বটতলা মোড়ের বটগাছটি আর নেই!
রাজশাহী মহানগরীর সাগরপাড়া বটতলা মোড়ের শতবর্ষী বটগাছটি আর নেই। সড়ক উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে আকষ্মিকভাবে কেটে ফেলা হয়েছে গাছটি।
এতো দিন মহাকালের সৈনিকের মত শিরউঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল বটগাছটি। মুহূর্তেই যা কেটে ফেলে রেখে যায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। বর্তমানে তার মরদেহ সড়কের ওপর কাত করে ফেলে রাখা হয়েছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মাস্টার প্লান অনুযায়ী সাগরপাড়া বটতলা মোড়ের চার রাস্তার মুখে গোলচত্বর নির্মিত হবে। তাই উন্নয়নের এই সড়কে বলি দেওয়া হয়েছে শতবর্ষের পুরোনো এই বটগাছটিকে। এখন থেকে প্রচণ্ড খরতাপে নিজের দেহ থেকে বের করা সবুজ লতাপাতা দিয়ে আর সুশীতল ছায়া দেবে না বটগাছটি। অলস দুপুরে ডালপালা নাড়িয়ে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে না ক্লান্ত পথিকের ঘামঝরা শরীরে।
গাছের প্রাণ আছে- এই কথা আজ ছোট্ট শিশুটিও জানে। গাছ নাইট্রোজেন নেয়, অক্সিজেন ছাড়ে এই কথাও জেনে নেওয়া হয় শিশুকালেই। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে গাছের প্রয়োজনের কথা আজ শিশুরা জানলেও জানে না রাজাশাহী সিটি করপোরেশন। সড়কের সৌন্দর্য বাড়াতে তাইতো নির্বিচারে গাছ হত্যা করে চলেছেন করপোরেশনের কর্তা ব্যক্তিরা।
এর আগে গত বছরের মে মাসে দিনে দুপুরে এভাবেই গাছ কেটে সড়ক উন্নয়নের কাজ করে রাসিক। মাত্র দুই দিনে মহানগরীর কাজিহাটা মোড় থেকে রাজশাহী কলেজ পর্যন্ত সড়কের পাশের অর্ধশতাধিক গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়। তাই আবারও উন্নয়নের নামে ঐতিহ্য ও পরিবেশ ধ্বংস করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এবার ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। আবেগ ও স্মৃতিতে গেঁথে থাকা এই বটগাছটি কেটে ফেলায় বটতলা মোড়ে দেখা দিয়েছে শূন্যতা।সাগরপাড়া বটতলা এলাকার আশি বছরের বৃদ্ধ আফাজ উদ্দিন জানান, ছোটবেলা থেকেই এই বটগাছ দেখেই তার বেড়ে ওঠা। তার হিসাবে গাছটির বয়স শত বছরেরও বেশি হবে। এই সড়কটি আগে অনেক সংকীর্ণ ছিল। এর আগে বাড়ি ভেঙে সড়কটি অনেক চওড়া করা হয়েছে। কিন্তু তখনও গাছটিকে বাঁচিয়ে রেখে সড়ক প্রশস্ত করা হয়।
কিন্তু এবার কেবল গোল চত্বর করার জন্য বটগাছটি কেটে ফেলায় বড়ই মর্মাহত হয়েছেন তিনি। এখন তার শরীরে প্রতিবাদ করার শক্তি নেই। কিন্তু যাদের আছে তারা কেনো চুপ থাকলো, তা নিয়ে ক্ষোভ জানান এই প্রবীণ।
একই এলাকার ষাটোর্দ্ধ তারা মিয়া বলেন, বিকেল হলেই তার মত বৃদ্ধরা এই বট গাছতলায় বসে আড্ডা জমাতেন। এখানে তাদের অনেক স্মৃতি রয়েছে। কিন্তু আজ সব শেষ! একমাস পর আর কেউ মনে রাখবে না এখানে একটি বট গাছ ছিল। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে এই মোড়ের বিশালাকৃতির বটগাছ পড়ে যায় বৈশাখী তাণ্ডবে।
এবার মানুষের জ্ঞানহীন কাণ্ডে কাটা পড়লো শতবর্ষী বট গাছটি- বলেন অনেক আক্ষেপ করেই। তবে বট গাছ কাটলেও বটতলা নামটি কখনও কেউ মুছে ফেলতে পারবে না বলে অতীতের দৃষ্টান্ত দিয়ে ভরাট কণ্ঠে দাবি করেন তিনি। মানুষের স্মৃতিপটে দাগ দিয়ে থাকা শতবর্ষী বটগাছটি কেন হঠাৎ করে কেটে ফেলা হলো বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে বাংলানিউজের পক্ষে এমন প্রশ্ন রাখা হয় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হকের কাছে।
উত্তরে আশরাফুল হক বলেন, অনেক চেষ্টা করেছিলাম বটগাছটিকে বাইরে রেখেই গোল চত্বর করার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। মূল নকশা বাঁচাতে গিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই গাছটি কেটে ফেলতে হয়েছে।
তবে মহানগরীর সাগরপাড়া বটতলা মোড়ের গোল চত্বর নির্মাণ শেষে সেখানে আবারও একটি উন্নত জাতের গাছ লাগানো হবে। মাস্টার প্লানেও গাছ লাগানোর কথা রয়েছে বলে জানান রাসিকের এই প্রধান প্রকৌশলী।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বগুড়ার ৩টি উপজেলায় নির্বাচন; ১৫৭ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
রাত পোহালেই বগুড়ার তিন উপজেলা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও গাবতলীতে ৬ষ্ঠবিস্তারিত পড়ুন
বিএনপি নেতাকর্মীরা বগুড়ায় আ.লীগ নেতার নির্বাচনী প্রচারণায়
বর্তমানে চলছে উপজেলা নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের মত এই উপজেলা বির্নাচনেওবিস্তারিত পড়ুন
পদ্মায় গোসলে নেমে একসঙ্গে নিখোঁজ ৩ কিশোরের মরদেহ উদ্ধার
রাজশাহীতে পদ্মায় গোসল করতে নেমে নিখোঁজ তিন কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করছে ফায়ারবিস্তারিত পড়ুন