ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এএসপি ও ওসি প্রত্যাহার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তাপস রঞ্জন বোস ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাসকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে তাঁদের প্রত্যাহার করা হয়। প্রত্যাহার হওয়া দুই পুলিশ কর্মকর্তাই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণ এবং মাদ্রাসাছাত্র মাসুদুর রহমানের (২২) নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেন শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মওলানা মোবারক উল্লাহ।
এদিকে সংঘর্ষ ও হামলার কারণে প্রায় নয় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে রেল যোগাযোগ শুরু হয়েছে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় শহরের জেলা পরিষদ মার্কেটের বিজয় টেলিকমের মালিক রনির সঙ্গে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) এক ছাত্রের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ বাধে। পরে এতে ছাত্রলীগ ও এলাকাবাসী যোগ দেয়। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। চার ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে আজ মঙ্গলবার ভোররাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার ছাত্র হাফেজ মাসুদুর রহমানের (২২)। তাঁর গ্রামের বাড়ি নবীনগর উপজেলার সামন্তঘর গ্রামে।
সোমবার রাতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে মাসুদুর রহমানকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ করেন মাদ্রাসাছাত্ররা। এই অভিযোগ তুলে ছাত্ররা আজ ভোরে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় তারা বেশ কিছু স্থানে ভাঙচুর করে বলেও জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এ সময়ে শহরের টিএ রোড এলাকা ও ব্রিজের মোড় এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেই দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। সেখানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। রেলস্টেশন অবরোধ করে সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালায় ছাত্ররা। তারা রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয়। এতে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মাঈনুল হোসেন জানান, বিক্ষোভকারীরা রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে আগুন দিয়েছে। তারা বেশ কয়েকটি সিগন্যাল ভেঙে ফেলেছে। তারা আমার কার্যালয়ে এসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সিগন্যাল বোর্ড, টেলিফোনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট পথে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এর ফলে আখাউড়ার বাঘাচং স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস, আযমপুরে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ও ভৈরবে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস আটকা পড়ে আছে বলেও জানান সহকারী স্টেশন মাস্টার। তিনি জানান, দুপুর ১২টার দিকে আবারও মাদ্রাসাছাত্ররা রেলস্টেশনে হামলা চালায়। এ সময় তারা ব্যাপক ভাঙচুর করে।
দুপুরে বিক্ষোভকারীরা শহরের আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন ভাঙচুর করে এর বিভিন্ন কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া ব্যাংক এশিয়া, শিশু নাট্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করা হয়।
বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার সামনে সেতুর ওপর পুলিশের একটি ভাড়া করা পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে সকালে দুই প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুরে আরো চার প্লাটুন বিজিবি সদস্য শহরে নামেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শহরের বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছে। গোটা শহরের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শহরজুড়ে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। প্রশাসন ও বিজিবির পক্ষ থেকে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। এদিকে সংঘর্ষ ও মাদ্রাসাছাত্র নিহতের ঘটনা তদন্তে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
চালু হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত হাট
প্রায় সাড়ে চার বছর পর আগামী ২৯ জুলাই থেকে চালুবিস্তারিত পড়ুন
ছুটি শেষে কর্মচঞ্চল আখাউড়া স্থলবন্দর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি শুরু। ঈদুল আযহা উপলক্ষে চার দিনবিস্তারিত পড়ুন
সরাইলে ভূমিহীন পরিবারের মানববন্ধন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ৪২ টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য ভূমির দাবীতে মানববন্ধনবিস্তারিত পড়ুন