নারী কি পোশাক পরবে? নির্ধারণ করছে বিকিনি থেকে বুরকিনি
নিচের ছবিতে একজন পুলিশ আর বিকিনি পরিহিতা একজন আবেদনময়ী নারীকে দেখা যাচ্ছে। ইতালির অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলের রিমিনি সৈকতে ছবিটি তোলা হয় ১৯৫৭ সালে। সেই সময় ইতালিতে বিকিনি পরা নিষিদ্ধ ছিল। জনসমক্ষে এমন পোশাক আপত্তিকর বলে বিবেচিত হতো।
এদিকে, ফ্রান্সে বুরকিনি পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর বিকিনি তার ৭০তম জন্মবার্ষিকী পালন করছে। প্যারিসির ফ্যাশন গ্যালারিতে সেই ১৯৪০-এর দশকের বিকিনির ছবি দিব্যি শোভা পাচ্ছে।
নারীর পোশাক নিয়ে যুগে যুগে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। এর মাধ্যমে কি সমাজ নারীর পোশাকে নিয়্ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে?
ইতিহাসবিদ, সমাজবিজ্ঞানী এবং নৃবিজ্ঞানীদের মতে, নারীর দেহ একটা যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে বহুবার। বহু আগে থেকেই পুরুষ নারী পোশাকের বিষয়ে নানা নিয়ম-কানুন চালু করেছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে ফ্রান্সের সারাহ ফেকিহ লিখেছেন, আমরা কি পরবো তা কি এই ২০১৬ সালেও ঠিক করতে পারছি না? কোনো নারী যদি এমন কিছু পরেন যা তাকে প্রায় নগ্ন রাখে, এটা কি তার ব্যক্তিগত পছন্দ নয়? এর ওপর কি আইন হস্তক্ষেপ করবে?
ফ্রান্সে বুরকিনি নিয়ে বিতর্ক একমাত্র নারীবাদের বিষয় নয়। এটা ফ্রান্সে ইসলামের নিদর্শন। দেশটিতে সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে এই বিতর্ক উস্কানি পেয়েছে। জুলাইয়ের ১৪ তারিখে জনবহুল এলাকায় ৮৬ জনকে হত্যা করা হয়। আহত হয়েছেন ৩০০ জন। আইএস এ হামলার দায় শিকার করে।
এর মাসখানেক বাদে ফ্রান্সের সৈকতগুলোতে বেশ কিছু পোশাক বাতিল করা হয়। বিশেষ করে মুসলিমদের পোশাককে টার্গেট করা হয়। যদিও ফ্রান্সের সর্বোচ্চ আদালত কাউন্সিল অব স্টেট বুরকিনি নিষিদ্ধের আইনকে রদ করেছে। ফ্রান্সের সব শহর থেকে এই আইনকে তুলে দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছেন আদালত।
এ নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে। সবাই ফ্রান্স এবং স্বজাতি এবং ইসলাম নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু বিবেচনার বিষয় হলো, এই ইস্যুতে একমাত্র নারীদের পোশাককে বেছে নেওয়া হয়েছে।
ইতিহাসে দেখা যায়, আইনব্যবস্থা, স্থানীয় আইনব্যবস্থা এবং সামাজিক চাপ নারীদের পোশাক নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ফ্রান্সে এখন এমন এক সামাজিক পরিবেশ বিরাজ করছে যেখানে নারীদের প্রায় নগ্ন থাকতে বলা হচ্ছে।
বিকিনি বা বুরকিনি যাই বলেন না কেন, আইনপ্রণেতারা বলছেন, এই নিয়মগুলো নারীদের ভালোর জন্যই করা হচ্ছে। এমন মন্তব্য করেছেন ইউনিভার্সিটি অব নেভাদার ইতিহাসের প্রফেসর ডেইদ্রে ক্লেমেন্ট। তিনি নারীদের ড্রেস কোড নিয়ে গবেষণা করেন।
১৯৮০-এর দশকে আমেরিকার বড় বড় কিছু কর্পোরেশন নারীদের পোশাক পরার বিষয়ে ৪ পাতার নিয়ম-কানুন ধরিয়ে দেয়। আর কর্মক্ষেত্রে পুরুষরা কি পরবেন সে বিষয়ে চাল লাইনেই নিয়ম শেষ করা হয় বলে জানান প্রফেসর ক্লেমেন্ট।
বিকিনির ক্ষেত্রে অনেক দেশেরই আপত্তি রয়েছে। অনেক সৈকত রয়েছে যেখানে বিকিনি পরলে জরিমানা করা হয়। আবার এমনও সৈকত আছে যেখানে দেহে কিছু থাকলেই জরিমানা করা হয়। এ সবই মূলত মূল্যবোধের দুর্বলতা, বলেন বিশেষজ্ঞ।
বিকিনি বা স্যুইমস্যুট বাজারে আসার প্রথম কয়েক বছর নিষিদ্ধ ছিল ইতালি, স্পেন এবং আটলান্টিক উপকূলের বেশ কয়েকটি সৈকতে। এ তথ্য দেন ‘বিকিনি: লা লিজেন্ডে’ বইয়ের লেখক গিসলাইন রাইয়ার।
ইউনিভার্সিটি অব স্ট্রাসবার্গের হানানে কারিমি বলেন, বুরকিনির ওপর নিষেধাজ্ঞা সেই একই ইতিহাস প্রকাশ করে। কিছু দেশে পোশাকের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইতালিতে একই কারণে নারীদেহের উন্মুক্ত প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আজকের ফ্রান্সে ধর্ম নিরপেক্ষতার ওপর সিভিল রেলিজিওন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ভ্যাটিকানের প্রভাবেও ইতালি নারীদেহকে ঢেকে রাখার প্রয়োজন অনুভব করে। আবার ফ্রান্স একে উন্মুক্ত রাখার প্রয়োজন অনুভব করছে।
বিকিনি ডিজাইন করেছিলেন লুইস রিয়ার্ড। ১৯৪৬ সালের ৫ জুলাই প্যারিসের মলিটর পুলে বিকিন প্রদর্শন করেন। কিন্তু তখন এটি পরার জন্য কোনো মডেলকে পাওয়া যায়নি। কেউ পরার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি।
সিনেমার কল্যানে বিকিনি দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাও ১৫ বছর লেগে যায়। ফ্যাশন দুনিয়ার মূলধারায় প্রবেশ করতে বিকিনির বহু সময় লেগে যায়। অন্যান্য দেশ বিকিনি গ্রহণ করার আগেই অবশ্য ফ্রান্স তা গ্রহণ করে নেয়। এমনকি এটি পরে সূর্যস্নান বা টপলেস হয়ে সাঁতরানোর সুযোগও মেলে সেখানে।
প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির সমাজবিজ্ঞানী জোয়ান ওয়ালাচ স্কট জানান, ফ্রান্সের গণতান্ত্রিক চিন্তধারায় নারী-পুরুষের সমঅধিকার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিশীল হতে সমস্যা রয়ে গেছে। কারণ প্রকৃতিগতভাবেই নারী ও পুরুষ ভিন্ন। তাই তাদের মধ্যে সমতা আনা সম্ভব নয়। তাই সমতার কথা বললেও নারী-পুরুষের পার্থক্য স্পষ্ট করে দেওয়াটা প্রয়োজন বলে মনে করছে ফ্রান্স।
১২০টি দেশে সাঁতারের পোশাক বিক্রি করেন লরেনকো। তিনি মুসলমান নন। কিন্তু মুসলিক নারীদের জন্য পোশাক ডিজাইন করেন। এই নারীকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কেন মুসলিম নারীদের পোশাক ডিজাইন করেন? জানান, আমার উত্তর অতি সাধারণ। দিন শেষে নারীরা নারীই থাকেন। মুসলিম কিংবা অন্য কোনো ধর্মেরই হোক না কেন। সব নারীই চান তাকে সুন্দর দেখাক এবং নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য তার মাঝে প্রকাশ পাক। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন