পাকিস্তান-রাশিয়া বন্ধুত্ব কী বার্তা দিচ্ছে দক্ষিণ এশিয়াকে?
স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার দুই শত্রু পাকিস্তান এবং রাশিয়ার মধ্যকার বৈরীভাবাপন্ন সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতির বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম ডেইলিও-তে একটি নিবন্ধ লিখেছেন সাংবাদিক কাওসার ক্লেসরা।
নিবন্ধে তিনি বলেন, ইসলামাবাদ মস্কোকে আমদানি-রফতানির জন্য গাওদার সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছে।
সম্প্রতি রাশিয়ার গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান বোর্টনিকোভের গোপনে পাকিস্তান সফরের সময় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত ১৪ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম রাশিয়ার কোনো বড় কর্মকর্তা পাকিস্তান সফরে আসলেন।
বোর্টনিকোভ ভ্রমণের সময় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা শাখার বেশ কয়েকজন ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসময় তিনি পাকিস্তানের গোয়েন্দা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রিজওয়ান আখতারের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
ইসলামাবাদের কর্মকর্তারা বলেছেন, চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিপিইসি) অংশ হতে চায় রাশিয়া। একই সঙ্গে তারা গাওদার বন্দরকে আমদানি-রফতানির জন্য ব্যবহার করতে চান।
পাকিস্তানের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মেইল টুডেকে বলেন, সিপিইসিতে রাশিয়ার যুক্ত হতে চাওয়ার আবেদনকে স্বাগত জানাচ্ছে পাকিস্তান। তিনি আরও বলেন, কয়েক মাসের মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।
পাকিস্তানের অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, রাশিয়া-পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের সাম্প্রতিক অগ্রগতি থেকে বোঝা যাচ্ছে স্নায়ুযুদ্ধের আগে ও পরে দুই দেশের মধ্যকার বৈরীভাবাপন্ন সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কৌশলগত সম্পর্ক ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে বলেই মেনে নেওয়া হয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র চীনের আগ্রাসন কমাতে নিজেদের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও ব্যবসায়িক চুক্তি বাড়াচ্ছে।
অপরদিকে, স্নায়ুযুদ্ধের জোট পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র যারা ১৯৮০ সালে একই সঙ্গে আফগান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ক্রমাগত শীতল হচ্ছে।
২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের নিহত হওয়ার পর থেকেই সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে দুই দেশের মধ্যে।
এরপর সম্প্রতি পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান ক্রয়ে অর্থ সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের ভেটোর পর সম্পর্ক আরও অবনতি হতে পারে।
এদিকে ইসলামাবাদ ও মস্কো তাদের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও ব্যবসা ক্ষেত্রে চুক্তির পরিমাণ বাড়াচ্ছে।
গত বছর সেপ্টেম্বরের ২৪ থেকে অক্টোবরের ১০ তারিখ পর্যন্ত পাকিস্তান-রাশিয়ার যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নেয় রাশিয়ার ২০০ সেনা সদস্য।
২০১৪ সালে সেনা সহায়তা বাড়ানোর চুক্তির পর দুই দেশ ওইবারই প্রথম প্রতিরক্ষা কার্যক্রম দেখায়। নওয়াজ শরীফ তৃতীয়বার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে তৎপর হন তিনি।
তুর্কেমিনিস্তান ভ্রমণের সময় নওয়াজ শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়ার সিপিইসিতে যুক্ত হওয়ার আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান।
ইসলামাবাদের উপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকের পর ২০১৪ সালে সম্পর্কের উন্নতি শুরু হয়। ২০১৫ সালে মস্কো পাকিস্তানের কাছে চারটি এমআই-৩৫এম হেলিকপ্টার বিক্রিতে সম্মত হয় এবং পাকিস্তানের সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন এ যুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানায়।
রাশিয়ার সিপিইসিতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছাতে অনেক পাকিস্তানিই অবাক হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান অবিশ্বাস দূর করার জন্য অনেকটা পথই পাড়ি দিতে হবে তাদের।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মোহাম্মদ শাহবাজ বলেন, স্নায়ু যুদ্ধের সময় দুই দেশের মধ্যে এক তিক্ততার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে যে সম্পর্ক পরিবর্তন হয়নি সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরও।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন