নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন, বিএনপি প্রার্থীর বড় ব্যবধানের পরাজয়ের ময়নাতদন্ত চান খালেদা জিয়া
নারায়ণগঞ্জে স্মরণকালের সবচেয়ে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর বড় ব্যবধানের পরাজয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে ফলাফলের ‘ময়নাতদন্ত’ চেয়েছেন।
এর আগে ঢাকার বাইরে অন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিএনপির প্রার্থীরা ব্যাপক ভোটে জয়ী হলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কীভাবে বিপরীত চিত্র এলো, সেটিই এখন দলীয় পরিমণ্ডলে সবচেয়ে আলোচনার বিষয়।
পরাজয়ের বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারছেন না দলটির দায়িত্বশীল থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। যেখানে বড় ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেখানে বড় পরাজয়ে বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়েছেন তারা। বিশেষ করে ভোটের ব্যবধান কীভাবে এত বেশি হলো, তা নিয়েই চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। এই পরিস্থিতিতে নাসিক নির্বাচনে দলটির দায়িত্বশীলরা জানাচ্ছেন, এই পরাজয়ের কারণ উদঘাটন করবেন তারা।
বড় ব্যবধানের এই পরাজয়ের বিষয়টিকে নির্বাচনে কারচুপি হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির দাবি, খালি চোখে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে মনে করা হলেও অভ্যন্তরীণ কারচুপি হয়েছে। এ নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তও দাবি করছেন বিএনপি নেতারা।
দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাহ্যিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের বাতাবরণ সৃষ্টি করে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সত্যিকার অর্থে গণরায়ের প্রতিফলন ঘটলে আমরা সেটিকে শুভেচ্ছা জানাই। তবে ধানের শীষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের কারচুপির অভিযোগকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী পৌনে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফল অনুযায়ী, আইভীর নৌকা পেয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাখাওয়াতের ধানের শীষ পেয়েছে ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট।
তবে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান ‘ভোট গণনায় ত্রুটি’ হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সাখাওয়াতের এই সন্দেহের দিকে ইঙ্গিত করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ধানের শীষের প্রার্থীর অভিযোগকে আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি।’ সেজন্য নির্বাচনের ভোটগ্রহণ, গণনা, ফলাফল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান তিনি।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে তারা দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের নেপথ্যে বেশ কিছু কারণকে সামনে আনছেন। যেগুলোকে তারা হারের অন্যতম প্রধান ফ্যাক্টর হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছেন। এর মধ্যে মূল কারণ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ নেতাদের অভ্যন্তরীণ বিভেদকে বড় করে দেখা হচ্ছে। নাসিক নির্বাচনে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় প্রাক্তন সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, শহরে জেলা সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার এবং বন্দরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রাক্তন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, দায়িত্বশীলরা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। কারণ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান পরাজিত হলেও জয়ী হয়েছেন জেলার শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা। দুজনের মধ্যে প্রাক্তন এমপি গিয়াসউদ্দিনের ছেলে গোলাম মোহাম্মদ সাদরিল ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে এসব জায়গায়ই সাখাওয়াত হেরেছেন।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন, বিএনপির দুজন নেতা জিতলে সাখাওয়াত হারে কীভাবে? তাহলে কি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাখাওয়াতকে মেনে নেওয়া যায়নি।
জানা গেছে, বিভিন্ন জেলায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভেদ থাকলেও নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে তা নিয়ন্ত্রণহীন। নির্বাচনের আগে এই বিভেদ মেটাতে খালেদা জিয়া স্পষ্ট নির্দেশনা দিলেও তা প্রশমিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। উল্টো বিভেদ আরো বেড়েছে।
তবে নির্বাচনে হারের ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের কোনো দোষ দেখছেন না দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নাসিক নির্বাচনে বিএনপির সমন্বয়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় নেতৃত্বের সাংগঠনিক দুর্লবতা সকল দলেই থাকে। সেটা আমাদের নির্বাচনে এফেক্ট করে নাই। আমরা কেন্দ্রীয় নেতারা তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। প্রচারণার ক্ষেত্রে আমাদের প্রার্থী এগিয়ে ছিল। সর্বত্র তার প্রচার হয়েছে।’
এদিকে অনেকে নেতা-কর্মী মনে করেন, বিএনপি প্রার্থীর হারের জন্য দুর্বল প্রার্থীই দায়ী। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিপরীতে সাখাওয়াত হোসেন দুর্বল প্রার্থী। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে বিএনপির মূল ধারার কোনো নেতা প্রার্থী হলে চিত্রটি অন্যরকম হতে পারত বলেও মনে করছেন তারা। অনেকে আবার নির্বাচনে খালেদা জিয়ার প্রচারণায় না যাওয়াকে দুষছেন। তবে নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির পক্ষে কাজ করেনি বলে নারায়ণগঞ্জের অনেক নেতা দাবি করেছেন। সম্প্রতি বিএনপি জামায়াতকে এড়িয়ে যাওয়ায় নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দৃশ্যত, জামায়াতকে আমাদের সঙ্গে প্রচারণায় দেখেননি, কিন্তু ইট ওয়াজ আন্ডারস্টেন্ডিং। টাইম টু টাইম তারা জানিয়েছে, কোথায় কোথায় কাজ করছে, কী করছে। তাদেরকে যে দায়িত্বগুলো আমরা দিয়েছি, সেই দায়িত্বগুলো পালনে তাদের ত্রুটি পাইনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের দলের ত্রুটি পেয়েছি, ওদের ত্রুটি পাইনি।’
বিএনপির গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের ফলাফল শোনার পর ওই রাতে খালেদা জিয়া কারো সাক্ষাৎ দেননি। এমনকি ফোনেও কারো সঙ্গে কথা বলেননি। নির্বাচনের ফলাফলে খালেদা জিয়া চরম অসন্তুষ্ট হয়েছেন। ক্ষুব্ধ বিএনপি নেত্রী কীভাবে এই ফল বিপর্যয় হলো, তা তদন্ত করতে দায়িত্বশীলদের নির্দেশ দিয়েছেন। পুরো নির্বাচনের ‘ময়নাতদন্ত’ চান তিনি।
তবে নাসিক নির্বাচনে বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও ফলাফলটি ‘আনফেয়ার’ হয়েছে। ফলাফল অপ্রত্যাশিত। নির্বাচনে বিএনপির সমন্বয়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দৃশ্যত, নির্বাচনটা ফেয়ার, ফলাফলটা আনফেয়ার। এই ফলাফল অপ্রত্যাশিত এবং বিশ্বাসযোগ্য নয়। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। আমার কথাটা হলো, ভোটের ফলাফলের যে ব্যবধানটা, এটা অত্যন্ত অবিশ্বাস্য।’
নির্বাচনের ফলাফল তদন্ত করবেন জানিয়ে বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, ‘আমাকে এই আলামতই খুঁজতে হবে, এই ফলাফলটা কীভাবে তৈরি হলো ও ফলাফলটা কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারা (গণমাধ্যম) প্রচার করল, প্রকাশ করল। যেহেতু আমার জবাবদিহিতার ব্যাপার আছে, তাই এখন আমার একটা দায়িত্ব – এটা বের করা।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরব গেছেন মির্জা ফখরুল
পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব গেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জাবিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের জামিন
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনকে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকবিস্তারিত পড়ুন
সব পন্থি সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুধু ডান আরবিস্তারিত পড়ুন