মহাজোটেও নির্বাচনী তোড়জোড়
শুধু আওয়ামী লীগ নয়, ক্ষমতাসীন দলটির নেতৃত্বাধীন মহাজোটেও আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের শক্ত প্রার্থীকে টপকিয়ে শরিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জানা গেছে, ২০১৪ সালে বিনাভোটের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটের ১৪টি দলের মধ্যে জোট প্রধান আওয়ামী লীগসহ মাত্র পাঁচটি দলে এমপি-মন্ত্রী ভাগাভাগি হয়েছে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে একজন সংরক্ষিত মহিলা এমপি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। শক্ত প্রার্থী থাকলেও অন্য শরিক দলগুলো জোট প্রধান আওয়ামী লীগের সাথে দর কষাকষি করেও সরকারে জায়গা হয়নি। গতবার মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও আসন ভাগাভাগিতে এবার কোনোভাবেই ছাড় দিতে চাচ্ছে না শরিক দলগুলো। ফলে আগেভাগেই নির্বাচনের জন্য জোরাল প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
ক্ষমতাসীন জোটের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রস্তুতি হয় দুইভাবে। প্রথমত জোটগতভাবে, দ্বিতীয় দলগতভাবে। জোটগতভাবে এখনো নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি শুরু হয়নি। আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবেÑ এটা মাথায় রেখে দলগতভাবে প্রার্থীরা এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। যখন আসন ভাগাভাগি হবে তখন থেকে জোটগতভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে। এ ছাড়া আসন ভাগাভাগিতে আশাতীত সমন্বয় না হলে দলগতভাবেও কিছু প্রার্থী মাঠে সক্রিয় থাকবেন।
জানা গেছে, জোটের অন্যতম শরিক জাসদ। বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এ ছাড়াও পাঁচজন এমপি এবং একজন সংরক্ষিত মহিলা এমপি রয়েছে এ দলটির। সম্প্রতি দলে বনিবনা না হওয়ায় সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়াসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী জাসদ থেকে বিভক্ত হয়ে যান। বর্তমানে জাসদ দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ায় দুই অংশই পৃথকভাবে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর অংশে বর্তমানে রয়েছেন তিনজন এমপি। এবার তাদের প্রায় ৬০ জন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে এর মধ্যে শক্ত প্রার্থী রয়েছেন ২০ জনের ওপরে। এ প্রসঙ্গে জাসদের সহদফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে হারিয়ে আমাদের দুইজন এমপি নির্বাচিত হন।
গত নির্বাচনের ভুলগুলো কাটিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। ফলে আগামী নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই দলীয়ভাবে জোরাল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
মহাজোটের আরেক শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি। ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী হন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ ছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা এমপিসহ পাঁচজন এমপি সংসদে জায়গা পেয়েছে এ দলটির। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক এ দলটি। এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলের প্রায় ৪০ জন নেতা সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, জোটগতভাবে এখনো প্রার্থী ঠিক না হওয়ায় দলগতভাবে প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। মহাজোটের আরেক শরিক সাম্যবাদী দল।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সরকার গঠন করলে শিল্পমন্ত্রী হন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া। তবে গত বিনাভোটের নির্বাচনে বর্তমান সরকারে তার দলের কোনো প্রতিনিধিত্ব না থাকলেও আগামী নির্বাচনের জন্য দলের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দিলীপ বড়–য়া।
তিনি জানান, চার-পাঁচজন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী আছেন। আগামী নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আরেক শরিক গণতন্ত্রী পার্টি। সাম্যবাদী দলের মতো একই অবস্থা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১০ জন এমপি প্রার্থীর তালিকা দিলেও লাভ হয়নি। জোট প্রধান শেখ হাসিনার মন গলাতে পারেননি তারা। এবারো ওই ১০ জন নেতা সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তবে এবার নিরাশ হবেন না বলে জানিয়েছেন গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা: শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাইনি ঠিকই। তবে আমরা আশা করছি আগামী নির্বাচনে জোটপ্রধান আমাদের মূল্যায়ন করবেন। আরেক শরিক কমিউনিস্ট কেন্দ্র। তাদের দুইজন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক ডা: ওয়াজেদুল ইসলাম। ক্ষমতাসীন জোটের আরেক শরিক গণ আজাদী লীগ।
পুরানা পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে এ দলটির। বর্তমান সরকারে কোনো প্রতিনিধিত্ব না থাকলেও আগামীতে প্রত্যাশা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এস কে সিকদার। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে সাতজন এমপি প্রার্থীর তালিকা দিয়েছিলাম। কিন্তু একজনকেও গ্রহণ করা হয়নি। এবার বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী এলাকায় গিয়ে জোরালভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা, বরিশাল ও বাগেরহাটে তিনজন শক্ত প্রার্থী আছেন। মহাজোটের অন্যতম শরিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ। বর্তমান সরকারে একজন সংরক্ষিত মহিলা এমপি রয়েছেন এ দলটির।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জোটগতভাবে পাঁচজন এমপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কেউই নির্বাচিত হননি। দলগতভাবে নির্বাচনী মাঠে ছিলেন ১৫ জন। এবার ১০ জনের মতো সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। গতবার ফসকে গেলেও আগামী নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে চান বলে জানান দলটির সহসাধারণ সম্পাদক মো: ইসমাইল হোসেন।
তিনি বলেন, জোটগতভাবে এখনো কোনো কিছু নির্ধারণ করা হয়নি। তাই আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের দলীয় প্রার্থীরা ব্যক্তিগতভাবে জোরাল প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। মহাজোটের আরেক শরিক গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টিরও বর্তমান সরকারে কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। নিবন্ধনহীন এ দলটি জোটগতভাবে গত নির্বাচনে দুইজন এমপি প্রার্থীর তালিকা দিলেও কোনো সাড়া পায়নি।
এবার চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও মানিকগঞ্জে তিনজন শক্ত প্রার্থী রয়েছেন বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক মো: জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের দলটি যেহেতু নিবন্ধিত নয়, সেহেতু জোটগতভাবে নির্বাচনে প্রার্থী না দিলে কিছু করার থাকে না। আমাদের শক্ত প্রার্থী থাকলেও কোনো কাজ হয়নি। তবে আগামী নির্বাচনের জন্য আমরা দলের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। নয়া দিগন্ত
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন