পৃথিবীতে আর কিছুই নেই বইয়ের বিকল্প : অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ: উন্নত জীবন যাপনে বই মানুষকে সহায়তা করে। বইয়ের বিকল্প পৃথিবীতে আর কিছুই নেই। বইয়ের আলোচনায় দর্শক থাকতে চান না। কিন্তু নিউ ইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশিদের বইপ্রেম দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।
নিউ ইয়র্কে তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলা উদ্বোধনের করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এসব কথা বলেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ৬৯ নম্বর পাবলিক স্কুলে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মাত্র ১৫ জন সদস্য নিয়ে শুরু হয়েছিল, এখন সদস্য সংখ্যা ১৫ লাখ। চলতি বছর ১৯ লাখে পৌঁছেছে। সঠিকভাবে হাঁটতে চাইলে মানুষের শক্ত দুটি পায়ের প্রয়োজন। একটি পা দিয়ে নাচ করা যায়, কিন্তু হাঁটা যায় না। তিনি বলেন, নিউ ইয়র্কে বই মেলার দুই যুগ পূর্ণ হলো। এ উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব হচ্ছে। দেশের বাইরে বাংলা ভাষাভাষি মানুষদের জন্য এটা বিরাট একটা অর্জন।
আগামী বছর রজতজয়ন্তীতে আরো বড় অনুষ্ঠানে বাঙালিরা উৎসবে মেতে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্রে এই উৎসবের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি আয়োজকদের আহবান জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে আবার মঞ্চে আসেন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। এ সময় তিনি বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বই বিরোধী। বইয়ের সঙ্গে মানুষের একমাত্র সম্পর্ক হয় পরীক্ষা দেবার সময়।
এবারের বইমেলার আহবায়ক রোকেয়া হায়দার স্বাগত বক্তব্যে বই মেলায় আগত সকল অতিথিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আগামী তিনদিন আমরা উৎসবে মেতে থাকবো। আপনারা যা বলবেন আমরা তা শুনবো, আর আমরা যা বলবো তা আপনারা শুনবেন। তিনি বলেন, বইমেলা এবং আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি এবং বিশ্ব বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাংলা উৎসবের প্রথম দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু লেয়ার লেভিনের উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে গিয়েছিলেন লেয়ার লেভিন। তার ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন দুর্লভ অনেক চিত্র। যে চিত্র দিয়ে পরে প্রয়াত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ তৈরি করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘মুক্তির গান।’
লেয়ার লেভিনের কাছ থেকেই সেই দুর্লভ চিত্রগুলো সংগ্রহ করেছিলেন। লেভিন নিজেও জানালেন সেই কথা। তাকে ২৪তম বই মেলা এবং আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবের প্রথম দিনেই সম্মাননা জানানো হয়। তাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসান।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে লেয়ার লেভিন আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আমি এই চিত্র দিয়ে ‘জয় বাংলা’ চলচ্চিত্র তৈরির চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার তা করতে পারিনি। তারেক মাসুদ এবং ক্যাথরিন মাসুদ আমার কাছে আসলে আমি তাদের তা নিঃশর্তে তুলে দিই। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ অনেক সুন্দর দেশ। বাংলাদেশের মানুষ ও তাদের সংস্কৃতিও সুন্দর।
তিনি বলেন, আমি যখন চিত্রগ্রহণ করছিলাম, সেই সময় আমাকে আমেরিকান স্পাই বলে গ্রেপ্তার করা হয়, আমেরিকায় পাঠিয়েও দেয়া হয়। লেয়ার লেভিনকে মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দেন সাংবাদিক ও কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস। লেভিনের বাড়ি যাওয়া এবং চিত্রগুলো তুলে দেয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন ফার্মাসিস্ট সৈয়দ টিপু সুলতান।
উদ্বোধনের পরই মঞ্চে ২৪টি মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে বইমেলা ও আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবের উদ্বাধনী অনুষ্ঠানের সূচনা করেন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, বইমেলার আহ্বায়ক ও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দার, বিশিষ্ট নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার, বিশ্বভারতীর পরিচালক রাম কুমার মুখোপাধ্যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিমোর ত্রিপুরা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিজ্ঞানী ও নিউজার্সির প্লেইন্সবরোর কাউন্সলম্যান ড. নূরন নবী, নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসান, প্রকাশক আমিনুল ইসলাম, আহমেদ মাজহার, হুমায়ুন কবীর ঢালি, সাংবাদিক আহমেদ মুসা, বিশিষ্ট ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, বীরু প্রকাশ পাল, হাসান ফেরদৌস, জার্মান প্রবাসী লেখিকা নাজমুন নেসা পিয়ারি, বিশিষ্ট লেখিকা শারমিন আহমেদ, সম্মুদাস গুপ্ত, নজরুল ইসলাম, সাংবাদিক মনজুর আহমদ, লেখক ফেরদৌস সাজেদীন প্রমুখ।
আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু হয় সঙ্গীত পরিষদের উদ্বোধনী সঙ্গীত এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে। জজ হ্যারিসনের সঙ্গীত দিয়েই নতুন প্রজন্মের শিল্পী দ্বিতীয় ফেরদৌস, দীপাঞ্জলি ভৌমিক, বাসমা, শ্রুতিকনা দাসের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে যশোর রোড কবিতা আবৃত্তি করে ও সৌরভ সরকার। আরো সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পী মেহরুন আহমেদ, মারিয়া ও স্থানীয় শিল্পী পার্থ সারথি মুখোপাধ্যায়। এর আগে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন কাবেরী দাশের পরিচালনায় নিউ ইয়র্কের সঙ্গীত পরিষদের শিল্পীরা।
পুরো অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা। যৌথ উপস্থাপনায় ছিলেন ডানা ইসলাম, ক্লারা রোজারিও, সাবিনা হাই উর্বি, মিহির চৌধুরী। মঞ্চ ব্যবস্থাপনা, অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন নিনি ওয়াহেদ ও সেমন্তী ওয়াহেদ।
এদিকে বিকালে বইমেলা ও আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব উপলক্ষে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভা যাত্রাটি বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বইমেলার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় অতিথিসহ সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশীরা অংশগ্রহণ করেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূস: নির্বিঘ্নে সব জায়গায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “এবার দুর্গাপূজারবিস্তারিত পড়ুন
সোমবারের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার
এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করেনবিস্তারিত পড়ুন
১৪ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৬৪ কোটি ডলার
এ মাসের প্রথম ১৪ দিনে এসেছে ১৬৪ কোটি ৬৭ লাখবিস্তারিত পড়ুন