ব্যালট বাক্স ভরবে আগের রাতে: মির্জা ফখরুল
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগের রাতেই প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ব্যালট বাক্স ভরে ফেলবে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার দুপুরে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি বলেন, ‘আমরা জানি এখানে কী হবে। তারা (আওয়ামী লীগ) তাদের মতো করে প্রশাসনকে ব্যবহার করে সিল মেলে আগের রাতে সব বাক্স ভরে রাখবে। তারপরও আমরা এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি। কারণ জনগণ আরো ভালো করে দেখুক, এদের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় কি হয় না। এর মাধ্যমে বিএনপির অভিযোগ প্রমাণিত হবে।’
মির্জা ফখরুল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নানের মুক্তির দাবিতে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘সাগর-রুনি মিলনায়তনে’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘এম এ মান্নান মুক্তি পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন নির্বাচন প্রকল্প শুরু হয়েছে। একটি করে নির্বাচন করবে এবং তার মাধ্যমে সমস্ত কিছু তারা দখল করে নিয়ে যাবে। আর বলবে, দেখো আওয়ামী লীগ কত জনপ্রিয়, নৌকা জিতে গেলো আর ধানের শীষ হেরে গেলো। সেজন্য এখন প্রতীক দিয়ে স্থানীয় নির্বাচন শুরু করেছে। কিন্তু জোড়াতালি দিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে অল্প দিন টিকে থাকা যায়, বেশি দিন যায় না।’
গণতন্ত্র না থাকলে স্বৈরাচারী শাসন দিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করা যায় না বলেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করেন বিএনপির এই নেতা।
‘আইয়ুব খান উন্নয়নের নহর বইয়ে দিয়েছিলেন। যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে আইয়ুব খানের সময়েই হয়েছে, সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি বারো বছর ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু পতন ঠেকাতে পারেন নি। এরশাদও ৯বছরে উপজেলা ও গ্রামের রাস্তাঘাট করেছিলেন, কিন্তু তিনিও ধপাস। কারণ, এভাবে সাসটেইনেবল (টেকসই) হয় না, যদি না তার ভিত্তি থাকে। ভিত্তিটা হচ্ছে গণতন্ত্র।’
তিনি বলেন, ‘এখন দেশে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। গণতন্ত্রকে ভিন্নখাতে নিয়ে গেছে এবং সে জন্য যা কিছু করা দরকার তা করেছে এই সরকার।’
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘৪ লাখ ১৮ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা ছিলো, প্রায় ৩২ হাজার জনকে আটক করা হয়েছিলো। আওয়ামী লীগের শাসনামলে গত কয়েক বছরে ৬’শর বেশি বিএনপি নেতাকর্র্মীকে হত্যা করা হয়েছে, সাড়ে ৪শ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, কয়েক’শ কর্মীকের গুলি করে পঙ্গু করা হয়েছে। এই হচ্ছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অবস্থা।’
সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেওয়া হয়- এই অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া যখন কথা বলেন তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মামলা দেওয়া হয়। যিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, যার স্বামী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যিনি নিজে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন তিনি হয়ে যান রাষ্ট্রবিরোধী।’
‘যারা ৭২ থেকে ৭৫ সালে লুন্ঠন করেছে, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, তারা এবং তাদের উৎখাত করার জন্য যারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলো, বাহিনী তৈরি করেছিলো তারা এখন সবচেয়ে বড় দেশপ্রেমিক হয়ে বসে আছে।”
দেশে যে ‘সংকট’ চলছে তা শুধু বিএনপির নয়, সমগ্র জাতির-এ মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘এখানে সমগ্র দেশের মানুষের অধিকার, বেঁচে থাকার প্রশ্ন জড়িত। ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে দেশ। বলা হয়, এটি বিএনপির সংকট। এই সংকট যে শুধু বিএনপির নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে। আজকে যখন মাহফুজ আমানের বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয় তখন এই সংকট শুধু বিএনপির নয়, মুক্তচিন্তার সংকট। কেউ মাফ পাবে না।’
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সত্য ও মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলা কারণে তাকে একবছরের বেশি বিনা বিচারে আটক থাকতে হয়েছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এখন মামলা উৎসব শুরু হয়েছে। ধরলেই টাকা। মামলা প্রজেক্ট। কি মামলা, কি কারণে, কিভাবে মামলায় জড়ানো যায় তার নিদর্শন খুজে পওয়া যাবে না।’
‘সরকার অনির্বাচিত এবং অনৈতিক’ এই বিষয় থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরানোর জন্য ক্ষমতাসীনরা অযাচিত মন্তব্য করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘চারিদিকে আওয়াজ উঠেছে। বিভিন্ন দেশ বলতে শুরু করেছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। দেশ সংকটের মুখে পড়েছে। কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
অবাধ নির্বাচন ছাড়া দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় জানিয়ে, সরকারকে আলোচনার মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়া ঠিক করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, এম এ মান্নান, আবদুস সালাম পিন্টু, শওকত মাহমুদ, মাহমুদুর রহমানসহ সব ‘বন্দিদের’ মুক্তি দাবি করেন।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির যুব বিষয়দক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক মামীমুর রহমান শামীম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইদুল আলম বাবুল, ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুল ইসলাম, সুরুজ আহমেদ। প্রতিবাদ সভা পরিচালনা করেন আহমেদ রুজবি ও মাহমুদ হাসান রাজু।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন