প্রাথমিক সমাপনীঃ প্রথম দিনেই ঝরল দেড় লাখ শিশু
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় প্রথম দিনেই ঝরে পড়ল দেড় লাখ শিক্ষার্থী্। তারা সমাপনীর জন্য নিবন্ধন করলেও অংশ নেয়নি পরীক্ষায়।
এ বছর সারা দেশে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে নিবন্ধন করে ৩২ লাখ ৩০ হাজার ২৮৮ জন শিক্ষার্থী। রবিবার শুরু হওয়া সমাপনীর প্রথম দিন পরীক্ষার হলে সিটে বসেছে ৩০ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৫ জন। ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৬ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল এদিন। শতকরা হিসেবে এই হার ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ্।
অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে বসেনি ১ লাখ ১০ হাজার ১৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫৪ হাজার ২৮, আর ছাত্রীসংখ্যা ৪৬ হাজার ৯৮৯।
ইবতেদায়ীতে প্রথম দিন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ৪২ হাজার ২৯৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৬ হাজার ৩৫ আর ছাত্রী ১৬ হাজার ২৬৪ জন। এখানে অনুপস্থিতির দিক থেকে ছাত্ররা এগিয়ে রয়েছে।
প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষায় অনুপস্থিতির এই হারকে উদ্বেগজনক বলছেন শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘প্রাথমিকের প্রথম দিনে ঝরে পড়ার এই হার উদ্বেগজনক। কেন এমনটা হলো সরকারকে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।’ ভালোভাবে খতিয়ে দেখে সমস্যা সমাধানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দেন এই শিক্ষাবিদ।
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নতি করতে হলে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার কমাতে হবে। তা না হলে উচ্চশিক্ষায় সমস্যা থেকে যাবে।’
গণসাক্ষরতা আন্দোলনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার কমিয়ে শূন্যে নিয়ে আসার বিষয়ে আমরা বারবার সরকার তাগাদা দিচ্ছি। আমরা বেসরকারি সংস্থাগুলোও এ বিষয়ে কাজ করছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, দারিদ্র্য আর অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে প্রাথমিকের শিশুরা ঝরে পড়ে। ছেলেদের তারা ছোট থেকেই কাজে দিয়ে দেয়। এ কারণে ছেলেদের ঝরে পড়ার হারও বেশি।’
তবে আগের চেয়ে পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উন্নতি হচ্ছে বলে মনে করেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, ‘আগে তো ঝরে পড়ার হাল ছিল অনেক বেশি, ২৫-৩০ শতাংশ। সেখানে এখন ১৪ শতাংশ।’
সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি ঝরে পড়ার হার কমিয়ে আনতে। তারপরও কিছু বিষয় থেকেই যায় যে কারণে ঝরে পড়ে শিশুরা।’ এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
পঞ্চম শ্রেণির এই শিক্ষার্থীরা আজ প্রথম দিন অংশ নেয় ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষায়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার রবিবার রাজধানীর অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজে সমাপনী পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের এই সমাপনী পরীক্ষায় গত বছর ৩২ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৪ জন অংশ নিয়েছিল। সেই হিসেবে এবার অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধিত পরীক্ষার্থী কমেছে ২৪ হাজার ২২৬ জন। ৩২ লাখ ৩০ হাজার ২৮৮ জন শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছিল। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৩০ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৫ জন।
প্রাথমিক সমাপনীতে এবার নিবন্ধিত পরীক্ষার্থী ছিল ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৫৭৩ জন। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩২ জন ছাত্র; ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫৪১ জন ছাত্রী। ইবেতেদায়ীর ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭১৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩১৯ জন এবং ১ লাখ ৪২ হাজার ৩৯৬ জন ছাত্রী।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়। আর ইবতেদায়ীতে এ পরীক্ষা হচ্ছে ২০১০ সাল থেকে। প্রথম দুই বছর বিভাগভিত্তিক ফল দেওয়া হলেও ২০১১ সাল থেকে গ্রেডিং পদ্ধতিতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সমাপনীর ফল দেওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ৬৪ জেলাকে বিশেষ আটটি অঞ্চলে ভাগ করে আট সেট প্রশ্নে গত বছর থেকে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিচ্ছে সরকার।
এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার্থীরা ২০১২ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। পাঁচ বছরে সমাপনী পরীক্ষা আসতে আসতে ঝরে পড়েছে প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বিদ্যালয় জরিপ-২০১২ অনুযায়ী সে বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ৪২ লাখ ২৯ হাজার ১৯৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ছিল ২১ লাখ ৭১ হাজার ৫৬৯ জন এবং ছাত্রী ছিল ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৬২৮ জন। পাঁচ বছর পর তাদের মধ্যে এবার পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৫৭৩ জন। অর্থাৎ নিবন্ধনের আগেই গত পাঁচ বছরে ঝরে গেছে ১২ লাখ ৯৮ হাজার ৬২৪ জন শিক্ষার্থী।
গত বছরও নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ সমাপনী পরীক্ষা দেয়নি। আর নিবন্ধনের আগের পাঁচ বছরে ঝরে গিয়েছিল প্রায় নয় লাখ শিক্ষার্থী।
বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, উপবৃত্তি, স্কুল ফিডিং, বিনা বেতনে পড়ার সুযোগসহ সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের পরও ঝরে পড়ার হার কমিয়ে আনার গতি খুবই ধীর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৪ সালের এডুকেশন হাউসহোল্ড সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, স্কুলে ভর্তির পরও ছয় থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় নয় ভাগ পঞ্চম শ্রেণির আগে ঝরে পড়ে। এর মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বেশি। এ ছাড়া গ্রামের চেয়ে শহরে ছেলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বেশি। গ্রামে যেখানে ছেলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ৮ দশমিক ১১ ভাগ, সেখানে শহরে এ হার প্রায় ১১ ভাগ।
বিভিন্ন জরিপে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার পেছনে দারিদ্র্যকেই মূল কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া বেশি শিক্ষার্থী দেখাতে অনেক স্কুলে কিছু ভুয়া ভর্তি দেখানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো. মোস্তাফিজুর রহমানও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, এমনটাই ঘটে। যেকারণে সংখ্যায় তারতম্য দেখা দেয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
এইচএসসির ফল প্রকাশ মঙ্গলবার, জানা যাবে যেভাবে
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করাবিস্তারিত পড়ুন
বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নতবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন