময়ের সঙ্গে চলতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করতে হবে। এর মধ্যে ১০ হাজার মূল বেতন এবং খাদ্য ও ভাতাসহ আরও ৬ হাজার টাকা দিতে হবে।
মোশরেফা বলেন, বেতন বাড়ানোর এ প্রস্তাব সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়, মজুরি কমিশন, বিজিএমইএ-তে দিয়েছি। আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি এ বিষয়ে বারবার আলোচনা করছি।
শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবির বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন গ্রোথ হয়েছে। আয় না থাকলে বেতন কিভাবে বাড়াবে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো সক্ষমতা গার্মেন্টস মালিকদের নেই।
তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা সেজে যারা বেতন বাড়ানো আন্দোলন করছেন তারা এ সেক্টরকে ধ্বংস করতে চায়।
বিভিন্ন গার্মেন্টস এখনো সর্বনিম্ন মজুরি বাস্তবায়ন করছে না -এমন অভিযোগের বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন