প্রিয় সন্তানের কাছে মায়ের মৃত্যুর আগে শেষ চিঠি, পড়লে চোখে পানি চলে আসবে..!!
চার বছর আগের কথা। এক বন্ধুর সঙ্গে করাচির এক বৃদ্ধহোমে যান ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ আলী। সেখানকার নিঃসঙ্গ মানুষগুলোকে দেখে তার মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। আহা, এই মানুষগুলোই তো ছেলেমেয়েদের সুখের জন্য, তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য কত কষ্ট করেছেন। শেষ বয়সে কিনা তাদের এই পরিণতি! স্বজনহীন নিঃস্ব পরিবেশে কি অমানবিক জীবনযাপন করছেন!
দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন মোহাম্মদ। এই নিঃসঙ্গ মানুষগুলোর কথাই তুলে আনবেন নিজের ক্যামেরায়।এরপর তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন ধূসর করাচির নানা অলিতে গলিতে। নিজ চোখে দেখেছেন বৃদ্ধ মানুষগুলোর যন্ত্রণা আর অসহায়ত্ব।
প্রিয় সন্তানদের একটিবার দেখার জন্য এক একজনের কি আকুতি! এক বৃদ্ধ মোহাম্মদের হাত চেপে ধরে বলেন, ‘বাবা, আমার ছেলেকে চিঠিখানা দিও।’ যদিও তার জানা নেই ছেলের ঠিকানা। মোহাম্মদ দীর্ঘ চারবছর ধরে করাচিতে ঘুরে ঘুরে তৈরি করেছেন এই ফটো সিরিজ।
যেখানে বাবা-মাকে ফেলে আসে সন্তানরা
পাকিস্তানের পুরাতন ব্যস্ত শহর করাচি যার জনসংখ্যা প্রায় ৯৫ লাখ। এই শহরে যে এতগুলো ওল্ডহোম আছে নিজের চোখে না দেখলে তা বিশ্বাসই করতেন না মোহাম্মদ। বৃদ্ধহোম বা বৃদ্ধসনদ হলো যেই জায়গা যেখানে বয়স্ক বাবা-মাকে ছেড়ে আসেন তাদের প্রিয় সন্তানেরা। এরপর তাদের আর কোনোই খোঁজ খবর নেন না। এখানকার বাসিন্দারা এক একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত পড়ে থাকেন।
অন্যভাবে বলা যায় তারা মৃত্যুর দিন গোণে। অত নিঃসঙ্গতার মধ্যে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাও যেন কষ্টকর। কিন্তু মোহাম্মদ বার বার ছুটে গেছেন তাদের কাছে। ধৈর্য্য ধরে শুনেছেন তাদের কষ্টের কথা। এমনই কয়েকজনের কথা তিনি তুলে ধরেছেন এ ফটো ফিচারে।
ঈদ, নববর্ষ আর খ্রিস্টমাসের দিনগুলোতে এখানকার মানুষগুলো কেবল একটি প্রার্থণা করেন। তাদের ছেলেমেয়েরা যেন একবার হলেও আসেন তাদের কাছে। প্রিয়জনদের পাশে নিয়ে উদযাপন করতে চান বিশেষ দিনটি। কিন্তু তাদের সে প্রার্থণা কে শোনে!
দু বছর আগে এক ঈদে করাচির এক ওল্ডহোমে মরিসের দেখা পান ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ। মরিস তাকে জানান, তিনি একসময় পেশাদার ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বলেন,‘আমরা তো রিল দিয়ে ফটো তুলতাম। তুমি রিল চেন?’
মরিস ফটো তুলতেন বহু আগে-ক্যামেরার চারপাশ কালো কাপড়ে ঢেকে। তার দুই ছেলেমেয়ে। তাদের জন্য একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে কত না পরিশ্রম করেছেন বয়সকালে। টাকা পয়সা জমিয়ে শেষ পর্যন্ত একটা ফ্লাটও কিনেছেন এই পোড়ার শহরে। কিন্তু বাস্তবতা কি জানেন? ওই বাড়িতে তার নিজের থাকার জায়গা হয়নি।
তাই বুঝি এখন আর কোনো কিছুতেই আগ্রহ নেই তার। কেবল মৃত্যুর প্রতীক্ষায় দিন গোনা।
আসার সময় মোহাম্মদের হাতে একটি চিঠি দিয়ে বলেন,‘যদি আমার ছেলেটাকে খুঁজে পাও তবে এ চিঠিখানা দিও।’ চিঠি হাতে নিয়ে অবাক ফটোগ্রাফার। বলেন,‘আরে, মরিস, এ চিঠিতে তো দেখি কোনো ঠিকানাই নাই। আমি কিভাবে তোমার ছেলেকে খুঁজে বের করব? কিন্তু অত বাস্তবতা বুঝতে চায় না স্নেহার্ত পিতার তরল মন। সে বলে,‘একটু চেষ্টা করে দেখো।’
করাচির ওল্ডহোমের আর এক নিঃস্ব মানুষ আগা সাহেব। তিনি স্মৃতিভ্রংসতায় ভুগছেন। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে, আপনজনদের দেখার জন্য তার কোনো আকুলতা নেই। কোনো কিছু মনে রাখতে পারেন না বলেই তাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হয় না। শেষে কোথায় না কোথায় হারিয়ে যাবেন। তিনি সারাদিন বসে থাকেন বিবর্ণ ঘরটায়। বসে বসে কত কিছু যে ভাবেন তিনি। তিনি বলেন,‘তুমি যাই কর না কেন, আমাকে কখনো খোদা হাফেজ বলবে না। আমি দেখেছি যারাই ওই শব্দটা বলে তারা আর কখনো ফিরে আসে না।’
‘তারা কোথায় যায়?’ জানতে চান মোহাম্মদ। কিন্তু এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেন না আগা সাহেব। হয়তবা এর মধ্যেই তিনি ভুলে গেছেন তিনি কি নিয়ে কথা বলছিলেন।
বৃদ্ধ মানুষগুলোকে নিয়ে ফটো তোলার কাজ শেষ করেছেন ক্যামেরাম্যান মোহাম্মদ আলী। কিন্তু এখনও সময় পেলেই ছুটে যান তাদেরকে দেখতে। তার বন্ধু বলেছে, ‘যদি এই স্বজনহীন মানুষগুলোকে সাহায্য করতে চাও তবে তাদের কাছে এসো। এতেই তাদের অনেক উপহার হবে।’ বন্ধুর পরামর্শটি যে ভোলেননি মোহাম্মদ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চা কন্যা খায়রুন ইতিহাস গড়লেন
চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলেই পরিচিত হবিগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
চার্জ গঠন বাতিল চেয়ে রিট করবেন ড. ইউনূস
শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.বিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন