পতিতালয় থেকে আশ্রয় চেয়ে এক তরুনী যা লিখেছিল
সাজু, কাল মাঝ রাতে ঘুম জেগে তোমাকে এই চিঠিখানা লিখলাম। চিঠিখানা লিখতে আমার সারা রাত কেটে গেল। এখানে, যে কামরায় আমি থাকি তার ডান পাশে একটি জানালা আছে। সরদারনি কখনোই এই জানালাটি খুলতে দেয়নি আমাকে। আজ সরদারনি ভীষন অসুস্থ্য। ঘুমিয়ে পড়েছে। পাশের কামরায় থাকে সে। এই সুযোগে জানালাটি আমি খুলে ফেলেছি। এখান থেকে স্পষ্ট আকাশ দেখা যায়। আজ মনে হচ্ছে ভরা পূর্ণিমা। রহিম চাচা বলতেন, ভরা পূর্ণিমায় আকাশের দিকে চেয়ে থেকে সৃষ্টিকর্তার নিকট কিছু চাইলে নাকি পাওয়া যায়। আজ আমি তাই চাইবো।
এখানে একজন আপা আর একজন ভাই এসেছে। তারা আমাকে নতুন আলোর মুখ দেখানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তারা সাংবাদিক। কাল আমি মুক্তি পেতে যাচ্ছি এই বিষন্ন পাপিষ্ট জীবন থেকে। এখান থেকে চলে গেলে তোমাকে আর দেখতে পাবোনা কোনদিন।তাই সারা রাত জেগে তোমার কথা ভাবছি। এখন প্রায় শেষ রাত। লুকিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে চিঠিখানা লিখলাম। জানিনা তোমার কাছে পৌঁছবে কিনা! পৌঁছলেও তুমি আমার এই আকুতির কোন মর্যাদা দিবে কিনা!
আমার মা দারিদ্রতার কষাঘাতে টিকতে না পেরে আত্মহত্যা করে মারা যায়। তখন আমি অনেক ছোট। লোকের কাছে শুনলাম আমার বাবা ঢাকা শহরে থাকতেন। জন্মের তিন মাস পর আমাকে রেখে পালিয়েছেন। মা আমার না খেয়ে, না পরে জীবন কাটাতেন। মায়ের মুত্যুর পর আমাকে রহিম চাচা তাঁর কাছে রেখে দেয়। কষ্ট করে আমাকে মানুষ করে। স্কুলে পাঠায়। ক্লাসের ভাল ছাত্রিদের মধ্যে আমিও একজন। আমি গল্প, কবিতা এসব লিখতাম। সহপাঠিরা আমার লেখা পড়ে মজা পেত। আজ আমি এখানে আছি, কিভাবে এলাম তারা কেউই জানেনা। হয়তো সবাই আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
আমি এখানে আসার একমাস আগে আমার পালক পিতা রহিম চাচা মারা যায়। রহিম চাচার একটি ছেলে আছে। আমার ভাই। কিন্তু সৎ বলে আমাকে সে দেখতে পারতো না। অসহায়ত্ব যখন আমাকে ঘিরে বসলো তখন আমি এক অমানুষের দেখা পাই। তার নাম আজ আর নিব না। তার শাস্তি আমি নিজ হাতেই দিব একদিন। সে আমাকে কাজ দিবে বলে এখানে নিয়ে আসে। তারপর, যে সরদারনি এখন ঘুমাচ্ছে তার কাছে আমাকে রেখে চলে যায়।
এই পতিতালয়ে অনেক লোক এসেছে… আমাকে পছন্দ করেছে। কিন্ত বিশ্বাস কর আমি তোমার পরে আর কারো সাথে থাকিনি। আমাকে অনেক মেরেছে এই সরদারনি। তোমার সাথে মিলিত হবার আগের রাতে আমাকে এমন মার মেরেছে এবং বলেছে কাল সকালে কাজ না দিলে মেরে ফেলবে। এখানে কারো দয়া মায়া নেই। কারোই না!
তোমার সাথে কাজ করার পর আমি বলে দিয়েছি খুন করলেও আমি দ্বিতীয় কারো সাথে থাকবো না। অবশেষে সরদারনি আমার সাথে না পেরে আমাকে তার আন্ডারে যত লোক আছে তাদের খাবার রান্নার কাজ দেয়। আমি স্বাচ্ছন্দে রান্নাসহ ধোয়া মোছার কাজ করে পেঠ বাচাই।
এই পর্যন্ত তুমি এখানে তিন বার এসেছ। আমাকেই তুমি খুঁজে নিয়েছ। তোমার অপলক দৃষ্টি, সুন্দর হাসি আমাকে মুগ্ধ করেছে বারংবার। আমি জানি তুমি হয়তো আবার আসবে। আমাকে না পেয়ে তোমার মন খারাপ হবে। তাই এই চিঠি লেখা। এটা সাংবাদিকদের কাছে দিয়ে যাবো। তারা যদি তাদের পত্রিকায় ছাপিয়ে দেয় তুমি হয়তো দেখতে পাবে। সবকিছুর আড়ালে তোমার জন্য এ কেমন মায়া। আমি বুঝতে পারছিনা। বুক ফেটে কান্নার জল মাটিতে পড়ছে আমার। কি নিশ্বব্ধ বেদনা।
আমি নিরপরাধ, নিষ্পাপ এক তরুনী…কখনো তোমার দেখা পেলে আবার বুকে জড়িয়ে নেব। তবে পবিত্র নিঃশ্বাস দিয়ে। তুমি চাইলে বিশ্বাস করে ফিরে আসতে পারো আমার জীবনে। তুমি তো সুখ পেতে বলেই তিন বার ফিরে এসেছ আমার কাছে। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো। নতুন জীবন গড়ব তোমায় নিয়ে।
ইতি,
নিশি আক্তার
আমাদের কন্ঠস্বর প্রতিনিধি: অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে গিয়ে আমাদের কন্ঠস্বর স্থানীয় প্রতিনিধি বাংলাদেশের একটি প্রসিদ্ধ পতিতালয়ে এই মেয়েটির দেখা পায়। সেখানে তার সরদারনি এই চিঠিতে লিখা সকল কথা সত্য বলে স্বীকার করেন। আমরা মেয়েটিকে পূনর্বাসনের আশ্বাস দিলে তিনি রাজি হয়ে যান। অত:পর আমরা মেয়েটিকে এনে ঢাকা শহরের একটি স্বনামধন্য গার্মেন্টস কারখানায় ভালো বেতনে একটি চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেই। তার অনুরোধে এই চিঠিখানা আমরা প্রকাশ করি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন