ভণ্ড ফকিরের লালসার শিকার কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা
মানিকগঞ্জে ভণ্ড ফকিরের লালসার শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছন এক কলেজ ছাত্রী। রোববার রাতে নিজ কক্ষে আড়ার সঙ্গে ঝুলে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেন।
ওই ছাত্রীর নাম নুরজাহান আক্তার মলি। তিনি শিবালয় সদর উদ্দিন কলেজের ইংরেজি (অনার্স) প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তার বাবার নাম আবদুল গফুর। বাড়ি শিবালয় উপজেলার উলাইল ইউনিনের দশচিড়া গ্রামে।
এই ঘটনায় ভণ্ড ফকির আওলাদ হোসেন পাগাইল্যাকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আত্মহত্যার আগে মলি নিজের খাতার শেষ পৃষ্ঠায় লিখে রেখে যান- ‘My college life is end. অনার্সের রেজাল্টটাও শুনে যেতে পারলাম না। ইচ্ছা ছিল- কোর্সটি শেষ করার তাও হল না। জীবনে অনেক আশা ছিল, কিন্তু সব শেষ। কপালে যা এনেছিলাম, তাই ভোগ করে মৃত্যুর মুখে চলে গেলাম। কখনো ভাবি নাই- আমার জীবন আমি শেষ করে দিব। কিন্তু ভাগ্য আমাকে করালো।’
অকালে মেয়ে মলিকে হারিয়ে পাগল প্রায় মা ভানু বেগম। পরিবারের সদস্যের চোখের পানি থামছে না। মঙ্গলবার সকালে দশচিড়া গ্রামের আবদুল গফুরের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় কান্নার রোল।
ভানু বেগম মেয়ে মলিকে হারিয়ে বিলাপ করছেন। তিনি জানান, ‘চিকিৎসার নামে ভণ্ড ফকির আমার মেয়েকে ধর্ষন করেছে। এ কারণে লজ্জায় আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।’
বোনকে হারিয়ে অসুস্থ কলেজছাত্র আবদুল কাদের মনুও বিলাপ করছেন। বলছেন, ‘আমার জন্যই আজ আমার বোনকে আত্মহত্যা করতে হল। ভণ্ড ফকির আমার অসুখ সারনোর কথা বলে কৌশলে আমার বোনের ইজ্জত হনন করে। আর এজন্য লজ্জা, ক্ষোভে আমার বোন আত্মহত্যা করেছে।’
আবদুল কাদের জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী গহেরপুর গ্রামের ফকির ও কবিরাজ পাগাইল্যাকে আনেন বাবা।
ফকির পাগাইল্যা তার বাবাকে জানায়, ‘তোমার ছেলের অসুখ ভাল করতে আমার সঙ্গে একটি ঘরে তোমাদের বংশের যুবতী কোনো মেয়েকে দিতে হবে।’ ফকিরের কথায় রাজি হন বাবা।
কাদের আরও জানান, ‘ফকিরের কথা মতো বাবা বোন মলিকে একটি গামছা পড়িয়ে আমাদের ঘরের একটি কক্ষে ফকিরের কাছে পাঠান। ফকির শর্ত দেয় আমার চিকিৎসা ও ঝাঁড়-ফুকের সময় কেউ অন্য ঘর থেকে বের হতে পারবে না। এমনকি সে যে কক্ষে থাকবে সে কক্ষে ভেতরে কেউ উঁকিও দিতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘ফকিরের শর্ত মেনে, সবাই এক ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেই। রাত আনুমানিক ৭টার দিকে মলিকে নিয়ে ভণ্ড কবিরাজ পাশের অন্য একটি ঘরে গাছের শেকড়সহ কিছু কবিরাজি উপকরণ নিয়ে প্রবেশ করে।’
কাদির বলেন, ‘টানা ছয় ঘণ্টা ঘরের ভেতর অবস্থানের পর ফকির চলে যায়। কবিরাজ চলে যাওয়ার পর তার বোন মলি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কথা-বার্তা ও খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন। শুধু দু’চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে। তবে ফকিরের পৈশাচিশ নিপীড়নের বিষয়টি কারো কাছে বলেনি তিনি।’
ঘটনার এক দিন পরে রোববার দিবাগত গভীর রাতে নিজ শয়ন কক্ষের আড়ার সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন মলি।
শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, ভণ্ড ফকির আওলাদ হোসেন পাগাইল্যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মলির বাবা আবদুল গফুর বাদী হয়ে শিবালয় থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানিকগঞ্জে হুমকি দিয়ে মন্দিরের মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ
প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে কালী মন্দিরের জায়গার মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণেরবিস্তারিত পড়ুন
মানিকগঞ্জে গলায় ফাঁস দিয়ে কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যা
ফারিয়া আলম কাজল নামের এক কলেজ ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। নিহতবিস্তারিত পড়ুন
মানিকগঞ্জে কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে সাবরিনা আক্তার বন্যা (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীর লাশবিস্তারিত পড়ুন