বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির দরজা খুলছে?
সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ কিছু শিক্ষার্থীর জড়িয়ে পড়ার পর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সরব ছাত্ররাজনীতির দুয়ার খোলার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। বলা হচ্ছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মূল ধারার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকার সুবিধাই নিচ্ছে কুচক্রি মহল। অবশ্য এর বিপরীত যুক্তিও রয়েছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহিংস ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতার আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সেই ধরনের রাজনীতিমুক্তই দেখতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন অনেকে।
মূলত আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতিতে আপত্তি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-শিক্ষক ও বিশ্লেষকদের। রাজনীতি শিক্ষার পরিবেশে নষ্ট করে- এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত না হলেও তারা বলছেন, কিন্তু এখন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতির নামে ক্ষমতা দখলের যে আধিপত্য চলছে তাতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তবে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন আর্দশভিত্তিক রাজনীতির চর্চা।
বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনীতিবিমুখ হওয়ার একটা প্রবণতাও রয়েছে। কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকারও খুব একটা প্রমাণ নেই। তবে গত অর্থবছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার উপর সরকার ভ্যাট আরোপ করলে রাস্তায় নামেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেসময় তারা বেশ বড় একটা আন্দোলন করতে সক্ষম হয়েছিলেন; যা সফলও ছিল।
দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভাষ্য অনুযায়ী, এখনকার ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনের চাইতে দলীয় স্বার্থ রক্ষার কর্মসূচিতে বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ছাত্র সংগঠনগুলোকে দলীয় স্বার্থের চেয়ে ছাত্রদের অধিকারের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নীরব রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। ক্ষমতার রাজনীতিতে জোরপূর্বক মিছিল-সমাবেশে যোগদানে বাধ্য করা এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা বর্তমান ছাত্র রাজনীতির যে চর্চা দেখছি তাতে আসলে (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় রাজনীতি) শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে। কারণ, এখানে রাজনীতির নামে ক্ষমতা দখলের চর্চা করা হয়। যদি আদর্শভিক্তিক রাজনৈতিক চর্চা থাকত তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এতো খুনোখুনি হতো না। আর যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের (ছাত্র সংগঠনগুলোর) এই পদক্ষেপ সেটা আগে একটু ভেবে দেখতে হবে। উনাদের এই ধরনের কার্যক্রমের কারণে কতগুলো ছাত্র ‘অ্যাফেক্টেড’ হতে পারে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রকৃত ছাত্ররাজনীতির পক্ষে থাকলেও ডাকসুর সাবেক ভিপি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি এখন দলীয় লেজুড় বৃত্তিতে পরিণত হয়েছে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভাগাভাগিতে অংশীদার হয়েছে। তাই শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আর এখনকার ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠন সরকারের অনুগত, সরকারের সীমাহীন অন্যায়ের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও করার কোনো নৈতিক শক্তি তাদের নেই। তাদের নিজেদের গুলিতেই কত প্রাণ ঝড়ে গেছে, নিজেরাই নিজেদের খুন করছে। তাদের উপস্থিতিতে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হবে এটা সবাই বিশ্বাস করে।’
সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির কারণে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয় না। বরং ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে শিক্ষার মান নিশ্চিত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ভবিষ্যতে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব হয়। ছাত্ররাজনীতি জাতীয় এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে সহায়ক হয়।’
ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, রাজনীতিমুক্ত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। সরব রাজনীতি যেখানে নেই সেখানে নীরব রাজনীতি চলে। উগ্র সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করলেও তারা কিন্তু নীরবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংগঠনের কোনো সরব কাজ নেই এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চর্চা নেই সেখানে নীরব কাজ চলছে। যারা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তারা কাজ করছে। এ জন্য আমরা চাচ্ছি, সকল প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে। সেই ছড়ানোর কাজটা করবে ছাত্রলীগ।
তিনি বলেন, আপনি একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন যেসব প্রতিষ্ঠানে আমাদের কার্যক্রম কম, যেমন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা, সেখানে কিন্তু এসব (জঙ্গি) কাজ হচ্ছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে জঙ্গিবাদ বা জামায়াত-শিবির মুক্ত সেটা আমি বলছি না। কিন্তু আমাদের কার্যক্রমের জন্য তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারছে না।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন বলেছে তারা কমিটি করবে। ছাত্রলীগ বা ছাত্র ইউনিয়ন শুধু নয় বৈধ যে ছাত্র সংগঠনগুলো রয়েছে তারা নিশ্চয়ই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অথবা মানুষ হত্যার মতো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে না। তারা (ছাত্র সংগঠনগুলো) যদি ছাত্রদের সঠিক চাহিদা চিহ্নিত করে, গণতন্ত্র চর্চা করে তাতে ক্ষতির কিছু দেখছি না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তখন ছাত্র রাজনীতির নামে দুটি ছাত্র সংগঠনের মারামারি-হানাহানি দেখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল।
ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি লাকী আক্তার বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমিটি আছে। যেগুলোতে নেই সেগুলোতে খুব শিগগিরই কমিটি দিয়ে দেব। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিরাজনীতিকরণের নাম দিয়ে উগ্রপন্থীদের আরো বেশি সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকার ফলে উগ্রসংগঠনগুলো সেখানে সুযোগ নিচ্ছে। উন্মুক্তভাবে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা হলেই উগ্রবাদের তৎপরতা কমবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেভাবে ছাত্র সংসদ আছে সে রকম যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হলে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে এবং সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা ফিরে আসবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবীর হোসেন বলেন, ‘সরকার ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে কিছু বলেনি। আমাদের এই ধরনের চিন্তা-ভাবনা এতদিন ছিল না। ছাত্র সংগঠনগুলোর নতুন যে দাবি রয়েছে এটা আমরা দেখবো আলাপ-আলোচনা করে। সরকারের সম্পৃক্ততা লাগবে। সরকার কী বলে সেটাও দেখতে হবে।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
এইচএসসির ফল প্রকাশ মঙ্গলবার, জানা যাবে যেভাবে
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করাবিস্তারিত পড়ুন
বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, বিক্ষোভকারীদের অধিকার সমুন্নতবিস্তারিত পড়ুন
ঢাবি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে ধন্যবাদ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন