মাঠের সাকিবকে পছন্দ মাশরাফির
বাংলাদেশ দলে অনেক তারকা-মহা তারকার আবির্ভাব ইতোমধ্যে ঘটে গেছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও বড় বড় তারকারও জন্ম হবে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় পারফরমার কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ক্রিকেটারটি খুঁজে বের করতে গেলে সবার আগে সাকিব আল হাসানের নামই বলবে সবাই।
এক সঙ্গে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই আইসিসির শীর্ষ অলরাউন্ডার ছিলেন সাকিব আল হাসান। দীর্ঘদিন ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডার। এখনও তার ধারে কাছে কেউ নেই। টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে নিজের সিংহাসনটি হারিয়েছেন স্রেফ মাঠে খেলা না থাকার কারণে। পর্যাপ্ত খেলা থাকলে, এই দুই ফরম্যাট থেকেও তাকে সরানো ছিল কঠিন এক কাজ।
২০০৬ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে ওয়ানডে অভিষেক সাকিব আল হাসানের। এর প্রায় ৯ মাস পর অভিষেক হলো টেস্টে। চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে। অভিষেক ওয়ানডেতে ১ উইকেটের পাশাপাশি ৩০ রান করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশও জিতেছিল ওই ম্যাচে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
অভিষেক টেস্টে অবশ্য সেভাবে নজর কাড়তে পারেননি। ড্র হওয়া ম্যাচটির প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে পেরেছিলেন, রান করেছেন ২৭। বল হাতে কোন উইকেট পাননি। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং এবং বোলিং কোনটাই করতে পারেননি। যদিও ম্যাচটা ড্র হয়েছিল।
অভিষেক ভালো কোন বার্তা না দিলেও দারুণ একাগ্রতা, কঠিন পরিশ্রম আর কঠোর অধ্যাবসায়, সাকিবকে খুব দ্রুতই সাফল্য এনে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, দ্রুতই দলের মধ্যে নেতৃত্বসূলভ একটা অবস্থান তৈরী করে নিয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে মাশরাফির ডেপুটি হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিলেন সাকিব।
সিরিজের প্রথম টেস্টেই ইনজুরিতে পড়ে মাঠের বাইরে মাশরাফি। শুধু বাইরেই নয়, ক্যারিয়ারের সর্বশেষ টেস্টই খেলে ফেললেন তিনি ওইটি। মাশরাফির ডেপুটি হিসেবে যাওয়া সাকিবের ঘাড়েই বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব। সাকিবের নেতৃত্বই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রথমবারেরমত বিদেশের মাটি থেকে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয় করে দেশে ফিরে আসে। শুধু নেতৃত্বই নয়, ব্যাটে-বলে সমান পারফরমার ছিলেন সাকিব।
মাশরাফির ইনজুরির কারণে মাঠেই আরও একবার নেতৃত্বভার নিতে হয়েছিল সাকিবকে। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজের সময়। প্রথম ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়েন মাশরাফি। ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব বর্তায় সাকিবের ঘাড়ে। নেতৃত্ব পেয়েই সাকিব আমুল বদলে ফেলেন মাঠের পরিবেশ। ঘরের মাঠেই প্রথম বড় কোন দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়। শুধু তাই নয়, নিউজিল্যান্ডকে ৪-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশও করেছিল সেবার বাংলাদেশ।
এরপর সাকিবই বাংলাদেশ দলের নিয়মিত অধিনায়ক। অন্যদিকে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের আগেই ইনজুরি থেকে সেরে ওঠার অপেক্ষায় মাশরাফি। বিশ্বকাপে নিশ্চিতভাবেই সাকিব অধিনায়ক। দল ঘোষণার আগেই সুস্থ হয়ে উঠলেন নগড়াইল এক্সপ্রেস; কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে মাশরাফিকে বাদ দিয়েই ঘোষণা করা হলো, বিশ্বকাপের স্কোয়াড।
সেদিন বিসিবি অ্যাকাডেমী মাঠে অঝোরে কেঁদেছিলেন মাশরাফি। তার চোখের পানিতে ভেসে গিয়েছিল পুরো বাংলাদেশে ভক্তদের হৃদয়। অনেকেই মাশরাফির বাদ পড়ার পেছনে সাকিব আর কোচ জেমি সিডন্সের হাত আছে বলে অভিযোগ করেছিলেন।
কিন্তু মাশরাফি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোন অবস্থাতেই এ জন্য সাকিবকে দায়ী করেননি। নিজে সাকিবের নেতৃত্বে খেলেছেন। সাকিবও খেলেছেন তার নেতৃত্বে। একে অপরের কাঁধে হাত রেখে বাংলাদেশকে এনে দিচ্ছেন আজকের সাফল্য। বাংলাদেশ জাতীয় দলে যে ক’জন ক্রিকেটার এখনও অটোমেটিক চয়েজ, তার মধ্যে মাশরাফি আর সাকিব অন্যতম।
অসাধারণ পারফরম্যান্স, দুরদর্শী, বিচক্ষণ এবং দুর্দান্ত ক্রিকেট মস্তিষ্কের কারণে সাকিবকে বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। সবচেয়ে বড় কথা, যে কোনো পরিস্থিতিতে ব্যাট কিংবা বল হাতে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য একজন ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিনিয়তই ভূমিকা পালন করছেন তিনি। বল হাতে না পারলে ব্যাট হাতে, ব্যাট হাতে না পারলে বল হাতে তিনি পারফর্ম করে যাচ্ছেন।
সাকিব আল হাসানকে কে না পছন্দ করবেন? মাশরাফির কাছে তাই মাঠের বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ সাকিবকে অনেক বেশি পছন্দ। নিজের ক্যারিয়ারের ১৫তম বর্ষপূর্তিতে জাগো নিউজকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাকিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তার চোখে সেরা অধিনায়ক কে?
নাঈমুর রহমান দুর্জয় থেকে শুরু করে অনেকের কথাই বলেছেন। সর্বশেষ তার মুখ থেকে উচ্চারিত হলো, অধিনায়ক হিসেবে সাকিবও অনেক ভালো। বিশেষ করে ‘অন দ্য ফিল্ড’ গুড ক্যাপ্টেন সে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন