বেসরকারী উদ্যোগে ত্রাণ কমে গেলে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা
প্রাণ বাঁচাতে যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে তাদের মধ্যে নিয়মিত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। তবে সরকারির চেয়ে বেসরকারি ত্রাণই বেশি বিতরণ হচ্ছে। এই বেসরকারি উদ্যোগের ত্রাণ বিতরণ কমে গেলে শরণার্থী শিবিরগুলোতে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রধান সমস্যা। প্রশাসন শত চেষ্টা করেও ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারছে না। ইতিমধ্যে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যেগে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো ও বিতরণের কারণে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের খাবারের সংকট না হলেও সবার হাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
শুক্রবার উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, ঘুমধুম, পানখালীসহ বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ঘুরে দেখা যায়, প্রশাসন ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও সুফল আসছে না। এখনো ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা বিরাজমান। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারি উদ্যোগে খুব সামান্য ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ থেকে ত্রাণ বিতরণ কাজে অংশ নেবে সেনাবাহিনী। এতে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শরণার্থী শিবিরে বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিয়মিত ত্রাণ আসছে। তবে এই ধারা বেশি দিন অব্যাহত থাকবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের ২৫টি বেসরকারি সংস্থা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে খাদ্য, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে জাতিসংঘ ও সাতটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। ওইসব সংস্থা কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা ও ত্রাণ বিতরণ করছে। কিন্তু সংস্থাগুলো সব শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা বা ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করতে পারেনি।
টেকনাফ ও উখিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা বিশেষ করে গ্রাম ও পাহাড়ের ঢালে যারা বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছেন তাদের কাছে খাবার বা তাবু পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
ত্রাণ বিতরণকালে বালুখালী শরণার্থী শিবিরে দেখা গেছে, নিজ উদ্যোগে স্যানিটেশন, টিউবওয়েল স্থাপনসহ ট্রাকে করে ত্রাণ দিচ্ছেন অনেকেই। ফলে অনেকে একাধিক বার খাবার ও ত্রাণের প্যাকেট পেলেও অনেক নারী ও শিশু কিছুই পায়নি। এছাড়াও শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। আনসার, পুলিশ, ব্যাটালিয়ান পুলিশ মোতায়েন করা হলেও বিশাল রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিলে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘুমধুম অস্থায়ী রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রিত নুর বেগম (৩৬) বলেন, ‘পিতাহারা দুই সন্তানকে নিয়ে তিন দিন ধরে কিছু খাইনি। আমার পরিবারে পুরুষ না থাকায় ত্রাণ নিতে গেলেও মিলছে না। প্রায় সময়েই কাড়াকাড়ি করে কোনো ত্রাণ নিতে না পেরে খালি হাতে ফিরি তাঁবুতে। তাছাড়া পুরাতন রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের ত্রাণ সামগ্রী মিলছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘খাবারের তুলনায় শরণার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে পুরাতনরা গায়ের জোরে ছিনিয়ে নিচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী।’
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে এসেছেন গোপালগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, নিজ উদ্যোগে ১০ লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এসেছেন। তারা নিজেই গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন। বেসরকারি ত্রাণসামগ্রী নিজেরাই দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলেন, এভাবে কে কত দিন ত্রাণসামগ্রী দেবে। একসময় ত্রাণসামগ্রীর পরিমাণ কমে যাবে। স্রোতের মতো ঢুকছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। বেসরকারি ত্রাণের পরিমাণ কমে গেলে দেখা দেবে বড় ধরনের বিপর্যয়।
গোপালগঞ্জের ওই ব্যবসায়ী সরকারি ত্রাণসামগ্রী যথাযথভাবে বিতরণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ও পুনর্বাসনে সেনাবাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্তকে তিনি সাধুবাদ জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিবারই হট্টগোলরত শরণার্থীদের কাছে ত্রাণের ট্রাকগুলো পৌঁছানোর পর স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের লক্ষ্য করে খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল ও কাপড় ছুড়ে মারেন। আর এসব নেয়ার জন্য শরণার্থীরা কাড়াকাড়িতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সাধারণত ট্রাকগুলো রাস্তায় গতি কমিয়ে দেয়ার পরপর ত্রাণ নিয়ে অন্যদের মাঝে মারামারি বেধে যাওয়ার সুযোগে গাড়িগুলোর পাশে উঠে পড়ে খাবারের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় শিশুরা। এতে উখিয়া-টেকনাফ সড়কে সৃষ্ট হয় দীর্ঘ যানজট। হুড়াহুড়ি করে ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত হচ্ছেন অনেকেই।
উখিয়ার ত্রাণ বিতরণ কমিটির সমন্বয় সহকারী ভূমি নুরুদ্দীন মোহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, সরকারিভাবে শৃঙ্খলার মধ্যে ত্রাণ বিতরণকার্য সম্পাদনের জন্য সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণের জন্য আটটি লঙ্গরখানা তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রতিদিন লক্ষাধিক বিচ্ছিন্ন রোহিঙ্গার মাঝে দুই বেলা রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
বিপর্যয়ের শঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি বা বেসরকারিভাবে নিয়মিত ত্রাণ আসছে। বেসরকারি ত্রাণের পরিমাণ একটু বেশি। বেসরকারি ত্রাণ আসা কমে গেলে একটু সমস্যা দেখা দিতে পারে। সরকার সব ধরনের সমস্যা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আশা করি এরকম কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সভাপতি আবু সিদ্দিক বলেন, এখনো পর্যন্ত ত্রাণ আসা অব্যাহত রয়েছে। ত্রাণ বিতরণে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। তবে বেসরকারি উদ্যেগের ত্রাণ কমে এলে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা যাচ্ছে। সরকার আগে থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ রাখলে ওই পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা নেই। সুষ্ঠুভাবে ত্রাণবিতরণ ও সব শরণার্থীর মাঝে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে শৃঙ্খলায় চলে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন