মানুষ নয়, সবচেয়ে বেশি খুন করা স্তন্যপায়ী প্রাণী, মিরক্যাট!
সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় প্রতিদিন একে অপরের দ্বারা মানুষ খুন হচ্ছে। আপনি যদি ভেবে থাকেন যে মানুষই হচ্ছে বিশের সবচেয়ে খুনি স্তন্যপায়ী প্রাণী তবে আপনি মস্ত বড় ভুল করলেন।
স্পেনের হোসে মারিয়া গোমেজের নেতৃত্বে একদল গবেষণাকারী একই প্রজাতির অন্য কোন সদেস্যের দ্বারা সৃষ্ট মৃত্যু নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন যে মিরক্যাটই হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে খুনি স্তন্যপায়ী প্রাণী, যারা একে অপরকে খুব বেশি পরিমাণে হত্যা করে। যার পরিমাণ ১৯.৪ শতাংশ। এবং ভুক্তভোগীর বেশির ভাগই শিশু মিরক্যাট।
নেচার গবেষণারর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, একে অপরকে হত্যাকারী স্তন্যপায়ীদের মধ্যে ২য় স্থানে রয়েছে Schmidt’s guenon।তারা ১৮.২ শতাংশ হারে একে অপরকে হত্যা করে। ১৬.৭ শতাংশ হার খুনের পরিমাণ নিয়ে ৩য় অবস্থানে আছে রেড ফ্রন্টেট লেমুর। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের সামুদ্রিক সিংহ ১৫.৩ শতাংশ, দীর্ঘ লেজ বিশিষ্ট কাঠবিড়ালি জাতীয় প্রাণী ১৪.৫ শতাংশ, ধুসর নেকড়ে ১২.৮ শতাংশ হারে একে অন্যকে খুন করে। এদের থেকে অনেক শতাংশ হারে পিছনে রয়েছে মানুষের নাম।
চলুন কিছু তথ্য জেনে আসা যাক এই খুনি অথচ সুন্দর স্তন্যপায়ী প্রাণীটি সম্পর্কে –
মিরক্যাট হল বেজি জাতীয় স্তন্যপায়ী প্রানী। সাধারনত আফ্রিকা মহাদেশের বোস্তোয়ানার কালাহারি মরুভূমি, নামিবিয়ার নামিবিয়া মরুভূমি, দক্ষিণ এঙ্গোলা এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় এদের দেখতে পাওয়া যায়। মিরক্যাটরা সচরাচর দলবদ্ধ হয়ে থাকতে পছন্দ করে। এদের একটি দলে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টি মিরক্যাট থাকতে পারে। কৃত্তিম পরিবেশে এরা প্রায় ১২-১৪ বছর বাঁচলেও বন্য পরিবেশে এর অর্ধেক বাঁচে।
বন্য পরিবেশে মিরক্যাটরা গর্তে বসবাস করে। দেখতে খুব শান্ত ওরা। শরীর ভর্তি ঘন লোম। ধূসর রোমের ওপর হালকা বাদামি ডোরা। মুখটি বেজির মতোই ছুঁচালো। চোখ দুটিতে কালো ছোপ রয়েছে। লেজসহ ওদের গড় দৈর্ঘ্য ২০ ইঞ্চির (৫০ সেন্টিমিটার) মতো।
মাটির নিচে থাকার জন্য পায়ের ধারালো নখর দিয়ে গর্ত খোঁড়ে মিরক্যাট। মরু এলাকার প্রখর তাপ থেকে রক্ষা পেতে এই ডেরা তুলনাহীন। একেকটি গর্ত ১৬ ফুট (৫ মিটার) পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। গর্ত না বলে বরং এগুলোকে খুদে সুড়ঙ্গ বলাই ভালো। একেকটি মিরক্যাট দল সাধারণত এ রকম পাঁচটি সুড়ঙ্গ তৈরি করে থাকে। একটি সুড়ঙ্গ থেকে আরেকটি সুড়ঙ্গে যেতে বেশ কয়েকটি প্রবেশমুখ থাকে। সুড়ঙ্গগুলো আবার ছোট ছোট কামরায় ভাগ করা। এসব কামরার কোনোটিতে মিরক্যাটের ছানা, কোনোটিতে খাবার, আবার কোনোটিতে বড়রা থাকে।
মিরক্যাটরা শুধু দিনের বেলায়ই ডেরা থেকে বের হয়। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দলবেঁধে বেরিয়ে খাবার খোঁজে ওরা। সাধারণত পাঁচ থেকে আট ঘণ্টা বাইরে থাকে ওরা।
মিরক্যাটরা মূলত পতঙ্গোভোজী তবে সাপ, গিরগিটি বিছে, মাকড়সা, বিভিন্ন প্রানীর ডিম এবং গাছপালাও এদের খাদ্যতালিকায় থাকে। কিছু বিষাক্ত প্রানীর বিষ যেমন কালাহারি মরুভূমির বিষাক্ত কাকড়া বিছার বিষ এদের শরীরে কাজ করে না। মানুষের মত মিরক্যাটদের শরীরে মেদ সঞ্চয় করার কোন ব্যাবস্থা না থাকায় এরা শক্তি জমিয়ে রাখতে পারে না।
তাই প্রতিদিনই এদের খাদ্য সংগ্রহের জন্য বের হতে হয়। মিরক্যাটরা যখন খাবার সংগ্রহের জন্য বের হয় তখন দলের একজনকে পাহারায় রাখে যাতে করে শিকারী প্রানীর আগমনের আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া যায়। খাদ্য সংগ্রহের জন্য এরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এদের উচ্চতারও বেশি গভীর মাটি খুঁড়তে পারে।
ইগল ও বাজের মতো শিকারি পাখি এবং শেয়ালের মতো চতুর প্রাণী ওদের জাতশত্রু। এসব শত্রুর হামলা থেকে বাঁচতে পাহারা দলের মিরক্যাটরা উঁচু কোনো ঢিবির ওপর একদম খাঁড়া হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ যেভাবে দাঁড়ায়, পাহারাদারদের দাঁড়ানোর ভঙ্গিটাও তেমনই। একেক পাহারাদার একেক দিকে নজর রাখে। ওদের দৃষ্টিশক্তি খুব প্রখর। এক হাজার ফুট (৩০০ মিটার) দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখে ওরা।
শত্রুর দেখা পাওয়া মাত্র তীক্ষ শব্দে বিপত্সংকেত দেয় পাহারাদারেরা। অমনই খাবার খুঁজতে থাকা মিরক্যাটরা নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে গা ঢাকা দেয়। এ জন্য মূল ডেরার আশপাশে বেশ কিছু গর্ত করে থাকে মিরক্যাট, যা ‘বোল্ট-হোল’ নামে পরিচিত। শত্রুর একদম সামনে পড়ে গেলে মরণপণ লড়তে কসুর করে না ওরা। তখন এই শান্ত প্রাণীটি দাঁত খিঁচিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।
মিরক্যাটরা এক বছর বয়স থেকেই যৌন প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে এবং এক বছরেই তিন থেকে পাঁচটি বাচ্চা দিতে সক্ষম। মোটামুটি তিন সপ্তাহ বয়স হলেই এরা বাচ্চাদের গর্ত থেকে বের করে এবং দলের বাকি সবাই দাঁড়িয়ে থেকে এদের পাহারা দেয়। এক মাস বয়স হওয়ার আগে বাচ্চা মিরক্যাটরা খাবারের সন্ধানে বের হয় না। এক মাস পর বয়োজ্যেষ্ঠ মিরক্যাটরা বাচ্চাদের শিকার করা শেখায়।
মিরক্যাটরা অনেকটা শান্ত প্রকৃতির হলেও এরাই যে বিশ্বে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিজ প্রজাতিকে হত্যা করে তা কল্পনাই করা যায় না।
এই পৃথিবীর অনেক কিছুই বিচিত্র। একদম কল্পনার বাহিরে এই বিচিত্রতা। মিরক্যাটও তেমনি এক বিচিত্র প্রাণী। যারা দলবদ্ধ হয়ে সব কাজ করে, আবার নিজেরাই নিজেদের হত্যা করে জানিয়ে দেয় তারা কতটা অশান্ত থে পারে।
সুত্রঃ ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন