মনে পড়ে ভুলে যাওয়া সেই বাংলাদেশ
আজকের দিনে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই সিরিজটিতে। ২০১৪ সালের আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে সিরিজের সব ম্যাচই হেরেছিল বাংলাদেশ। এর আগেও বাংলাদেশের জন্য সিরিজ হার অথবা হোয়াইটওয়াশ হওয়া পরিচিত ছিলো। এরপর ধারাবাহিক সাফল্যে ‘ধবলধোলাই’কে অতীতের ব্যাপারই মনে করা শুরু করেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু পুরোনো লজ্জাটা নতুন করে ফিরে এল প্রায় আড়াই বছর পর।
গত আড়াই বছরে বাংলাদেশ সব কটি সিরিজই খেলেছে নিজেদের মাঠে। সাফল্যের সে সব গল্প হয়তো এখন অপ্রাসঙ্গিকই মনে হবে। মানুষ থাকতে চায় বর্তমানে। কিন্তু সেই বর্তমানটাই যে বিবর্ণ হয়ে উঠল নিউজিল্যান্ডে।
নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনটা কঠিনই ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য। কঠিনর কন্ডিশনে স্বাগতিক দলের আধিপত্যটা অনুমিতই ছিল। কিন্তু তাই বলে মাশরাফির দলের এমন অসহায় আত্মসমর্পণ নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত ছিল না ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে! অসহায়ভাবে হার মেনে নেওয়া, লড়াকু মনোভাবের অনুপস্থিতি, নিস্তরঙ্গ শরীরী ভাষা—বাংলাদেশ দল যে এসব অতীতের বিষয় বানিয়ে ফেলেছে, ক্রিকেটপ্রেমীদের ভাবনাটা তো ছিল এমনই। নিউজিল্যান্ডে গত আড়াই বছরে ‘বদলে যাওয়া বাংলাদেশ’ ছিল একেবারেই অনুপস্থিত।
কিউইদের মাটিতে কেন হঠাৎ কঙ্কালটা বেরিয়ে পড়ল? মাশরাফি বিন মুর্তজা ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘পাঁচ বছর পর আমরা এখানে খেলছি, মানিয়ে নেওয়া (কন্ডিশনের সঙ্গে) কঠিন।’ অধিনায়কের কথা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সিরিজের আগে সিডনিতে প্রস্তুতি ক্যাম্প, আগেভাগেই নিউজিল্যান্ডে পা রাখার পরেও কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারাটা নিশ্চয়ই বড় ব্যর্থতা।
কন্ডিশনের জুজু ওয়ানডে সিরিজে ছিলও না। ক্রাইস্টচার্চের পর নেলসনেও উইকেট ছিল সহজ, ব্যাটিংবান্ধব। অধিনায়ক মাশরাফি নিজেই বলেছেন, ‘দেশের উইকেটের মতোই।’ যদি উইকেট ভীতি–জাগানিয়া না-ই হয়, তবে নিজেদের ‘প্রিয় সংস্করণে’ কেন বাংলাদেশের এই ভরাডুবি?
দেশের মাটিতে ‘বাঘ’ হয়ে ওঠা টাইগারদের জয়রথ থেমেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। স্রেফ ব্যাটিং ব্যর্থতায় ইংল্যান্ডের কাছে সিরিজ খুইয়েছিল। এরপর টেস্ট জয়ের পর নতুন করে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাওয়া টাইগাররা আসে নিউজিল্যান্ড সফরে। কিন্তু কোথায় যেন হারিয়ে গেল ‘আত্মবিশ্বাস’ শব্দটি! অবিশ্বাস্য ব্যাটিং-বোলিং ব্যর্থতায় ওয়ানডে সিরিজে কিউইদের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ! তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচটি ৮ উইকেটে সহজে জিতে নিল নিউজিল্যান্ড।
নেলসনের সেক্সটন ওভালের পিচ এমনিতেই ব্যাটিং স্বর্গ। সেটা খুব নিষ্ঠুরভাবে প্রমাণ করলেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এবং নেইল ব্রুম। দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পর আজও সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৩ রান দূরে থেকে আউট হলেন নেইল ব্রুম। অবশ্য রানের খাতা খোলার আগেই ইমরুল কায়েসের সৌজন্যে আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান তিনি। সেঞ্চুরি করতে পারেননি অধিনায়ক উইলিয়ামসনও। তিনি ৯৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন উইলিয়ামসনসই।
টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে যথারীতি ভালো শুরু করে টাইগাররা। আজ হারলেই হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেতে হবে। তাই যে করেই হোক হার এড়ানোর লক্ষ্য টাইগারদের। দুই ওপেনার তামিম-ইমরুল মিলে বড় উদ্বোধনী জুটি গড়লেন। কিন্তু কিছু পরই দেখা গেল দ্বিতীয় ম্যাচের পুনরাবৃত্তি! ১ উইকেটে ১০২ রান থেকে শেষ পর্যন্ত ২৩৬ রান করতে সক্ষম হলো সফরকারীরা! ৭৭ রানের মধ্যেই নেই ৭ উইকেট!
ইমরুল কায়েসকে দিয়েই দলীয় ১২৫ রানে শুরু হলো উইকেট পতন। স্যান্টনারের বলে নেইল ব্রুমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ৬২ বলে ৫ বাউন্ডারি এবং ১ ওভার বাউন্ডারিতে ৪৪ রান করা ইমরুল। এরপর সাব্বির রহমানকে সঙ্গী করে জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন তামিম। কিন্তু একে একে বিদায় নিলেন সাব্বির, মাহমুদ উল্লাহ। দলের এমন অবস্থায় দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হলেন তামিম। ৮৮ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫৯ রান করে নিশামের বল নেইল ব্রুমের হাতে ধরা পড়লেন এই ড্যাশিং ওপেনার। এককথায় ধস নামল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে!
১০২ রানের উদ্বোধনী জুটি থেকে হঠাৎ করেই দেখা গেল ৭ উইকেটে ১৭৯! স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাব্বির (১৯), সাকিব (১৮), মোসাদ্দেক (১১) রান করলেন। আবারও ব্যর্থ হলেন মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ (৩)। আগের ম্যাচে ২ রান করা অভিষিক্ত তানভীর হায়দার আবারও সুযোগ পেয়েছেন একাদশে। কিন্তু করতে পারলেন মাত্র ৩ রান! রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আউট হলেন অধিনায়ক মাশরাফি (১৪)। কিন্তু ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান নিজের কাঁধে দায়িত্বটা নিলেন। দারুণ চাপের সময় খেললেন ৪৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস!
গত ম্যাচে এই অভিষিক্ত তরুণের কল্যাণে শেষ পর্যন্ত ২৩৬ রান তুলতে সক্ষম হয় সফরকারীরা। ম্যাট হেনরির বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন নুরুল হাসান। ৩৯ বলের ইনিংসটিতে তিনি ৩টি চার এবং ১টি ছক্কা মারেন তিনি।
বাংলাদেশের দেওয়া ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের জাদুতে দলীয় ১০ রানেই প্রথম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ৪ রান করে মুস্তাফিজের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন টিম ল্যাথাম। নিজের তৃতীয় ওভারে নেইল ব্রুমের উইকেট নিতে পারতেন মুস্তাফিজ। কিন্তু স্লিপে দেওয়া সহজ ক্যাচটি তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হলেন ইমরুল কায়েস।
এরপর যেন বোলিং করতে ভুলে গেলেন বাংলাদেশের বোলাররা। অপর ওপেনার মার্টিন গাপটিল রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরে যাওয়ার পর দুর্দান্ত জুটি গড়েন নেইল ব্রুম এবং অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। দুজনে মিলে ১৭৯ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। ব্যক্তিগত ৯৭ রানে মুস্তাফিজুর রহমানের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন নেইল ব্রুম। মাশরাফির হাতে ধরা পড়ার আগে ৯৭ বলের ইনিংসটিতে ১২টি চার এবং ১টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন ব্রুম।
এরপর জেমস নিশামকে নিয়ে সহজেই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ১১৬ বলে ৯ চার এবং ১ ছক্কায় ৯৫ রানে অপরাজিত থাকেন উইলিয়ামসন। আর তাকে শতরান করতে না দেওয়া নিশাম ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কৃপণ বোলিং করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। নেলসনের ব্যাটিং স্বর্গে ৯.২ ওভার বল করে ২ মেডেন সহ দিয়েছেন মাত্র ৩২ রান। ২ উইকেট নিয়ে একমাত্র সফল বোলারও তিনি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বাংলাদেশ এআই অলিম্পিয়াড এর জাতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত
আগামী বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কৃত্রিমবিস্তারিত পড়ুন
৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন সাকিব
তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৪০০ উইকেটের মাইলফলকবিস্তারিত পড়ুন
নিরাপদে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালো বাংলাদেশ দল
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টাইগারদেরবিস্তারিত পড়ুন