বিয়ে কি বাঙালি নারীর জীবনে অভিশাপ?
বিয়ের আগে যে তরুণীর দু’টি চোখ বুনেছিল রঙিন স্বপ্নের জাল, বিয়ের পর আচমকা সেই সুন্দর চোখ দু’টিও থেঁতলে গেলো স্বপ্নের মানুষেরই হিংস্র ছোবলে। কিন্তু এমনটা হবে যেনো কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেননি সদ্য পুত্রসন্তানের মা হওয়া টাঙ্গাইলের তরুণী গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার। গেলো মঙ্গলবার রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে তার অসুস্থ শরীরের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় স্বামী আর শ্বশুর-শাশুড়ি। কেউ চেপে ধরে হাত-পা আর কেউ কোপাতে থাকে। এ যেনো সিলেটের বদরুলেরই আরেকটি রূপ।
ফাতেমার অপরাধ ছিল যৌতুক না দেয়া আর পরনারীর সঙ্গে স্বামীর অসামাজিক কাজে বাধা। তার ওপর অত্যাচারের বীভৎসতা দেখে শিউরে ওঠেন চিকিৎসকরাও। তারা বলছেন, এটা ছিল নির্মম হত্যাচেষ্টা। টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. পুতুল রায় জানান, যখন তাকে ভর্তি করা হয়েছিল তখন তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। এখন তার অবস্থা কিছুটা ভালো। তবে এখনোও তার শারীরিক অবস্থা দুর্বল। মাথার বিভিন্নস্থানে তাকে কোপানো হয়েছে। চোখ উপড়িয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। তার চোখের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। ফাতেমাকে চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করছেন।
৬ বছর আগে (২০১০ সালে) বিয়ে হয় ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে ফাতেমা খাতুনের। একই উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের চালমুলা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে শফিকুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ের সময় মোটা অংকের যৌতুকও দেয়া হয়। শফিকুল নিকলা রাইপাড়া জামে মসজিদের ইমাম। ভালোই কাটছিল তার সংসার জীবন। বছর ঘুরতেই ফাতেমা জন্ম দেন পুত্রসন্তান। ওই সন্তানই বাদ সাধে তার সুখের সংসারে। সন্তানকে কেন জানি মেনে নিতে পারেনি শ্বশুরবাড়ির কেউই। শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। দিন দিন বাড়তে থাকে মাত্রা।
আবারও নানা অজুহাতে মোটা অংকের টাকার যৌতুক দাবি করা হয়। কষ্টের কথা বাবাকে জানায় নির্যাতিতা ফাতেমা। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তার বাবা আবারও টাকা দেয়। কিছুদিন গেলে সেই দাবি আরো বাড়তে থাকে। টাকা না এলেই চলে অমানবিক নির্যাতন। এর মাঝেই ফাতেমার কোলজুড়ে আসে আরো একটি পুত্রসন্তান। আর সেই ‘অপরাধে’ গেলো মঙ্গলবার রাতে স্বামী শফিকুল ইসলাম, শ্বশুর মো. আব্দুল হামিদ ও শাশুড়ি রোকেয়া বেগম ঘরে ঢুকেই ফাতেমাকে মারধর শুরু করেন। এতেও ক্ষান্ত হননি তারা। শ্বশুর-শাশুড়ি তার হাত-পা ধরে রাখে আর স্বামী শফিকুল ইসলাম এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। ফাতেমার চিৎকারে তখন আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের বেডে এখন যন্ত্রণায় ছটফট করছেন বাকরুদ্ধ ফাতেমা। তার মাথা ও ঘাড়ে বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে। তার কোলেই শিশুসন্তান লিহান। হাসি হাসি মুখ, হাত পা নাড়ছে। ক্ষুধা পেলেই কেঁদে ওঠে। পাশেই বসে থাকে ফাতেমার প্রথম সন্তান লোভান। মানুষ দেখলেই ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে সে। কখনো কখনো মায়ের দিকে তাকিয়ে সে কী যেন ভাবে। মায়ের কষ্ট অনুধাবন করার মতো বয়স যে হয়নি তার।
এ ঘটনায় ফাতেমার বাবা তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে স্বামী শফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে শাশুড়ি রোকেয়া বেগম ও শ্বশুর মো. আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে ভূঞাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
ভুঞাপুর থানার ওসি একেএম কাউছার চৌধুরী বলেন, ‘এ ঘটনায় গেলো ৯ ডিসেম্বর মামলা হয়েছে। মামলার পর থেকেই আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আশা করছি তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।’
ফাতেমার স্বামী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ওই ঘটনার পর থেকে শফিকুল বাড়িতে আসছে না। শুধু তাই নয়, পরিবারের সবাই গা-ঢাকা দিয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন