‘মায়ের বিয়ের আশ্বাস, ভাইয়ের বিস্কুটের লোভ’- অবশেষে গাছ থেকে নামলো সুভাষ
রাত থেকে গাছের মগডালে ঠায় বসে রয়েছে ছেলে। আর নীচ হাঁক পাড়ছেন মা— ওরে সুভাষ ফিরে আয়। কিন্তু যাঁকে ডাকা, তাঁর কোনও ভাবান্তর নেই। সোমবার রাত ১১টায় বিষ্ণুপুরের বিশ্বাস পাড়ার বছর আঠাশের যুবক সুভাষ মণ্ডল ঘর থেকে ঊর্ধ্বশ্বাসে বেরিয়ে পাশের আশ্রমের একটি নিমগাছে তরতরিয়ে উঠে পড়েন। সারা রাত তো বটেই, মঙ্গলবার বেলাতেও তাঁকে নামাতে রীতিমতো কালঘাম ছোটার অবস্থা হয় সবার। খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে বিষ্ণুপুরের বিশ্বাস পাড়ায় ভোলে ভাণ্ডারী আশ্রমে বহু লোক জড়ো হয়ে ছিলেন। সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে সুভাষের মা মালতি মণ্ডল ছেলেকে বাবা-বাছা করে নামানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন চিৎকার করে। দুই দাদা বিশ্বনাথ মণ্ডল, সাগর মণ্ডলও কম চেষ্টা করছিলেন না। কিন্তু সুভাষের সে সবে কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। মাঝে মধ্যেই গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে পা মেলে বসছেন। ডাল নড়ে উঠতেই নীচ থেকে জনতার চিৎকার উঠছে—এই রে, গেল বোঝহয়।
তাঁকে নামাতে প্রলোভনও কম দেওয়া হয়নি। মা হাঁকলেন, সুভাষ এ বার তোর বিয়ে দেব। নেমে আয় বাবা। বন্ধুরা নেশার জিনিসের প্রলোভন দিতে থাকল। কিন্তু কিছুতেই মন গলানো যায় না সুভাষের। কৌতূহল চাপতে না পেরে বকুলতলা মোড়ে দাড়ি কাটা ছেড়ে একগাল সাবান মাখা মুখে চলে এসেছিলেন মনোরঞ্জন সেন, শাঁখারিবাজারের দোকান ছেড়ে সৌরভ দে হাজির মেয়েকে নিয়ে। পুজোপাঠ ছেড়ে ধুতি পরে ঘটি হাতে পুরোহিত সঞ্জীব চক্রবর্তীও হাজির।
সবার মুখেই একটাই প্রশ্ন, ছেলেটা কী চায়? শোলের বীরুর মতো বাসন্তীকে বিয়ে করতে চেয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছে নাকি? পড়শিরা তাঁদের বোঝাচ্ছিলেন, ও সব হলে তো দেখা যেত। কিন্তু সুভাষ যে মানসিকভাবে অসুস্থ। কেন যে গাছে চড়ল ওর বাড়ির লোকেরাই জানে না। সুভাষের দুই দাদা বলেন, বছরখানেক ধরে ভাইয়ের মানসিক সমস্যা চলছে। মাস চারেক আগে বাঁকুড়া মেডিক্যালেও চিকিৎসা করিয়ে এনেছি। কিন্তু কখনই এমন কাণ্ড করেনি। তাঁরা জানান, সোমবার রাতে তাঁরা যখন শোওয়ার তোড়জোড় করছিলেন, সেই সময় সুভাষ হঠাৎ চিৎকার করতে করতে দরজা খুলে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। দাদারা পিছু নিলে মেরে ফেলবে বলে সুভাষ তাঁদের হুমকিও নাকি দিয়েছিলেন।
আশ্রমের মালিক বাউল বাগদি বলেন, ছেলেটা সারা রাত গাছে। আর আমরাও সারা রাত নীচে। হঠাৎ যদি ছেলেটা ঘুমিয়ে পড়ে গাছ থেকে পড়ে যায়, সেই আতঙ্কে কাঁটা হয়ে ছিলাম। পড়শি তাপু বিশ্বাস, শম্ভু দে, প্রশান্ত লায়েকরা বলেন, সারা রাত না খেয়ে রয়েছে ছেলেটা। একে খিদে তার উপরে এই চড়া রোদ, ও মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তো বিপদ বেড়ে যাবে।
বিষ্ণুপুরের উপপুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায় ও পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এসে ততক্ষণে দমকল কর্মীদের ডেকে এনেছেন। দমকল কর্মীরা পাশের একটি বাড়ির ছাদে উঠে সুভাষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ফল হয় উল্টো। সুভাষ গাছের আরও উপরে উঠে যান। বেগতিক দেখে দমকল কর্মীরাও সুভাষকে বোঝানোর চেষ্টা চালান। কিন্তু চিঁড়ে ভেজেনি। জনতা বলতে থাকেন, গাছের নীচে জাল পাতা দরকার। সে সবের অবশ্য প্রয়োজন হয়নি। বেলা প্রায় ১২টার দিকে ছোট ভাই চায়ের দোকানদার পচু মণ্ডল এক প্যাকেট বিস্কুট নিয়ে গাছে উঠে পড়েন। ভাইয়ের হাত থেকে বিস্কুট চিবোতে চিবোতে দুই জনের কী যেন কথা হয়। তারপরেই নেমে আসেন সুভাষ। শেষমেশে সুভাষ ঘরে ফেরায় হাঁফ ছাড়লেন সবাই। আনন্দবাজার পত্রিকা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হবে কবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা
পৃথিবীতে কোনো প্রাণী বা প্রজাতিই স্থায়ী নয়। একদিন না একদিনবিস্তারিত পড়ুন
এটিএম থেকে টাকার পরিবর্তে কী বের হচ্ছে?
এটিএম বুথের মেশিন থেকে টাকাই তো বের হওয়ার কথা। কিন্তুবিস্তারিত পড়ুন
৩৩ বছরে ছুটি নিয়েছেন মাত্র একদিন
১৯৪০-এ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সিংয়ে হাতেখড়ি। দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, ২৪ বার প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন