প্রিয় বাবার মুখে সফল মাশরাফির জীবনের এক্সক্লুসিভ কিছু গল্প!
মাশরাফি বিন মুর্তজা, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিস্ময়কর ধারাবাহিক বিজয়ের এক মহানায়কের নাম।নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত ডান হাতি এই পেস বোলার এর জন্ম হয় ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । ডাক নাম তাঁর কৌশিক।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পরিবর্তে ফুটবল আর ব্যাডমিন্টন খেলতেই বেশি পছন্দ করতেন মাশরাফি। ২০০৬ সালে সুমনা হক সুমির সাথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন মাশরাফি। এই খেলোয়াড়ের জন্মদিনে আমাদের কন্ঠস্বর এর বিশেষ প্রতিবেদনে আজ তাঁর প্রেম ভালোবাসা, বৈবাহিক, খেলোয়াড় জীবন আর স্মুতিগাঁথা ছোট্র বেলার এক্সক্লুসিভ কিছু কাহিনি জানা যাবে।
বাবার মুখে মাশরাফি:
সেদিন শনিবার, ফ্লাইট এর জন্য অপেক্ষমান ভার্জিন এয়ারলাইন্সের ওয়েটিং রুমে বসে মাশরাফিকে নিয়ে অনেক স্মৃতিই মনে পড়ে যায় বাবা গোলাম মুর্তজার।
…………নানা বাড়িতে জন্ম মাশরাফির। বড়ও হয়েছেন নানা বাড়িতেই। মাশরাফির নানির মনে হয়েছিল তার মেয়ে (মাশরাফির মা) নাতিকে ঠিকভাবে লালন-পালন করতে পারবেন না। নানা বাড়ি লাগোয়া প্রাইমারি স্কুলে পড়লেও এসএসসি-এইচএসসি পাশ করেছেন নড়াইল সরকারি স্কুল ও কলেজ থেকে।
গোলাম মুর্তজা জানান, পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলেন মাশরাফি। তার এসএসসি-এইচএসসির ফলও ভালো ছিল। এইচএসসি পাশ করার পর দর্শন শাস্ত্রে অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ততদিনে মাশরাফি পুরোদস্তুর ক্রিকেটার। বাংলাদেশের পেস আক্রমণের সবচেয়ে বড় ভবিষ্যৎ। নিজের সেই ভালোবাসার খেলাকে সময় দিতে গিয়ে পড়াশোনাটা আর শেষ করা হয়নি মাশরাফির।
তার বাবা গোলাম মর্তুজা ছিলেন অ্যাথলেট। ক্রিকেট মোটেই ভালো লাগত না তার। কলেজ জীবনে হোস্টেলে তার রুমমেটরা ক্রিকেট খেলতেন। ক্রিকেটের বল-ব্যাট বাক্সে ভরে রাখতেন তারা। আর গোলাম মর্তুজা দুষ্টুমি করে সেই বাক্স মাঝেমধ্যেই রুমের বাইরে ফেলে দিতেন! সেই ক্রিকেট-বিদ্বেষী গোলাম মুর্তজার ছেলে মাশরাফির ক্রিকেটর সঙ্গে সখ্যতা কী করে হলো?
গোলাম মর্তুজা জানান, ছেলেবেলায় স্কুলের মাঠে বড়দের ক্রিকেট খেলতে দেখে মাশরাফি খেলাটিতে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তবে ফাস্ট বোলার বা মারকুটে ব্যাটসম্যান নয়, উইকেটরক্ষক হতে চাইতেন মাশরাফি।
উইকেটরক্ষকের হাতে গ্লাভস থাকে। মাশরাফির তো আর গ্লাভস ছিল না। দু’হাতে দুটি চপ্পল নিয়ে উইকেটরক্ষকের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন তিনি। বেশিক্ষণ সেখানে থাকতে পারতেন না। বড়রা তাকে সরিয়ে দিত, আর মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতেন তিনি।
যার ক্রিকেট নিয়ে এত আগ্রহ, তাকে কি আর আটকে রাখা যায়? কোনো বাধাই মাশরাফিকে আটকে রাখতে পারেনি। স্কুলের ক্রিকেট, নড়াইলের ক্রিকেট ঘুরে তিনি পৌঁছে যান বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দলে। ততদিনে মাশরাফি আর উইকেটরক্ষক নন, হয়ে গেছেন পেস বোলার।
ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়। ভালো বল করেন তিনি। এরপর প্রথম সফরে যান নিউ জিল্যান্ডে। তরুণ মাশরাফি সেখানে গতির ঝড় তোলেন। এরপরই তার নাম হয়ে যায় ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।
বাবা গোলাম মুর্তজার কাছে ক্রিকেটার মাশরাফি নন, মানুষ মাশরাফিই আগে জায়গা পায়। বাবার কাছে তার কৌশিক সাদা মনের আমুদে এক ছেলে।
নানা বিষয়ে বাবার সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই কথা হয় ছেলের। ক্রিকেট নিয়ে তেমন কথা হয় না।
মাশরাফির বাবা এমনিতে একটু ঘরকুনো প্রকৃতির মানুষ। এই কারণেই ছেলে এত বছর ধরে ক্রিকেট খেললেও এর আগে কখনো তার খেলা দেখতে দেশের বাইরে যাননি।
কী আশা নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছেন গোলাম মুর্তজা? এই প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফির বাবা তার স্বপ্নের কথা বলেন।
“আফগানিস্তান-স্কটল্যান্ডের পাশাপাশি আশা ছিল দল শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ডকেও হারাবে। এর মাঝে আমরা শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গেছি। বাকি আছে ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলা।”
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযানে বাংলাদেশে তাদের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি খেলবে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। ম্যাচটি হবে নিউ জিল্যান্ডের হ্যামিল্টনে। ম্যাচটি কি দেখতে যাবেন গোলাম মুর্তজা?
আপাতত তিনি আগামী সোমবার অ্যাডিলেইডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়েই ভাবছেন। এই ম্যাচ জিতলেই মাশরাফিরা উঠে যাবেন নকআউটে। গোলাম মুর্তজার চোখ সেই সীমানা দেখছে।
মাশরাফির বাবার মতোই পুরো বাংলাদেশের মানুষের চোখেই গ্রুপ পর্বের সীমানা পেরিয়ে ভাসছে শেষ আটের মঞ্চ। সোমবারের অপেক্ষায় পুরো বাংলাদেশ দল।
প্রেম-ভালোবাসা এবং বিয়ে:
নড়াইলের ছোট্ট শহরের পাশেই ছোটবেলা কেটেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার। একই গ্রামের মেয়ে সুমনা হক সুমির সঙ্গে তখন থেকেই প্রেমের সম্পর্ক মাশরাফির। এলাকার কারও অজানা ছিল না মাশরাফি ও সুমির প্রেমকাহিনী । সাদা মনের মাশরাফির প্রতিভার বিকাশ হতে সময় লাগেনি মোটেও। বাংলাদেশ দলে সুযোগ পেয়েই হলেন বড় তারকা। গ্রামের মানুষের মধ্যে তখন সন্দেহ। সুমির বাবাকে প্রতিবেশীরা বোঝাতে চাইলেন। তার মেয়েকে বিয়ে করবেন না মাশরাফি। ও এখন বড় তারকা। একদিন দেখিস অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়ে হাজির হবে। প্রতিবেশীদের এমন কথায় মাশরাফির বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হন সুমির বাবা। রাজি হয়ে যান দু’জনেই। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে বিয়ে হয় তাদের। বাবা রাজি না হলে আরও কিছুদিন দেরি করে বিয়েটা করতেন মাশরাফি। মেয়ে হুমাইরাকে নিয়ে সুখের সংসার তাদের।
খেলোয়াড় জীবন
বাংলাদেশের অনূর্ধ-১৯ দলে খেলার সময় আক্রমণাত্নক এবং গতিময় বোলিং এর জন্য তৎকালীন অস্থায়ী বোলিং কোচ সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের নজরে পড়েন। মূলত তাঁর রবার্টসের পরামর্শে মাশরাফিকে বাংলাদেশ-এ দলে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ-এ দলের হয়ে মাত্র একটি ম্যাচ খেলেই মাশরাফি জাতীয় দলে খেলার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান।
২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় মাশরাফির।
২০০৬ সালে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ২৬ রানে ৬ উইকেট মাশরাফির সেরা সাফল্য।
টেস্ট ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক ৮ নভেম্বর, ২০০১। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। এই ম্যাচে ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে তুলে নেন ২ উইকেট।
কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়ে মাশরাফি দশ ওভার বল করে ৩৩ রান দেন। ঐ ম্যাচে তিনি অস্ট্রেলিয়ার মারকুটে ব্যাটসম্যান এডাম গিলক্রিস্টকে শূণ্য রানে আউট করেন।
বাংলাদেশে রফিকের পর মাশরাফিই আন্তর্জাতিক মানের পেস বোলার।
২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট শিকারীর খেতাব অর্জন করেন মাশরাফি। সেই বছর তিনি অর্জন করেন ৪৯টি উইকেট।
২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ৩৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ভারতের বিপক্ষে স্মরনীয় জয়ে মাশরাফি মূখ্য ভূমিকা রাখেন। রেখেছেন।
বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মাশরাফিই এক ওভারে সর্বোচ্চ ২৬ রান সংগ্রহ করেন ভারতের বিপক্ষে নিজের দ্বিতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে ইনজুরিতে পরেন।
২০১০ সালে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সময় ইনজুরিতে পড়েন। এই ইনজুরির কারনে তিনি ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে পারেনি।
ঘরোয়া ক্রিকেটের বাইরে ভারতের আইপিএল-এ কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছেন।
২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপে মাশরাফির অসাধারণ অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেন।
মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে পাকিস্তানকে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেন। একই বছর দেশের মাটিতে
মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এশিয়ার ক্রিকেট পরাক্রমশালী দেশ ভারতের বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন