নামাজ না পড়েও জামায়াতের রোকন!
ছেলের আকিকা নিয়ে গ্রামের কিছু মাতুব্বরের সাথে বিরোধ হয় কালু ও তার মামাতো ভাই সালামের। মাতুব্বররা নিজেরা ছাগল জবাই করে রান্না বান্না করতে চায়। কিন্তু কালু তার মামাতো ভাই মসজিদের ইমাম সালামকে দিয়ে আকিকার ছাগল জবাই করেন। দ্বন্দ হয় গ্রামের কথিত সমাজ পতিদের সাথে। রাতে পুলিশ দিয়ে এই দুই ব্যক্তিকে জামায়াত শিবির বানিয়ে আটক করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাপাশহাটিয়া গ্রামে। অন্য ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বানিয়াকান্দর গ্রামের ইউনুস আলী নামে এক বে-নামাজি ব্যক্তিকে জামায়াতের রোকন সাজিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইউনুস পেশায় পান বরজের শ্রমিক ও একেবারেই হতদরিদ্র মানুষ। মুখে দাড়ি নেই। বিড়ি সিগারেটে আসক্ত তিনি। সামাজিক দ্বন্দ ও দলাদলির কারণে এ ভাবে ঝিনাইদহের বিভিন্ন গ্রামের নিরীহ মানুষ মামলার জালে জড়িয়ে পড়ছেন।
জামায়াত বিরোধী সংগঠনের মাওলানারাও রেহাই পাচ্ছেন না হয়রানীর হাত থেকে। কদিন আগে মহিলা কলেজপাড়া মাদ্রাসা সুপার মাওলানা হারুন অর রশিদকে জামায়াত বলে থানায় আনা হয়। পুলিশ পরে জানতে পারে তিনি ফুরফুরা শরীফের ভক্ত। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সূত্র মতে আসন্ন ইউপি নির্বাচন সামনে করে গ্রামাঞ্চলে এই জঘন্য ভিলিজ পলিটিক্স শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে এক শ্রেনীর নেতারা পুলিশ দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করছেন। সরেজমিন অনুসন্ধান করে এ রকম নিরীহ মানুষের হয়রানীর তথ্য উঠে এসেছে। হরিণাকুন্ডুর কাপাশহাটিয়া গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে কালু পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর ঝিনাইদহের একটি আদালতে তোলা হয়।
সেখানে তিনি জানান, আকিকার ছাগল জবাই করা নিয়ে তার গ্রামের মোশাররফ, বকুল মোল্লা ও সেলিম মেম্বরের সাথে গ্যাঞ্জাম হয়। রাতে তাদেরকে ধরে নিয়ে যান হরিণাকুন্ডু থানার এসআই রাজ কিশোর পাল। পরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে তাদের দুর্বল ধারা দিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়।
এসআই রাজ কিশোর পাল জানিয়েছেন, তদন্ত করে দেখা গেছে তারা এক সময় জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল, এখন তারা কোন দল করেন না। তিনি বলেন, কালু ও সালাম গ্রামের নিরীহ মানুষ বলে তাদেরকে সন্দেহ মুলক মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে। রোববার রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা বাজার থেকে ৮/১০ জনকে আটক করেন নলডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্পের আইসি গোলাম হোসেন। আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ায় পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে গত ১৬ নভেম্বর গ্রেফতার হন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বানিয়াকান্দর গ্রামের নজরুল ইসলাম ও ইউনুস আলী। এই দুই ব্যক্তিকে জামায়াতের রোকন বলে পরিচয় করা হয়েছে। অথচ জামায়াতের রোকন হতে হলে যে গুনাবলী ও দলীয় পরীক্ষার সম্মুখিন হতে হয়, তাদের দুই জনার মধ্যে নুন্যতম তা নেই। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও পত্রিকায় নজরুল ও ইউনুস আলীকে জামায়াতের রোকন হিসেবে প্রচার করায় এলাকার মানুষ হতবাক। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝেও নানা প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
বানিয়াকান্দর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলামের ভাই নুরুল ইসলাম জানান, তার ভাই কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়ির ছিলেন না। শুধু মাত্র হয়রানি করার জন্য তাকে আটক করা হয়েছে। সরকারের কাছে আমরা এই মিথ্যাচারের বিচার চাই। বানিয়াকান্দর গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, বানিয়াকান্দর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলী মন্ডলের তিন ছেলের মধ্যে নজরুল ইসলাম মেজো। তিনি ছাত্র জীবনে ইসলামী ছাত্র শিবিরের একজন সমর্থক ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি ১৯৯৬ সালে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে দীর্ঘ দিন থাকার পর ২০০৪ সালে তিনি দেশে এসে কৃষি কাজে জড়িয়ে পড়েন। নজরুল ব্যাক্তি জীবনে চার সন্তানের জনক। বড় মেয়েকে তিনি বিয়ে দিলেও বাকি তিন সন্তান এখনো শিশু। তার স্ত্রী মনিরা বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন।
একই দিন পুলিশের হাতে আটক বানিয়াকান্দর গ্রামের দক্ষিনপাড়ার মৃত তারেক মন্ডলের ছেলে কৃষক ইউনুচ আলী পেশায় পান বরজের শ্রমিক। ১০ ভাই বোনের মধ্যে তিনি মেজো। তার অন্য ভাইয়েরা আওয়ামী লীগ সমর্থন করলেও তিনি কোন দলের সাথে জড়িত ছিলেনা। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করতে তিনি দ্বিধা করতেন না। আর এই মুখের দোষে তিনি জামায়াত না করেও এখন জামায়াতের রোকন সেজে হাজত বাস করছেন।
ইউনুস আলীর প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার বাড়ির সাথে মসজিদ থাকলেও তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন না। আর এমন একজন মানুষকে কি করে জামায়াতের রোকন বানানো হলো তা গ্রামবাসির হিসাব মেলে না। ইউনুস আলীর বড় ভাই আবু বকর বলেন, তার ভাই তো নামাজই পড়তেন না। তাহলে কেমন করে জামায়াতের রোকন হলেন?
বানিয়াকান্দ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বলেন, ইউনুচ আলী অত্যান্ত ভাল ছেলে। তাকে আমরা নিয়মিত নামাজ পড়তে দেখিনি অথচ সে জামায়তের রোকন হয়ে গেল ভাবতেই অবাক লাগে। পাগলাকানাই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মইনুল ইসলাম পলাশ ও সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী বলেন, নজরুল ইসলাম ও ইউনুচ আলীকে জামায়তের রাজনীতির সাথে জড়িত, এমন কথা কখনো আমরা শুনিনি।
বানিয়াকান্দর জামতলা বাজার দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহাজাহান আলী বলেন, যিনি নামাজ পড়েন না, তিনি রোকন হলেন কি ভাবে? বানিয়াকান্দর গ্রামের দক্ষিনপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি অনেক দিন ধরে ইমামতি করছি, কিন্তু ইউনুচ আলীকে মসজিদে আমি কখনো নামাজ পড়তে দেখিনি।
এ বিষয়ে নজরুল ও ইউনুস আলীর গ্রেফতার অভিযানের পুলিশ অফিসার ঝিনাইদহ সদর থানার উপ-পরিদর্শক উচ্চল মিত্র জানান, সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে রোকন হওয়ার দালিলিক প্রমানাদি, জোহাদী বই ও সংগঠনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তিনি দাবী করেন, তারা জামায়াতের রোকন। এ সম্পর্র্কে তারা নিজেরই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড শাহীনকে ধরতে ডিবির পরিকল্পনা
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ধারণা, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমবিস্তারিত পড়ুন
তৃতীয়বার আনারকে মনোনয়ন দিয়েছি জনপ্রিয়তা দেখে: কাদের
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার) স্বর্ণ চোরাচালানকারীবিস্তারিত পড়ুন
মাস্টারমাইন্ড শাহীনের অগাধ রহস্য
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতের কলকাতায় হত্যাকাণ্ডেবিস্তারিত পড়ুন