নাসিরের দলভুক্তি শুধুই আইওয়াশ?
আচ্ছা, নাসির হোসেনকে যখন আবার দলে ফেরানোই হলো, তখন শুধু সাসেক্সের কন্ডিশন ক্যাম্প- প্রস্তুতি ম্যাচ আর আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি ক্রিকেটে কেন? কেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নয়? তবে কি নাসিরের ওপর কোচ, অধিনায়ক ও নির্বাচক তথা টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা কমে গেছে?
আরেক পক্ষের মত, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল এখনই ঘোষণা না করে আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি আসরের পর করলে কি হতো? বরং তখন করলেই বোধ হয় ভালো হতো। সাসেক্সে ১০-১২ দিনের কন্ডিশনিং ও ট্রেনিং ক্যাম্প ও আয়ারল্যান্ডে স্বাগতিক আইরিশ এবং কিউইদের সাথে তিন জাতি টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স দেখে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল সাজালেই কি বেশি ভালো হতো না? তাতে করে সব ক্রিকেটারের সর্বশেষ ফিটনেস লেভেল ও পারফরম্যান্সের অবস্থা জানা হতো। তা দেখে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য দল নির্বাচনও করা যেত?
আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি টুর্নামেন্টের পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল সাজালে নাসিরের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পেতেন নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট। তাকে যখন নেয়াই হয়েছে, তার সত্যিকার অবস্থাও দেখা হতো। জানাও যেত। নানা প্রশ্ন ও গুঞ্জন এখন ক্রিকেট পাড়া ও ভক্ত-সমর্থকদের মনে।
নাসিরকে ইংল্যান্ডে প্রস্তুতি পর্ব আর আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি আসরেই শুধু নেয়া হয়েছে কেন, কেনই বা তাকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নেয়া হয়নি? এ প্রশ্নর সত্যিকার ব্যাখ্যা নেই। তবে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু দল ঘোষণার সময় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সন্মেলনে যা বলেছেন, তার সারমর্ম হলো, নাসির কিছু দিন জাতীয় দলের বাইরে। তাই তাকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে না নিয়ে আমরা আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি টুর্নামেন্টে নিয়েছি। সেখানে তার পারফরম্যান্স দেখে তারপরও তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা।
তার মানে, নাসিরকে ফেরানো হয়েছে ঠিক, কিন্তু তার দলে জায়গা মোটেই পাকা ও মজবুত নয়। অস্থায়ী! নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট মুখ ফুটে বলছেন না, তবে ভেতরের খবর, নাসিরের ভালো ফর্ম, মাঠের কার্যকর পারফরম্যান্স আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ায় লেখালেখির কারণেই আসলে তাকে দলে নেয়া।
বলার অপেক্ষা রাখে না, নাসির যেখানেই সুযোগ পাচ্ছেন ভালো করছেন। মাঝে জাতীয় দল যখন শ্রীলঙ্কায়, তখন ইমার্জিং কাপে নেপালের বিপক্ষে চরম বিপদে সেঞ্চুরি করে দল জিতিয়েছেন। এবারের প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি যেন পুরনো নাসিরকেই মনে করিয়ে দিয়েছে।
তারপরের ম্যাচেও নাসিরের ব্যাট থেকে এসেছে ৪১ রানের হার না মানা ইনিংস। সব মিলে নাসিরের ব্যাট কথা বলছে।
প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসন করছেন। ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছে। আর ভক্ত-সমর্থক ও নিরপেক্ষ ক্রিকেট অনুরাগীরাও তার বিষয়ে ব্যাপক উৎসাহী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাসির ‘ক্রেজ’ অস্বাভাবিক।
ভেতরের খবর হলো, সে কারনেই নাসিরকে আবার ফেরানো। তাই বলে নাসিরকে যে স্থায়ীভাবে দলে রাখা হবে, টিম কম্বিনেশনে তার জায়গা পাকাপোক্ত- এমন ভাবার কোনোই কারণ নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ মুহূর্তে টিম বাংলাদেশে নাসিরের ক্যাটাগোরির ক্রিকেটার আছেন আরও দুজন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এর মধ্যে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আছেন ফর্মের চূড়ায়।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টেস্টে সুবিধা করতে না পারলেও সীমিত ওভারের ফরম্যাটে রান করছেন নিয়মিতই। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুজনই আগে ব্যাটসম্যান। পরে অফস্পিনার। আর অফস্পিনার কোটায় দলে এসেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
শুরুতে রান খরায় ভুগলেও ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আবহের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া আর মেজাজ ও ধরনের সাথে তাল মিলিয়ে অফস্পিন বোলিংয়ের পাশাপশি মিরাজ এখন ব্যাট হাতেও নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে শুরু করেছেন।
কাজেই টিম কম্বিনেশনে মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক ও মিরাজকে পেছনে ফেলে নাসিরের ১১ জনে জায়গা করে নেয়া সত্যিই খুব কঠিন। তাই একই ক্যাটাগোরির এতগুলো ক্রিকেটার দলে রাখার বিপক্ষে কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্ট। তারা নাসিরের নজরকাড়া পারফরম্যান্স ও দর্শক-ভকক্তদের চাপে নাসিরকে দলে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
তবে নাসির এ মুহূর্তে টিম কম্বিনেশনে দলে থাকার জোর দাবিদার- এমন মনে করে না টিম ম্যানেজমেন্ট। তাই তাকে আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি টুর্নামেন্টে নেয়া হলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নেয়া হয়নি। প্রকাশ্যে না নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা না করলেও নির্বাচকরা তাই নাসিরকে চ্যাস্পিয়ন্স ট্রফির মতো বিশ্ব আসরে নাসিরকে ১৫ জনে জায়গা করে দিতে পারেননি।
তবে হ্যাঁ, নাসির যদি সাসেক্সে অনুশীলন ক্যাম্পে ভালো করেন আর আয়ার্যান্ডে তিন জাতি টুর্নামেন্টে সুযোগ পেলে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন- তখন প্রশ্ন উঠবে, ‘ইস, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল যদি আয়ারল্যান্ডের পারফরম্যান্স দেখে চূড়ান্ত করা হতো, তাহলে নাসিরের কপাল খুলে যেত।’
কঠিন সত্য হলো, নাসির আয়ারল্যান্ডের মাটিতে খুব ভালো খেললে তার সমর্থকরা আফসোস করতে পারবেন। কিন্তু বলার তেমন কিছুই থাকবে না। কারণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আইসিসির আসর। এখানে আইসিসির নিয়ম ও নীতি মেনেই সব কিছু করতে হয়। এ আসরে দল ঘোষণার একটা নির্দিষ্ট সময়-সীমা আছে।
তার প্রমাণ গত কয়েক দিনে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ দল ঘোষণা করেছে। কাজেই, আয়ারল্যান্ডের তিন জাতি টুর্নামেন্ট দেখে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণার সুযোগও নেই।
মোদ্দাকথা, আয়াল্যান্ডে সুযোগ পেলে নাসির যদি সামর্থ্যের প্রমাণটা নতুন করে দিতে পারেন এবং আবারও ‘ফিনিশারের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন- তখনই কেবল তার হারানো জায়গা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা থাকবে। না হয় এই ডাক পাওয়াটা শুধুই ‘আইওয়াশ’ হয়েই থাকবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন