ধর্ষণ মামলায় ১৪ বছর জেল খেটে জলিল এখন তারকা
পাঁচ বছরের শিশু কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে ১৪ বছর জেল খেটে ফরিদাবাদ গ্রামের আবদুল জলিল এখন তারকা।
উচ্চ আদালতের রায় প্রকাশের পর বৃহষ্পতিবার আশপাশের গ্রামের শত শত উৎসক মানুষের ভিড় জমে আবদুল জলিলের বাড়িতে। ভিড় করেছে মিডিয়া কর্মীরাও।
আব্দুল জলিল বলেন, ‘আদালতের ক্ষতিপূরণের রায়ে আমি সন্তুষ্ট। আমি আমার জীবনের ১৪টি বছর ফেরৎ চাই। ফেরৎ চাই মামলার ফাঁদে ফেলে কেড়ে নেয়া আমার বসতবাড়িও। যাদের ষঢ়যন্ত্রে এই মিথ্যা মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে,তাদের বিচার চাই।’
বৃহষ্পতিবার দুপুরে ফরিদাবাগ গ্রামের কেফড়া খালীখাল পাড়ের খাসজমিতে গড়ে তোলা পৈত্রিক বাড়ির আঙ্গীনায় বসে এভাবেই দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন আব্দুল জলিল।
দীর্ঘ ১৪ বছর গত ২৬ এপ্রিল ২০১৬ বরিশাল কারাগার থেকে মুক্তিপান তিনি। ওইদিনই ফেরে আসেন বাড়িতে।
কিন্ত ১৪ বছর আগে যে বাড়িতে ছিলেন,সেই বাড়ি আর পাননি। পাননি বাবা হাছন আলীকেও।
জেল থেকে মুক্তিপেয়ে গ্রামে ফিরে স্বজনদের নতুন ঠিকানা কেফড়াখালী খালপাড়ের খাসজসিতে পৈত্রিক ভিটায় উঠেছেন।
বৃদ্ধা মা ছালেকা বেগম বার্ধক্য আর রোগ-শোকে শয্যাশায়ী। তিন বছর আগে দিনমজুর বাবা হাছন আলী মারা গেছেন।
তিন ভাই আর ৩ বোনের মধ্যে আব্দুল জলিল ছিলেন ছোট। পরিবারের সহায় সম্পত্তি বলে আর কিছু নেই। বড় ভাই ইব্রাহীম মাছধরা ট্রলারের মাঝি এবং অপরভাই ইসমাইল স্থানীয় একটি ডর্ক শ্রমিকের কাজ করছেন।
আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমরা একই গ্রামের ইসমাইল হাওলাদার বাড়িতে ছিলাম। এটা আমার নানা বাড়ি। এই বাড়িতে ওয়ারিশ সূত্রে মা ছালেকা বেগমের ১০ শতাংশ জমিই ছিল আমাদের সম্পদ। এই জমিতেই ছিল আমাদের বসতভিটা।
তিনি বলেন, এই সম্পদের উপর প্রতিবেশীর লোভই এই ‘মিথ্যা’ মামলার কারণ। মামলায় ফেলে দুর্বৃত্তরা ওই জমি বাগিয়ে নেয় এবং আমার পরিবারকে বাড়িছাড়া করে। এখন আমার পরিবারের ঠিকানা খালপাড়ের খাসজমি উপর ১৫ শতাংশের এই বাড়িতে। কিন্তু এই জমির উপরও স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বন্দোবস্ত মালিকানার দাবী আছে।
আব্দুল জালিল বলেন, আমি গ্রামের স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তাম। থানা পুলিশ আর মামলা মোকদ্দমা সম্পর্কে কোনো ধারনা ছিল না। একদিন বিকেলে মাওলানা জাফর উদ্দিন কাজের কথা বলে আমাকে বাজারে নিয়ে যায়। বাজার থেকে থানায় নিয়ে যায়। রাতে হাতকড়া দিয়ে পুলিশ আমাকে কোর্টে নিয়ে যায়। কোর্ট থেকে জেলে।
তিনি বলেন, জেল কি জানতাম না। ২/১ দিন যাওয়ার পর অন্য বন্দিদের সঙ্গে কথাবর্তায় বুঝতে পারি, বিপদে পরেছি। তারপর ১৪ বছর কেটে যায়। মুক্তি পাই গত ১৬ এপ্রিল।
জলিলের অভিযোগ, মাওলানা জাফর উদ্দিন শ্বশুড় বাড়িতে থাকতেন। আমরা নানা বাড়িতে থাকতাম। আমার নানা বাড়ির (ইসমাইল হাওলাদার) পাশেই জাফর উদ্দিনের শ্বশুড় বাড়ি।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবে জাফর উদ্দিন আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে আমার দরিদ্র পরিবারের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, পাঁচ বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০০১ সনের ২৪ সেপ্টেম্বর চরফ্যাশন থানায় দায়ের করেন নুরাবাদ ইউনিয়নের ইউডি দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা জাফর উদ্দিন। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর মামলার একমাত্র আসামি আব্দুল জলিলকে গ্রেফতার করে চরফ্যাশন থানা পুলিশ।
এই মামলায় ২০০৪ সনের ৩০ আগস্ট ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল জলিলকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন।
ওই সময় জলিলের বয়স ১৫ বছর হলেও ওই মামলার বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯/১ ধারায়। এই রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন আব্দুল জলিল।
হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে দেখেন, ঘটনার সময় আব্দুল জলিলের বসয় ছিল ১৫ বছর। অভিযোগপত্রেও আব্দুল জলিলের বসয় ১৫ বছর উল্লেখ করা ছিল।
একজন নাবলক হিসেবে তার বিচার পুনরায় শিশু আদালতে করার জন্য ভোলার জেলা দায়রা জজকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতের ওই সাজা বাতিল করেন হাইকোর্ট।
২০১০ সনের ৮ মার্চ ভোলার অতিরিক্ত দায়রা জজ নারী ও শিশু দমন বিশেষ আইনের একই ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে আবারও আব্দুল জলিলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আবারও জেল আপিল করেন আব্দুল জলিল।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জলিলের করা জেল আপিল নিষ্পত্তি করে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিচারপতি এএফএম আবদুর রহমানের একক বেঞ্চ রাষ্ট্রকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন।
গত বুধবার রায়ের পূর্নাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।যার ঢেউ উপচে পড়েছে ফরিদাবাদ গ্রামের খালপাড়ের আব্দুল জলিলের জীর্নঘরের আঙিনা পর্যন্ত।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন